আজকাল ডেস্ক।। করোনাভাইরাসের প্রকোপে প্রায় আড়াই মাস বন্ধ ছিল বিনোদনজগতের সব কার্যক্রম। টেলিভিশন নাটকের সংগঠনগুলো নাটকের শুটিংয়ের অনুমতি দেওয়ার পর ১ জুন থেকে সিনেমার শুটিংয়ের অনুমতি দিয়েছে চলচ্চিত্রের সমিতিগুলো। কিন্তু বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) এখনো সেভাবে জমে ওঠেনি। দিনের পর দিন এফডিসির কোনো কোনো ফ্লোরের বাতিও জ্বলেনি। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় নতুন করে লোকসানের মুখে পড়েছে বিএফডিসি।
সিনেমা, বিজ্ঞাপন, টেলিভিশন টক শো বা নাটকের শুটিংয়ের জন্য ফ্লোর ও যন্ত্র ভাড়া দেয় এফডিসি। করোনার কারণে গত আড়াই মাস সেসব কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এতে প্রতিষ্ঠানটির মেকআপ রুমসহ আটটি শুটিং ফ্লোর, অত্যাধুনিক কয়েকটি ক্যামেরা, কালার গ্রেডিং যন্ত্র, লাইট, এডিটিং মেশিন থেকে টাকা আসেনি। এসবের ভাড়া বাবদ প্রায় তিন কোটি টাকা আয় হতো প্রতিষ্ঠানটির।
বেশ কয়েক বছর ধরে সিনেমার ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে। সিনেমা নির্মাণও কমে গেছে। এতে এফডিসির আয়ও গেছে কমে। করোনার কারণে গত আড়াই মাস কাজ বন্ধ থাকায় আয় একেবারেই বন্ধ প্রতিষ্ঠানটির। এভাবে চলতে থাকলে সেই ক্ষতির প্রভাব পড়বে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কমর্চারীর ওপর। এ ছাড়া বন্ধের কারণে ঠিকঠাক পরিচর্যা করা না হলে দামি ক্যামেরা, কালার গ্রেডিং যন্ত্র, এডিটিং প্যানেলে থাকা যন্ত্রগুলো অকেজো হয়ে পড়তে পারে।
বিএফডিসির জিনিসপত্র ভাড়া দেওয়া এবং এসবের দেখভালের দায়িত্বে আছেন অতিরিক্ত পরিচালক (বিপণন) শহিদুল ইসলাম। তিনি জানান, সাধারণ সময়ে এফডিসির শুটিং ফ্লোর, ক্যামেরা, লাইট, এডিটিং প্যানেল, কালার গ্রেডিং মেশিন ভাড়া দিয়ে মাসে আয় হতো ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা। তবে রোজার মাসে এ আয় বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় কোটি টাকায়। তিনি বলেন, রোজার সময় তিন শিফটে ফ্লোর ভাড়া হয়। সে সময় ঈদের সিনেমার শুটিং থাকে। এ ছাড়া ছোট পর্দার ইসলামিক অনুষ্ঠানের শুটিংসহ রোজাকেন্দ্রিক নানা অনুষ্ঠানের শুটিং থাকে। চাহিদা থাকার কারণে লেট নাইট শুটিংও হয়। শিফট বেড়ে যায়, আয়ও বেড়ে যায়। কিন্তু এবার তা হয়নি। সেই হিসেবে গত আড়াই মাসে প্রায় তিন কোটি টাকা হারিয়েছে এফডিসি।
তথ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত হলেও এফডিসি চলে নিজের আয়ের টাকায়। সিনেমা নির্মাণ কমে যাওয়ায় অনেক দিন ধরেই কমে গেছে প্রতিষ্ঠানটির আয়। সম্প্রতি স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুটিংয়ের অনুমতি দেওয়া হলেও এখনো পুরোদমে শুটিং শুরু হয়নি। এফডিসির শুটিং ফ্লোরের দায়িত্বে থাকা হিমাদ্রি বড়ুয়া বলেন, আড়াই মাস হলো ফ্লোরগুলো বন্ধ। সম্প্রতি শুটিংয়ের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু এখনো তেমন কেউ ভাড়া নিতে আসেনি। মাঝেমধ্যে ফ্লোরগুলো খুলে পরিষ্কার করা হচ্ছে।
১ জুন থেকে সিনেমার শুটিংয়ের অনুমতি দিয়েছে চলচ্চিত্রের সমিতিগুলো। বিএফডিসির সহকারী পরিচালক (শিডিউল) সোহরাব হোসেন বলেন, এক সপ্তাহ হলো শুটিংয়ের জন্য সবকিছু খোলা হয়েছে। কিন্ত এখনো সিনেমার কোনো পার্টি আসছে না। মাঝে দুই দিন সিনেমা এডিটিংয়ের জন্য মেশিন ভাড়া হয়েছে।
এদিকে আয় কমে যাওয়ার কারণে সরকারের স্বায়ত্তশাসিত এ প্রতিষ্ঠানের ২৬৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীর মার্চ ও এপ্রিল মাসের বেতন আটকে যায়। পরে তথ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সেই বেতন পরিশোধ করা হয়। অতিরিক্ত পরিচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, তথ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয় ৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছিল। তা দিয়ে প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুই মাসের বেতনসহ ঈদের বোনাস পরিশোধ করা হয়েছে।
Leave a Reply