অতিরিক্ত ভৌতিক বিদ্যুৎ বিল স্থগিতের দাবিতে বরিশালবাসী
বরিশাল জেলায় বেশিরভাগ বাসা বাড়িতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)। কিন্তু গত কয়েকমাস যাবত মিটার রিডিং (পর্যবেক্ষণ) না করে গ্রাহকদের বাড়িতে অতিরিক্ত বিল পাঠানোর অভিযোগ এসেছে তাদের বিরুদ্ধে । আর এমন কর্মকান্ড কে অমানবিক, দায়িত্বজ্ঞানহীন ও বেআইনি বলে আখ্যা দিয়েছে স্থানীয় সচেতন মহল ও বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন। নাগরিকদের সাথে সাথে তাদেরও দাবি দ্রুত এসব বিদ্যুৎ বিল স্থগিত করে মানুষকে স্বস্তিতে থাকার ব্যবস্থা করা হোক। অন্যথায় তীব্র আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন কেউ কেউ।
বরিশালের সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক)’র সভাপতি প্রফেসর শাহ সাজেদা বেগম দ্রুত বিদ্যুৎ বিভাগের কাছ থেকে এ ব্যাপারে স্পষ্ট বক্তব্য ও ভুতুড়ে বিল স্থগিত চান। তিনি বলেন, সরকার থেকে ঘোষণা এসেছিলো করোনাকালীন সময়ে বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের জন্য কোনোরকম বিলম্ব ফি জনগণকে দিতে হবে না। কিন্তু ওজোপাডিকোর বিরুদ্ধে বিলম্ব ফি মওকুফ না করা সহ মিটার রিডিং না করেই বিদ্যুৎ বিল করার অভিযোগ এসেছে। আমরা চাই দ্রুত এসব সমস্যামূলক ঘটনাগুলোর ব্যাপারে তারা স্পষ্ট বক্তব্য দিক।
তিনি আরো জানান, বর্তমান আপদকালীন পরিস্থিতিতে মানুষের ১ টি টাকার মূল্য অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। তাই বাড়তি যে বিলের বোঝা বিদ্যুৎ বিভাগ মানুষের মাথায় চাপিয়ে দিয়েছে তা সমন্বয় করতে এখনি বাড়ি বাড়ি প্রেরণ করা বিদ্যুৎ বিল স্থগিত করা হোক। এছাড়া দ্রুত সময়ের মধ্যে মিটার রিডিং করে পুনরায় বিল করে মানুষকে স্বস্তিতে রাখার উদ্যোগ নিক সরকার।
বিদ্যুৎ বিল নিয়ে এই সংকট থেকে বরিশালবাসীকে মুক্তি দিতে জেলা প্রশাসনকে উদ্যোগী হবার আহবান জানিয়েছেন বরিশাল জেলা আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাড. মহসিন মন্টু। তিনি জানান, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রুখতে জেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ীদের লাগাম টেনে ধরেন। বর্তমান বিদ্যুৎ বিল নিয়ে যে লাগামছাড়া কর্মকা- সংশ্লিষ্টরা করেছেন সেটার সমাধানেও তাদের পদক্ষেপ নেয়া উচিত। তিনি আরো জানান, দেশে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন আইন আছে। সাধারণ নাগরিকদের উচিত এসব আইনী সহায়তা নিয়ে কয়েকমাস ধরে চলা এই বেআইনি অর্থনৈতিক নির্যাতনের হাত থেকে মুক্তির উপায় খোঁজা।
বর্তমান ভুতুড়ে বিল স্থগিত করার আহবান এসেছে জেলার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকেও। বরিশাল জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল-৩ আসনের সাবেক সাংসদ টিপু সুলতান জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ বিড়ম্বনায় পড়ে এমন কিছু কোনো দপ্তরের করা উচিত নয়। সেখানে বিদ্যুৎ বিভাগের বাড়তি বিল প্রেরণের ঘটনা ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ এর মতো বিষয়। দ্রুত এই পরিস্থিতি থেকে জনগণকে মুক্তি দেবার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় গুলোকে সমন্বিত ভাবে উদ্যোগ নেবার অনুরোধ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) বরিশাল জেলা শাখার পক্ষ থেকে বিদ্যুৎ বিভাগের এমন আচরণকে অমানবিক আখ্যা দেয়া হয়েছে। দলটির সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তী জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের উচিত ছিল এই ধরনের বিলগুলো মওকুফ করে দেয়া। সেটা না করে উল্টো গত কয়েকমাস যাবত বরিশালের মানুষদের কাছে আন্দাজে মিটার রিডিং করে অতিরিক্ত বিল প্রেরণ করা হয়েছে। আমরা অতিদ্রুত এই সমস্যার সমাধান চাই। অন্যথায় জনগণের স্বার্থে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দেয়া হবে।
জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব ও সর্বশেষ বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস এই ঘটনার পিছনে সংশ্লিষ্টদের অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণকেই মূল কারণ হিসেবে দেখছেন। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যুৎ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তর গুলোর দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভ্যাস বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতেও এমন কা-জ্ঞানহীন আচরণ সামনে এনেছে। গত তিনমাস যাবত বরিশালের অনেক মানুষ আমাদেরকে জানিয়েছেন তাদেরকে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল দিতে হচ্ছে। বর্তমান দুর্যোগকালীন সময়ে যেটা অত্যাধিক কষ্টের। আমরা চাই সংশ্লিষ্টরা অতিদ্রুত বিদ্যুৎ বিলের নির্যাতন থেকে বরিশালবাসীকে মুক্তি দিন।
Leave a Reply