বরিশাল নগরীতে চিকিৎসকের অবহেলায় অন্ত:সত্ত্বা নারীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার নগরীর বেলভিউ হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। মৃত নারী শাহনাজ পারভীন রাজাপুরের শুক্তঘরের বাসিন্দা সোবাহান আলীর কন্যা। তিনি ওই ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের বর্তমান সভাপতি এবং সাবেক ইউপি মেম্বার ছিলেন। এদিকে এ ঘটনার বিচার দাবি করেছেন রোগীর স্বজনরা। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে এই মৃত্যুর ঘটনায় তারা দায়ী নয়।
মৃতের স্বামী মিন্টু হাওলাদার (৪১) এবং দেবর মিজানুর রহমান জানান, ৫ মাসের অন্ত:সত্ত্বা ছিলেন পারভীন। গত ২৪ জুলাই রক্তক্ষরণ শুরু হওয়ায় বরিশাল নগরীর বেলভিউ ক্লিনিকে ভর্তি করা হয় পারভীনকে। তার চিকিৎসার তত্ত্বাবধানে ছিলেন ওই ক্লিনিকের চিকিৎসক ডা. জি কে চক্রবর্তী। পারভীন ক্লিনিকের ৩০৬ নম্বর কেবিনে ভর্তি ছিলেন। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার শরীরের অবস্থার অবনতি ঘটে পারভীনের। এসময় সংশ্লিষ্ট নার্স এবং চিকিৎসককে বিষয়টি অবহিত করা হলেও তারা কর্ণপাত করেন নি- এমন দাবি স্বজনদের।
মৃতের দেবর মিজানুর রহমান জানান, বেলা ১১ টার দিকে তাকে এক ব্যাগ রক্ত সংগ্রহের জন্য বলেন আবাসিক মেডিকেল অফিসার কাজী আহমদউল্লাহ। তিনি সে অনুসারে রক্ত সংগ্রহ করেন এক আত্মীয়ের মাধ্যমে। এদিকে দুপুরের পরপরই অসুস্থ হয়ে পড়েন পারভীন। এসময় তার অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট চিকিৎসককে জানালেও তিনি গুরুত্ব দেননি বলে অভিযোগ মিজানুরের। এক পর্যায়ে সন্ধ্যা ৭ টার দিকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয় পারভীনকে। এর কিছুক্ষণ পরেই পারভীনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। এই মৃত্যুর ঘটনায় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক জি কে চক্রবর্তী এবং মেডিকেল অফিসার কাজী আহমদউল্লাহর অবহেলাকেই দায়ী করেছেন স্বজনরা।
এদিকে মৃত্যুর ঘটনাটিকে সাডেন ডেথ বলে উল্লেখ করেছেন বেলভিউ ক্লিনিকের চিকিৎসক ডা. জি কে চক্রবর্তী। তিনি জানান, গত ৫ আগস্ট আলট্রাসনোগ্রাম করা হয় পারভীনের। সেসময় পেটের বাচ্চা সুস্থ বলে রিপোর্ট দেয়া হয়। এরপর ১২ আগস্ট পেটের বাচ্চা মৃত বলে আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
ডা. জি কে চক্রবর্তী দাবি করেন, বিষয়টি পারভীনের স্বজনদের অবহিত করে অপারেশনের পরামর্শ দিলেও তারা রাজী হননি। তাদের ধারণা রিপোর্টটি ভুল ছিল। পরবর্তীতে গতকাল বিকেলে পেটে মৃত বাচ্চা নিয়েই মৃত্যু ঘটে পারভীনের।
চিকিৎসায় অবহেলার কারণে অন্ত:সত্ত্বার মৃত্যু হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ক্লিনিকের আরএমও কাজী আহমদউল্লাহ দাবি করেন, তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। এমনকি সার্বক্ষণিক নজরদারিও করেছেন। তিনিও বিষয়টিকে সাডেন ডেথ বলে উল্লেখ করেছেন।
এ বিষয়ে কোতয়ালী মডেল থানার ওসি নুরুল ইসলাম জানান, বেলভিউ ক্লিনিকে চিকিৎসকের অবহেলায় অন্ত:সত্ত্বার মৃত্যুর বিষয়ে তারা কোন ধরনের অভিযোগ পাননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।
Leave a Reply