ভোলার দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়ন মেঘনা নদীর পানিসীমার মাঝে অবস্থিত। ওই মেঘনা নদীর ভাঙ্গনের ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছে ইউনিয়নের অনেক পরিবার। সেখানকার বসবাসকারী মানুষেরা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। মদনপুর চর ইউনিয়নের ৪, ৫,৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডগুলো ভেঙ্গে অনেকটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এসব ওয়ার্ডে প্রায় চার হাজার মানুষ বসবাস করত।
অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি ও নদী ভাঙ্গনের সাথে লড়াই করে তাদের বসবাস। ভোলার দ্বীপ থেকে মদনপুর ইউনিয়নে নদী পথে যাতায়াত করতে হয়। শুকনো মৌসুমে উত্তপ্ত বালুর সাথে যুদ্ধ করে তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতে হয়। আর বর্ষা এলে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে জোয়ারের পানিতে কচুরিপানার মতো ভেসে বেড়াতে হয়। সরেজিমনে গিয়ে দেখা গেছে, রাস্তা-ঘাট ও ব্রিজ ভেঙ্গে পড়েছে। ভাঙ্গা ব্রিজের উপর সাঁকো বানিয়ে চলাচল করছে এলাকাবাসী। চরবাসীরা জানান, প্রথমে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানির রেশ কাটাতে না কাটাতেই আবারো জোয়ারের পানি সব ভাসিয়ে নিয়েছে।
রহিমা বেগম জানান, দীর্ঘদিন ধরে মদনপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বসবাস করেছি। হঠাৎ মেঘনার ভাঙ্গনের ফলে পরিবারসহ এখন অন্য ওয়ার্ডে বসবাস করছি। বর্তমানে যে ওয়ার্ডে বসবাস করছি সেখানের লোকজন আমাদের বহিরাগত বলে। গবাদি পশু লালন-পালনের ক্ষেত্রে পোহাতে হয় নানান সমস্যা।
ইয়াছমিন বেগম জানান, আগে আমি ৫ নম্বর ওয়ার্ডে বসবাস করেছি। সেখানে আমরা অনেক সুখে-শান্তিতে বসবাস করতাম। মেঘনায় ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে বর্তমানে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে বসবাস করছি। এখানে আমি হাঁস-মুরগি লালন-পালন করতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। এর একটা স্থায়ীয় সমাধান হলে আমরা অনেক উপকৃত হবো।
পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফারুক দৌলত জানান, মেঘনার করাল গ্রাসে তার ওয়ার্ডের ৯৫ ভাগ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আগে অনেক শান্তিতে বসবাস করেছিল ওয়ার্ডবাসী। মেঘনায় ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে তার ওয়ার্ডের লোকজন বিভিন্ন ওয়ার্ডে চলে যায়। এতে করে ওই সমস্ত ওয়ার্ডের মানুষদের সাথে প্রায় ঝগড়া বিবাদ হয়ে থাকে। আমার নিজের ওয়ার্ড ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে আমি ৬ নম্বর ওয়ার্ডে এসে বসবাস করছি।
তিনি আরো বলেন, ভোলা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুল, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম সিদ্দিক ও দৌলতখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের মাধ্যমে আমার ওয়ার্ডটি ভাগ করে পূর্বপশ্চিম দিকে দিলে আমার বাড়িসহ অনেকের বাড়ি ৫ নম্বর ওয়ার্ডে নতুন করে গড়তে পারবে। এতে করে সকলে শান্তিতে বসবাস করতে পারবে।
সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সদস্য জিয়াবুন নেছার স্বামী জাহাঙ্গীর সরকার একই কথা জানান। তিনি বলেন, রাস্তাঘাট ভেঙ্গে যাওয়ায় করতে আমাদের চলাচলে বিঘ্ন ঘটেছে। কেউ অসুস্থ হলে তাকে আনা নেয়া করতে বিরাট সমস্যা হচ্ছে।
দৌলতখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অঃ দাঃ) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, বিষয়টি সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী মোঃ মাইদুল ইসলাম খান জানান, মদনপুর ইউনিয়নের অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিজ-কালভার্ট ও সড়কগুলোর তালিকা করে আমাদের সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হয়েছে। ডিপিপি অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেলে পরে আমরা মেরামতের কাজ শুরু করব।
Leave a Reply