আজকাল বিডি ডেস্ক।। বরিশালের উজিরপুর উপজেলার ধামুরা বন্দর এলাকার গজেন্দ্র গ্রামে প্রফেসর নিরু রায়হানকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে নিহতের স্ত্রী সৈয়দা শাহিন আক্তার।
স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে রোববার বেলা সাড়ে ১১ টার সময় বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন তিনি। এসময় স্ত্রী সৈয়দা শাহিন আক্তার হত্যাকারিদের ফাঁসি ও ন্যায় বিচার দাবি করেন।
নিহত নিরু রায়হান (পূর্বের নাম নিরঞ্জন শীল নিরু) বরিশালের উজিরপুর উপজেলার ধামুরা গজেন্দ্র গ্রামের মৃত: যোগেশ শীল এর পুত্র। সে বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে স্ত্রী সৈয়দা শাহিন আক্তার বলেন, আমি চট্রগ্রামে একটি এনজিওতে চাকুরির সুবাদে সেখানে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় আমার সাথে সম্পর্ক হয়। ওই সময়ে আমি মুসলিম পরিবারের এবং আমার স্বামী হিন্দু ধর্মের ছিলেন। পরবর্তীতে ২০০১ সালে আমার স্বামী নিরু রায়হান ইসলাম ধর্মগ্রহন করে ইসলামী শরিয়ত মোতাবেক আমাকে বিবাহ করেন। আমাদের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।
তিনি বলেন, আমার স্বামীর আরো তিন ভাই রয়েছে। এরা হলেন- অমল চন্দ্র শীল, বিমল চন্দ্র শীল, মনোরঞ্জন শীল। এছাড়াও তাদের পরিবার ও এক ভাগিনা রয়েছে। তিনি হলেন- সুশান্ত শীল শান্ত। আমার স্বামীর সাথে গত চার পাঁচ বছর ধরে তাদের জমি জমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিলো। তারা কোন ভাবেই আমার স্বামীর সম্পত্তি বুঝিয়ে দিতে রাজি ছিলোনা।
তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী নিরু রায়হান তার পিতার রেখে যাওয়া সম্পত্তি যা তার নামে বিএস পর্চা, রেকড ও গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। অথচ তার তিন ভাই ওই সম্পতিত্ত না দেওয়ার জন্য বিভিন্ন রকম পায়তারা শুরু করে।
এর পরিপেক্ষিতে ২০১৮ থেকে ২০১৯ সালের ফ্রেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোট ৬ বার আমার স্বামী তার নিজ বাড়ী উজিরপুরে আসা যাওয়া করে। এসময় তার ভাইদের সাথে ঝগড়াসহ হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে।
২০১৯ সালের ২৫ ফ্রেব্রুয়ারি বাড়িতে গিয়ে ২২দিন অবস্থানের পর তার সম্পত্তি বুঝে না নিয়ে ফিরবেনা এবং এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিদের নিয়ে বিচার সালিশ ডাকার কথা জানায়। বিষয়টি জানতে পেরে স্বামীর ভাইয়েরা কৌশলী ভুমিকা নেয়। তারা এক কোটি টাকা মূল্যের জমি নিজেরাই কিনে রাখার প্রস্তাব দেয়।
এতে রাজি হয়ে ভাইদের কথা মতো দুই মাসের মধ্যে ২২ লক্ষ টাকা এবং বাকী টাকা চলতি বছরের মধ্যেই পরিশোধ করবে বলে আস্বস্থ করে। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল স্বামী নিরু রায়হান সেই জমি বিক্রির ২২ লক্ষ টাকা নিতে ভারত হয়ে ফেরার পথে উজিরপুরের নিজ বাড়িতে ভাইদের কাছে যায়।
তিনি বলেন, ‘ঘটনার দিন ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল পৌনে টায় আমার স্বামীর ছোট ভাই মনোরঞ্জন শীল আমাকে ফোন করে স্বামীর মৃত্যুর খবর জানায়। এমনকি খবর পেয়ে আমি আমার শ্বশুর বাড়িতে আসার আগেই আমার স্বামীর দাফন সম্পন্ন করে তারা।
তবে ঘটনার ১২ দিন পরেও স্বামীর সাথে থাকা মানিব্যাগে থাকা ভোটার আইডি কার্ড, এটিএম কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ইউনির্ভাসিটির আইডি কার্ড, সাথে থাকা নগদ ৮০ হাজার টাকা, দুটি ব্যাংকের পাস বই, একটি স্মার্ট ফোন, সীম, বাড়ির দলিল, কিছু গুরুত্বপূর্ন কাগজপত্র, একটি চাবির ব্যাগ আমাকে বুঝিয়ে দেয়নি। এগুলো তারা পায়নি বলে দাবি করে।
তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী মারা যায় ২১ এপিল বিকেল ৩ টা ৪৪ মিনিটে। তার ব্যবহৃত মোবাইল সীম বন্ধ হয় সেদিন বিকেল পৌনে ৬টায়। সীমটি ওই বাড়ীতে বসেই বন্ধ করা হয়। তাহলে মৃত মানুষ দুই ঘন্টা পর নিজের মোবাইল সীম বন্ধ করলো কিভাবে বলে প্রশ্ন তোলেন নিহতের স্ত্রী।
নিরু রায়হানের মৃত্যুর পর আমার শ্বশুর বাড়ীর লোকজন চেয়ারম্যানের কাছ থেকে স্ত্রী’র নাম খালি রেখে মৃত্যুর সনদ পত্র তোলেন। আমার স্বামী বিয়ে করেনি, তার কোন ওয়ারিশ নেই এমনটা বুঝিয়ে তারা ভূমি অফিসে এটাই প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন।
এই ঘটনার ৮ মাস পরে আমি বরিশালে আমার স্বামীর বাড়িতে আসি তার প্রাপ্ত সম্পত্তি বুঝে নিতে। সেখানে আমার শ্বশুর বাড়ীর লোকজন আমাকে ও আমার ছেলেকে অস্বিকার করে এবং আমার ছেলের জীবনের উপর হুমকী দেয়। এর পরিপেক্ষিতে আমি উজিরপুর থানায় ২০২০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি একটি সাধারণ ডায়রি করি।
এরপর ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর বরিশাল বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ৮ জনের নামে একটি হত্যা মামলা দায়ের করি। মামলার আসামিরা হলেন- অমল চন্দ্র শীল, বিমল চন্দ্র শীল, মনোরঞ্জন শীল, সুশান্ত শীল শান্ত, কনা রানী শীল, মিথুন জয় দীপ, অর্পিতা রানী টুম্পা, অঞ্জন শীল। উক্ত মামলায় বিজ্ঞ আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন। মামলাটি বর্তমানে সিআইডিতে তদন্ত চলছে। ৮ মার্চ ডিএনএ ও ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য আমার স্বামীর লাশ উত্তোলন করবে।
এদিকে, আমার দেবর মনোরঞ্জন শীল বরিশারের আগৈলঝাড়ার যুব উন্নয়ন অফিসে কর্মরত ছিলেন। হত্যা মামলা করার কথা শুনে সে চাকরি থেকে অব্যহতি নিয়েছে। আমি জানতে পেরেছি তারা সমস্ত সম্পতি বিক্রি করে দেশ ত্যাগ করার পরিকল্পনা করছে।
তাই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী’র কাছে হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমুলক সাস্তির দাবি জানিয়েছেন। একই সাথে তিনি স্বামীর প্রাপ্য সম্পত্তি যাতে তার ছেলে পায় তারও জোর দাবি জানান। অন্যথায় ছেলের ভবিষৎ অণিশ্চয়তার মধ্যে পরবে বলে জানান তিনি।
Leave a Reply