নিজস্ব প্রতিবেদঃঃ সরকারি চাকরি বলে কথা তার নাম জাহিদ সরদার। তিনি চাকরি করেন বরিশাল সদর উপজেলার জাগুয়া ইউনিয়নের পাচগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরী-নাইট পদে। মাসে অন্তত সেখান থেকে তিনি সরকারি ভাবে বেতন নিলেও সারাদিন কাটে রাজনীতির মাঠে ব্যস্ততায়। তিনি রাজনীতির মাঠে ব্যস্ত থাকায় স্কুলে সময় দেননি বলেই চলেই। তাছাড়ার রাতের বেলা নাইটগার্ডের ডিউটিও করাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। শোনা যায়- রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকায় জাহিদ কর্মস্থল স্কুলে ভাড়ায় এক নারীকে খাটাচ্ছেন। রাজিয়া নামের ওই নারী মাস থেকে জাহিদের কাছ থেকে বেতনের একটি অংশগ্রহণ করেন। এনিয়ে নানা কানাঘুষা শোনা গেলেও জাহিদ স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকায় কেউ ভয়ে মুখ খোলার সাহস দেখায়নি, দেখাচ্ছে না। বিস্ময়কর বিষয় হচ্ছে এই বিষয়টি স্কুল ম্যানেজিং কমিটি থেকে শুরু করে শিক্ষকেরা অবগত থাকলেও তারাও রহস্যজন কারণে মুখ খুলছেন না।
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, জাহিদ একেতো আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত তার পরে আবার পার্শ্ববর্তী রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান খোকনের আত্নীয়। এই কারণে তার বিরুদ্ধে সহসায় কেউ মুখ খোলার সাহস নেয় না। তাছাড়া শোনা যায়, স্কুলে চাকরি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান খোকনই তাকে সহায়তা দেন। সূত্রটি জানায়, জাহিদ যে স্কুলের চেয়ে বেশি সময় রাজনীতির মাঠে ব্যয় করে তার কিছু উদাহরণও পাওয়া গেছে। তিনি প্রায়শই দলীয় প্রোগ্রামে নিজের ছবি সংবলিত ব্যানার এই ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে টাঙিয়ে দেন। এবং সর্বদা চেয়রম্যান খোকনের সাথে থেকে এলাকার ড্রেজারসহ যে কোনো অবৈধ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন।
অবশ্য এই সব অভিযোগের একটি প্রমাণ সরেজমিনেই মিলেছে। রায়পাশা -কড়াপুর ইউনিয়নের পরিষদের সামনে তার ছবি সংবলিত টাঙানো একটি বিশালাকায় ব্যানার দেখা যায়। এছাড়া ওই ইউনিয়নে তাকে সকলে রাজনৈতিক কর্মী বা চেয়ারম্যানের ভায়েরা বলে জানে, চেনে।
সূত্রগুলো জানায়, জাহিদের চাকরি ও বসবাস উভয় স্থান জাগুয়ার চন্ডিপুর গ্ৰামে হলেও তাকে দিনের অধিকাংশ সময় দেখা যায় কড়াপুরে, চেয়ারম্যানের সাথে। এনিয়ে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি ও শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন না। এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জাহিদ বলছেন, রাজনৈতিকভাবে তাকে শায়েস্তা করতে একটি পক্ষ কৌশল নিয়েছে। তিনি কখনওই রাজনীতি করেন না, কিন্তু তৎসময়ে স্থানীয় এমপি এলাকায় একটি ব্যানার দিয়েছিলেন। তবে তিনি রাতে নাইটগার্ডের ডিউটি পালন না করাসহ নারীকে নিয়ে দপ্তরীর কাজ করানোর বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এবং ঘটনাটি চেপে যাওয়ার অনুরোধ রেখে আর্থিক প্রস্তাব দেওয়াসহ বলেন- স্কুল এলাকায় পুলিশ রাতে দায়িত্ব পালন করেন। এই কারণে রাতে তার দায়িত্ব পালন করতে হয় না।
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তারিকুল ইসলাম খান বলছেন, তিনি মাত্র কয়েকদিন হয়েছে, দায়িত্ব পেয়েছেন। এবং জাহিদ কর্মস্থলে না থাকার বিষয়টিও জেনেছেন। বিষয়টি নিয়ে প্রধান শিক্ষকসহ অনেকের সাথে আলোচনা হয়েছে, পরবর্তীতে করণীয় কী সেই সম্পর্কে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছেন।
তবে প্রধান শিক্ষক শিরিন সুলতানা বিষয়টি জানলেও রাজনৈতিক চাপের কারণে কিছু বলতে বা প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না। যদিও তিনি এমন অভিযোগ অস্বীকার করে বলছেন, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এবং উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
এই বিষয়ে বরিশাল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত ছিলেন। কিন্তু চাকরি নিয়ে দায়িত্ব না পালন করার সুযোগ নেই। পুলিশ বা অন্য কোনো কেউ রাতে এলাকায় পাহারায় থাকলেও দপ্তরীর স্কুলে থাকা বাধ্যতামূলক। বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান, শিক্ষা কর্মকর্তা।’
Leave a Reply