আফগানিস্তান এখন তালেবান বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে। দেশটির মেয়েরা তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায়। বিশেষ করে খেলোয়াড়েরা। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে খেলার সঙ্গে সম্পর্কিত সব ছবিই মুছে ফেলেছেন তাঁরা।
পুড়িয়ে ফেলেছেন খেলাধুলার সরঞ্জাম। ভবিষ্যৎ শঙ্কার সঙ্গে জীবন নিয়েও আছে অনিশ্চয়তা। সুযোগ পেয়ে অনেকে আফগানিস্তান ছেড়ে পাড়ি দিয়েছেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। আফগানিস্তান নারী জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার ফানুস বশির এমনই একজন, তিনি পাড়ি জমিয়েছেন ফ্রান্সে।
আফগানিস্তান থেকে আসা মানুষদের প্যারিস থেকে ৪৫০ কিলোমিটার পশ্চিমে একটি জায়গায় আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন কোয়ারেন্টিনে আছেন তাঁরা। কোয়ারেন্টিন কেন্দ্রের বাইরে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন ২৫ বছর বয়সী বশির।
তাঁর কথার মধ্যে ফুটল আফগানিস্তানের ভবিষ্যত নিয়ে অনিশ্চয়তা, ‘দেশ, আমাদের ভবিষ্যৎ ও আফগানিস্তানের মেয়েদের নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিল। এটা দুঃস্বপ্নের মতো ছিল যে তালেবান এসে আফগানিস্তানের সব দখল করে নিল। আপাতত সেখানে নারীদের কোনো ভবিষ্যৎ নেই।’
২০১০ সালে নতুনভাবে গড়ে তোলা জাতীয় ফুটবল দলে জায়গা করে নেন বশির। জরাজীর্ণ একটি স্টেডিয়ামে অনুশীলন করে দেশের বাইরের টুর্নামেন্টগুলোতে অংশগ্রহণ করেন তাঁরা। সংবাদমাধ্যমকে সোনালি দিনগুলোর ছবি দেখান বশির। যেখানে ফুটবলের পোশাকে হাস্যোজ্জ্বল দেখাচ্ছিল তাঁকে এবং তাঁর সঙ্গে ছিলেন সতীর্থ খেলোয়াড়েরা।
কয়েক বছর আগে জাতীয় দল থেকে অবসর নিলেও ক্লাবের হয়ে খেলা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তালেবান বাহিনী আসার পর অনুশীলন বন্ধ হয়ে যায়। বেশির ভাগ খেলোয়াড় ও দলের সঙ্গে যুক্ত থাকা ব্যক্তিরা অস্ট্রেলিয়ার সেনাবাহিনীর সহায়তায় পাড়ি জমান সে দেশে।
১৫ আগস্ট কাবুল দখল করে নেয় তালেবান। এরপর কয়েক দিন বাড়ি থেকেই বের হননি কাবুলে অবস্থান করা বশির। পরে প্রয়োজনের তাগিদে বোরকা পরে ঘর থেকে বের হন। কিছু জায়গায় তালেবান বলেছিল, পুরুষ অভিভাবকদের সঙ্গে করে মেয়েদের বের হতে। কিন্তু এভাবে তো আর জীবন চালিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়।
শঙ্কিত মা–বাবাকে নিয়ে দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। মানুষের ভিড় ঠেলে টানা তিন দিন কাবুল বিমানবন্দরে যাওয়ার চেষ্টা করেও সফল হওয়া যায়নি। সেখানে মানুষের ওপর গুলি চালানোর সঙ্গে লাঠিচার্জও করা হচ্ছিল।
সেখানে তালেবান প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলেন বশির। তালেবান প্রতিনিধি তাঁকে বলেন, ‘আপনি একজন মহিলা, আমরা আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাই না।’ এই অবস্থায় দেশ ছাড়ার আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন তাঁরা। এরই মধ্যে ফরাসি দূতাবাসের ঘোষণা, আফগানিস্তান থেকে বিমানবন্দরে যাওয়ার জন্য বাসের ব্যবস্থা করা হবে এবং সেখান থেকে ফ্রান্স। সৌভাগ্যক্রমে মা–বাবাকে নিয়ে তাঁরা এখন ফ্রান্সে।
ফুটবল খেলার পাশাপাশি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে চাকরি করতেন বশির। তাই আশা ছিল ফ্রান্সে তাঁর পেশাটা চালিয়ে নেবেন। কিন্তু এখনো কাবুলে ফেলে আসা অস্থির জীবন থেকে বের হতে পারেননি। বলছিলেন, ‘আমাদের দেশ, আমাদের স্বপ্ন, সবকিছু ত্যাগ করা সবার জন্য খুব কঠিন। এখন আমরা শূন্য থেকে শুরু করব।’
Leave a Reply