আগের ম্যাচের মতো একতরফা হয়নি। মিরপুরের ধীর পিচে ১৪১ রানের পুঁজি নিয়েও স্বস্তিতে ছিল না বাংলাদেশ। শেষ ওভার পর্যন্ত যে লড়াই জিইয়ে রেখেছিল নিউজিল্যান্ড। তবে ঘরের মাঠে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠা টাইগারদের কাছে হার মানতেই হয়েছে তাদের।
শেরে বাংলায় সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে শেষ ওভারে এসে রুদ্ধশ্বাস এক জয় পেয়েছে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দল। ৪ রানের এই জয়ে পাঁচ ম্যাচ সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল স্বাগতিকরা।
১৪২ রানের লক্ষে খেলতে নেমে এবারও শুরুতেই ধাক্কা খেয়েছে নিউজিল্যান্ড। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে বল হাতে নিয়েই সাফল্য পান সাকিব আল হাসান। তার শর্ট ডেলিভারি জায়গা করে খেলতে গিয়ে বোল্ড হন রাচিন রবীন্দ্র (৯ বলে ১০)।
পরের ওভারে আর এক উইকেট। এবার শেখ মেহেদিকে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়ে পরাস্ত টম ব্লান্ডেল (৮ বলে ৬)। বল ধরে অনেকটা সময় পান নুরুল হাসান সোহান, স্ট্যাম্প ভাঙতে কষ্ট হয়নি।
তবে তৃতীয় উইকেটে বেশ প্রতিরোধ গড়ে তুলেন কিউই অধিনায়ক টম ল্যাথাম আর উইল ইয়ং। শেষ পর্যন্ত তাদের ৪৬ বলে ৪৩ রানের জুটিটি এগারতম ওভারে এসে ভেঙেছেন সাকিব। তার ঘূর্ণিতে ইয়ং (২৮ বলে ২২) ব্যাট চালালে আউটসাইড এজ হয়ে বল চলে যায় থার্ডম্যানে, ডাইভ দিয়ে দারুণ ক্যাচ নেন সাইফউদ্দিন।
এরপর আরেকটি ছোট জুটি। ১৫তম ওভারে কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমকে (১০ বলে ৮) ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন নাসুম আহমেদ। ডিপ স্কয়ার লেগ বাউন্ডারিতে দুইবারের চেষ্টায় ক্যাচ নেন মুশফিকুর রহীম।
পরের ওভারে আরও এক উইকেট। এবার শেখ মেহেদিকে সুইপ করতে গিয়ে ধরা হেনরি নিকোলস (৬)। ৯২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে নিউজিল্যান্ড।
মাথার ওপর রানের চিন্তা বাড়তে থাকে অন্যদিকে। তবে লড়াইটা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন কিউই অধিনায়ক টম ল্যাথাম। দারুণ এক ইনিংস উপহার দিয়েছেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত আর বিজয়ীর বেশে মাঠ ছাড়তে পারেননি।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেয় বাংলাদেশ। দুই ওপেনার নাইম শেখ আর লিটন দাসের দারুণ উদ্বোধনী জুটির পর শেষদিকে মাহমুদউল্লাহর দায়িত্বশীল ইনিংসে ৬ উইকেটে ১৪১ রানের পুঁজি গড়ে টাইগাররা।
ব্যাটিংয়ে নেমে দেখেশুনে শুরু করেন নাইম-লিটন। মারমুখী ভূমিকা না নিয়ে পিচের চরিত্র বুঝে এগিয়েছেন তারা। ফলে প্রথম ৬ ওভারের পাওয়ার প্লে’তে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৩৬ রান তুলে বাংলাদেশ।
উইকেটে সেট হয়ে হাত খুলতে খেলতে যাচ্ছিলেন লিটন। দশম ওভারে কিউই স্পিনার রাচিন রবীন্দ্রকে স্লগ সুইপে মিডউইকেটের ওপর দিয়ে ৮৪ মিটার ছক্কাও হাঁকান ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
কিন্তু ওই ওভারেই বোকার মতো কাজ করে বসেন। অফস্ট্যাম্পের বাইরের বল আলতো খোঁচায় টেনে এনে ভাঙেন স্ট্যাম্প। ২৯ বলে ৩ বাউন্ডারি আর এক ছক্কায় লিটনের ৩৩ রানের ইনিংসটির অপমৃত্যু তাতেই, ভাঙে ৫৯ রানের ওপেনিং জুটি।
পরের বলে আবারও বিপদ বাংলাদেশের। এবার মুশফিকুর রহীম টার্ন বুঝতে না পেরে পা কিছুটা এগিয়েছিলেন, নিমিষেই স্ট্যাম্প ভেঙে দেন উইকেটরক্ষক টম ল্যাথাম। গোল্ডেন ডাকে ফিরতে হয় টাইগার দলের ব্যাটিং ভরসাকে।
উইকেটে এসে সাকিব আল হাসান শুরু থেকেই চালিয়ে খেলছিলেন। দারুণ দুটি বাউন্ডারিও হাঁকান। কিন্তু ৭ বলে ১২ করে ফিরতে হয় তাকেও। ৫৯ থেকে ৭২, ১৩ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে স্বাগতিকরা।
সেখান থেকে ২৮ বলে ৩৪ রানের জুটি নাইম আর মাহমুদউল্লাহর। ৩ বাউন্ডারিতে বল সমান ৩৯ করা নাইমকে ফিরিয়ে এই জুটিটি ভাঙেন রবীন্দ্র। পায়ের বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে লংঅনে টম ব্লান্ডেলের হাতে ধরা পড়েন টাইগার ওপেনার।
বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি আফিফ হোসেন ধ্রুব। উইকেটে এসেই ডাউন দ্য উইকেটে বড় শট খেলতে গিয়ে লংঅনে ক্যাচ হন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান (৩ বলে ৩)।
তবে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ খেলেছেন অধিনায়কের মতোই। দায়িত্ব নিয়ে একদম শেষ ওভার পর্যন্ত ব্যাটিং করেছেন। সঙ্গে ছিলেন নুরুল হাসান সোহান। তাদের ২২ বলে ৩২ রানের জুটিতেই মূলত ১৪১ পর্যন্ত গেছে টাইগাররা।
সোহান ইনিংসের একদম শেষ বলে আউট হন ৯ বলে ১৩ করে। মাহমুদউল্লাহ ৩২ বলে ৫ বাউন্ডারিতে অপরাজিত থাকেন ৩৭ রানে।কিউই বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল বাঁহাতি স্পিনার রাচিন রবীন্দ্র। ৪ ওভারে ২২ রান খরচায় ৩টি উইকেট নেন তিনি।
Leave a Reply