সিগারেট কিনে না দেওয়ায় পাথরঘাটা এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল ইসলামের বিরুদ্ধে নির্মাণ শ্রমিককে ভাড়াটে বাহিনী দিয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (০৩ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে এই ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী শ্রমিক শেখর হাওলাদার বামনা উপজেলার রুহিতা গ্রামের সুনীল হাওলাদারের ছেলে। তিনি অথৈ এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হয়ে পাথরঘাটা উপজেলার পশ্চিম হাড়িভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ কাজের ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত।
ভুক্তভোগী ও ঘটনা সম্পর্কে অবহিত একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এলজিইডির তত্ত্বাবধানে পাথরঘাটা হাড়িভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ কাছ চলছে। ভবনটির নির্মাণ কাজের দেখভালের দ্বায়িত্বে আছেন পাথরঘাটা এলজিইডির একটি প্রজেক্টের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল ইসলাম।
প্রকৌশলী রাকিবুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ, দুই-তিন দিন পরপর নির্মাণস্থলে গিয়ে ঠিকাদারের নিয়োগপ্রাপ্ত ম্যানেজারের কাছ থেকে তিনি টাকা ও সিগারেট নিয়ে আসেন।
বৃহস্পতিবার সকালে প্রকৌশলী রাকিবুল ইসলাম ওই বিদ্যালয়ে যান। সেখানে ঠিকাদারের ম্যানেজার শেখর হাওলাদারকে তার জন্য এক প্যাকেট সিগারেট নিয়ে আসতে বলেন। শেখর প্রথমে অপারগতা প্রকাশ করে। তবে পরে প্রকৌশলীর কথা রাখতে তিনি এক প্যাকেট সিগারেট কিনে নিয়ে আসেন। তবে ম্যানেজার শেখর হাওলাদার তার এক নির্মাণ শ্রমিকের জন্য ওই শ্রমিকেরই অনুরোধে প্রকৌশলীর কাছে একটি সিগারেট চান। এতে প্রকৌশলী ক্ষিপ্ত হয়ে গালিগালাজ করে চলে যান।
ঘটনার পর রাত ১১টার দিকে ওই উপসহকারী প্রকৌশলী রাকিবুল ইসলামসহ আরও ৮-৯ জন তিনটি মটরসাইকেলে স্কুলে প্রবেশ করে ম্যানেজার শেখরকে কিল, ঘুষি থাপ্পড়সহ লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটান। এতে তিনি মাথায় গুরুতর আঘাত পান। পরে তাকে স্থানীয় একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পশ্চিম হাড়িটানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের চা-পান বিক্রেতা মাকসুদা বেগম জানান, বৃহস্পতিবার রাতে তিনটি মটরসাইকেলে প্রকৌশলী রাকিব দলবল নিয়ে সেখানে যান। ম্যানেজার শেখরকে স্কুলে দোতলার একটি কক্ষে আটকিয়ে তারা মারধর করেন। চলে যাওয়ার সময় তিনি তাদের বলতে শোনেন ‘সব কিছু ডিলেট করা হয়েছে’। এর পর এ রকম কিছু করলে তোকে জানে মেরে ফেলব।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী শেখর হাওলাদার বলেন, আমি এখানে চাকরি করি। প্রকৌশলী স্যার প্রায়ই আমার কাছ থেকে টাকা ও সিগারেট নিয়ে যান। ওইদিন কাছাকাছি কোনো দোকান খোলা ছিল না। আমার এক শ্রমিকের অনুরোধে আমি স্যারের কাছ থেকে একটি সিগারেট চাই। তিনি না দিয়ে উল্টো আমাকে গালিগালাজ করেন। পরে আমি তার কাছে মাফ চেয়েছি। কিন্তু রাতে নিজে ৯ জন লোক নিয়ে আমাকে প্রচুর মেরেছেন।
ঘটনার বিষয়ে অভিযুক্ত উপসহকারী প্রকৌশলী রাকিবুল ইসলাম বলেন, আমি তাকে মারিনি। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হইছে। তাকে মেরেছে পাথরঘাটার ছাত্রলীগের ছেলেরা। আমি এসব বিষয়ে কিছুই জানিনা।
পাথরঘাটা উপজেলা প্রকৌশলী চন্দন কুমার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সামান্য ভুল বোঝাবুঝির কারণে অনাকাঙ্খিত এই ঘটন ঘটেছে। আমরা ইতোমধ্যে ওই প্রকৌশলীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি এবং ওই সাইট থেকে সরিয়ে নিয়েছি। আশা করি ৭ দিনের মধ্যে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply