জন্ম থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় প্রায় ৩৪ বছর ধরে বিছানায় দিন কাটছে বড় ভাই খোরশেদ আলমের (৩৪)। অপরদিকে তার ছোট ভাই মোরশেদ আলম (২৪) মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় ৮ বছর ধরে শিকলে বন্দি হয়ে আছে। আর তাদের দিনমজুর পিতা আজাদ হোসেনও পা ভেঙে অনেকটা উপার্জনহীন হয়ে পড়েছে। এতে তাদের পুরো পরিবারটি মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। এ দুই সহোদরের বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ৪নং চররুহিতা ইউনিয়নের চর লামচী গ্রামে। তারা দিনমজুর আজাদ হোসেন ও খুরশিদা বেগমের সন্তান ।
স্থানীয়রা জানান, অভাব-অনটনে থাকা পরিবারটি এ দুই জনের চিকিৎসাও করাতে পারছেনা। এছাড়া ভরনপোষণ করাতেও কষ্ট হচ্ছে তাদের। সরকারিভাবে যদি দুই সন্তানের চিকিৎসা ব্যয় বহন করা হয়, তাহলে ছোট ছেলেটা সুস্থ হতে পারে। আর বড় ছেলেটা অন্তত হুইল চেয়ারে বসতে পারলেই দুঃখ অনেকটা লাঘব হবে অসহায় পরিবারটির। তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মানষিক ভারসাম্যহীন মোরশেদ আলমের পায়ে শিকল বাঁধা। কাউকে দেখলে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।
পরিবারের লোকজন জানায়, জন্মের পর ৭ বছর পর্যন্ত ভালো ছিল মোরশেদ। হঠাৎ করে খিঁচুনি উঠে মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে যায় সে। অর্থাভাবে সু-চিকিৎসা করাতে পারেনি পরিবারটি। এদিক সেদিক গিয়ে অন্যের বিনষ্ট করার ভয়ে তার পায়ে শিকল পরিয়ে রাখা হয়েছে। এভাবে পার হয়েছে দীর্ঘ আট বছর। সুস্থ না হলে বাকি জীবনটা হয়তো এভাবেই কাটাতে হবে তাকে।
এদিকে মোরশেদ আলমের বড় ভাই খোরশেদ আলমও ঘরে শুয়ে থেকে কাতরাচ্ছেন। জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী। দুই হাত ও দুই পা বিকলঙ্গ তার। এভাবেই জীবন পার করেছেন তিনি। তবে হাঁটার স্বপ্ন দেখেন খোরশেদ।
পিতা আজাদ হোসেন জানান, আগে রিক্সা চালিয়ে কোনভাবে তাদের ঔষধপত্রসহ যাবতীয় খরচ চালাতাম। কিন্তু একটি দুর্ঘটনায় পা ভেঙ্গে যাওয়ায় এখন আর রিক্সা চালাতে পারিনা। বর্তমানে বাড়ীর পাশে পান দোকান দিয়ে সংসার চালাতে হয়। কিন্তু এতে হয়না। কোনদিন খেয়ে কোনদিন না খেয়ে থাকতে হয়। সরকারিভাবে যদি দুই সন্তানের চিকিৎসা ব্যয় বহন করা হয় তাহলে ছোট ছেলেটা সুস্থ হতে পারে আর বড় ছেলেটা অন্তত হুইল চেয়ারে বসতে পারলেই দুঃখ কিছুটা কমবে।
তাদের মাতা খুরশিদা বেগম বলেন, প্রতিবন্ধী দুই সন্তান নিয়ে আমরা মানবেতর জীবন যাপন করছি। প্রতি ছয় মাস অন্তর অন্তর সাড়ে চার হাজার টাকা করে প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেও তা দিয়ে কিছুই হচ্ছেনা। আরও সরকারি সহযোগিতার দাবি করেন তিনি।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ূন কবির পাটোয়ারী জানান, তারা প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছে। তবে হুইল চেয়ারসহ চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হবে। এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মামুনুর রশিদ বলেন, বিষয়টি জানা ছিলনা। স্থানীয় চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে তাদের সংকট সমাধানে উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply