দেশের নৌপথে চলাচলকারী লঞ্চ, জাহাজসহ অভ্যন্তরীণ সব নৌযানের ফিটনেস, রুট পারমিট, লাইসেন্স ও নিরাপত্তা সামগ্রীর হালনাগাদ তথ্য চেয়েছেন হাইকোর্ট। প্রয়োজনীয় এসব তথ্য আগামী তিন মাস অর্থাৎ ৯০ দিনের মধ্যে দাখিলের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং বিআইডব্লিউটিএ’র সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
একইসঙ্গে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় করা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন আগামী এক মাস অর্থাৎ ৩০ দিনের মধ্যে দাখিল করতে বলা হয়েছে।একইসঙ্গে পৃথক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
সুগন্ধা নদীতে লঞ্চে আগুনের ঘটনায় নিহতদের পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ এবং নৌ দুর্ঘটনা এড়ানোর পাশাপাশি অবস্থার উন্নয়নে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশনা চেয়ে গত রোববার (২৬ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী পৃথক রিট করেন।
আগুনের ঘটনায় নিহত প্রত্যেক যাত্রীর পরিবারকে ১০ লাখ টাকা ও গুরুতর আহত প্রত্যেককে ৫ লাখ টাকা তাৎক্ষণিক ক্ষতিপূরণ দিতে অন্তর্বর্তী নির্দেশনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ একটি রিট করেন।
ওই দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে দিতে অন্তর্বর্তী আদেশ চেয়ে একই দিন সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী সৌমিত্র সরদারের পক্ষে আইনজীবী আনিচুর রহমান অপর রিটটি করেন। আজ পৃথক দুই রিটের শুনানি নিয়ে সব নৌযানের হালনাগাদ তথ্য চাওয়ার পাশাপাশি রুল জারি করেন আদালত।রুলে ওই লঞ্চে আগুন প্রতিরোধে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।স্বরাষ্ট্র সচিব, নৌ পরিবহন সচিব, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক, বিআইডব্লিওটিএর চেয়ারম্যানসহ বিবাদীদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।রিটকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনিচুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এদিন আদালতে সৌমিত্র সরদারের করা রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার অনীক আর হক, অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান রায়হান, আনিচুর রহমান, মো. ইসা ও মহিউদ্দিন পলাশ। অপর রিটের পক্ষে আবেদনকারী ইউনুছ আলী আকন্দ নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
আইনজীবী আনিচুর রহমান বলেন, ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে আগুনের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটিগুলোর প্রতিবেদন ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে সব লঞ্চ-জাহাজের ইঞ্জিনের বিষয়ে প্রতিবেদন ও বৈধ লাইসেন্স/পারমিটসহ ফিটনেসের তথ্যাদি আগামী ৯০ দিনের মধ্যে দাখিল করতে বলা হয়েছে। এছাড়া এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে আগুনের ঘটনায় হতাহত ব্যক্তিদের তালিকা চেয়েছেন আদালত।
ভুক্তভোগী কারও আর্থিক সাহায্যের প্রয়োজন হলে বরগুনা, ঝালকাঠি, বরিশালসহ স্ব স্ব জেলা প্রশাসকদের কাছে আবেদন করতে বলেছেন আদালত। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ওই আবেদন বিবেচনা করে লঞ্চ মালিকের সঙ্গে কথা বলো প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা দিতে ত্বরিত ব্যবস্থা নেবেন।
গত ২৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাত তিনটার দিকে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চটিতে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। রাতেই খবর পেয়ে বরিশাল, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠির কোস্টগার্ড এবং ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন। ওই ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪১ জনের প্রাণহানি হয়েছে। অগ্নিদগ্ধ অনেকেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
লঞ্চে আগুনের ঘটনায় এখনো শতাধিক যাত্রী নিখোঁজ। দগ্ধ ৮১ জনের মধ্যে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৪৬ জন। ২২ জনকে পাঠানো হয়েছে ঢাকায়। আর ১৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। তবে পুড়ে যাওয়া লঞ্চটিতে কতজন যাত্রী ছিল, এর সুনির্দিষ্ট তথ্য এখনো জানা যায়নি।বিআইডব্লিউটিএ জানিয়েছে, লঞ্চটিতে প্রায় ৪০০ যাত্রী ছিল। এ ঘটনায় ঝালকাঠি সদর থানায় অপমৃত্যু মামলা করেছেন গ্রাম পুলিশের এক সদস্য।
ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খলিলুর রহমান জানান, পোনাবালিয়ার গ্রাম পুলিশ জাহাঙ্গীর হোসেন অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছেন।এরইমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান।
Leave a Reply