নিজস্ব প্রতিবেদক:: বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এবং পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের অনুসারী ২০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লবের মধ্যকার বিরোধ প্রকট আকার ধারণ করেছে। কর্পোরেশনের একজন সড়ক পরিদর্শককে মারধরের অভিযোগ এনে রোববার বেলা তিনটার দিকে কাউন্সিলর বিপ্লবের কার্যালয় ঘেরাও করে সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারীরা। শহরের বৈদ্যপাড়া মোড়স্থ কার্যালয়টির সামনের নথুল্লাবাদ টু জেলখানার মোড় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভও করে। এই ঘটনায় মেয়রের উস্কানি রয়েছে অভিযোগ করেন জিয়াউর রহমান বিপ্লব। এবং তিনিও কাউন্টারে আধা ঘণ্টার মাথায় ওয়ার্ডের কয়েক শ’ নারী-পুরুষ নিয়ে বৈদ্যপাড়ার অপরপ্রান্তে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করেন এবং সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান। ফলে মহাসড়কের দুপ্রান্তে কয়েক হাজার যানবাহন আটকা পড়ে, দেখা দেয় সীমাহীন জনভোগান্তি। বিপ্লবের এই বিক্ষোভে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী অনুসারী আরও ৯ কাউন্সিলরও অংশ নেন বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ এবং প্রতিমন্ত্রী অনুসারী ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লবের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে শীতল দ্বন্দ্ব চলে আসছে। সাম্প্রতিকালে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর হোসেন এবং বিপ্লবের মধ্যকার আলাপচারিতার একটি মোবাইল ফোন রেকর্ডিং ফাঁস হয়। সেখানে মেয়রকে উদ্দেশ করে এই কাউন্সিলর ক্ষোভ ঝাড়ার পাশাপাশি বেশকিছু বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। এনিয়ে বরিশাল রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয় তোলাপাড়। এবং মেয়র ও কাউন্সিলর বিপ্লবের মধ্যে দ্বন্দ্ব আনুষ্ঠানিকভাবে রুপ নেওয়ার বিষয়টি প্রকাশ পায়।
কাউন্সিলর বিপ্লব জানান, সাদিক আব্দুল্লাহ মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পরে ছাত্র, যুব ও আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মী নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের লুটপাট চালাচ্ছেন। এর প্রতিবাদ করায় তাকেসহ অন্তত ১০ কাউন্সিলরকে কোনঠাসা করে রাখা হয়। এমনকি তাদের কার্যালয়ে নিয়োজিত সিটি কর্পোরেশনের স্টাফদেরও নিয়ে যাওয়া যায়।
সূত্র জানায়, এসব ঘটনায় সংক্ষুব্ধ ১০ কাউন্সিলর বিভিন্ন সময়ে বরিশাল সদর আসনের এমপি পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রীর সাথে যোগ দেন। এতে ক্ষুব্ধ মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ বিভিন্ন সময়ে এই ১০ কাউন্সিলরকে শায়েস্তা করার নানান কৌশল নেন। কিন্তু তাদের মাথার ওপর প্রতিমন্ত্রীর ছায়া থাকায় মেয়র কিছুতেই পেরে উঠছিলেন না।
প্রতিমন্ত্রী সমর্থিত কাউন্সিলররা জানান, তাদের শায়েস্তা করতে মেয়রের নানান কৌশল অবলম্বন করে ব্যর্থ হলেও একের পর এক ষড়যন্ত্র চলতে থাকে। সর্বশেষ তাদের কারও কারও কার্যালয় থেকে সিটি কর্পোরেশনের স্টাফদের প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ২০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে কোনো কিছু অবহিত না রোববার বিকেলে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের একটি বাসার প্ল্যান চেক করতে পাঠানো হয় বিসিসির সড়ক পরিদর্শক রাজিব হোসেন খানকে। মূলত তাকেই ডেকে নিয়ে মারধর করার অভিযোগ এনে কাউন্সিলর কার্যালয় ঘেরাও করে নথুল্লাবাদ টু জেলখানার মোড় সড়কে বিক্ষোভ করে সিটি কর্পোরেশনের কর্মীরা।
এক্ষেত্রে কাউন্সিলর বিপ্লবের দাবি, ‘আমার ওয়ার্ডে একটা কাজ করতে আসবে সেটা আমিই জানি না। আমার সব স্টাফ নিয়ে গেছে মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ। আমি শুধু ওই স্টাফকে ডেকে এনে জিজ্ঞাসা করেছি। এই ঘটনায় সাদিক আব্দুল্লাহ উস্কানি দিয়ে আমার অফিস ঘেরাও করিয়েছে। আমিও ষড়যন্ত্রের বিচার দাবিতে ১০ কাউন্সিলর নিয়ে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করি। এতে জনভোগান্তি দেখা দিয়ে পুলিশের অনুরোধে সন্ধ্যা ৬টার দিকে অবরোধ তুলে নেই।
তবে সড়ক পরিদর্শক রাজিব হোসেন খান বলেন, ‘একটি ভবনের প্ল্যান চেক করতে যাওয়ার পর কাউন্সিলর বিপ্লব আমাকে ফোন দিয়ে নানা কথা বলে হোসাইনিয়া মাদ্রাসায় ডেকে নেন। এরপর তাকে না বলে কেনো প্ল্যান চেক করতে গিয়েছি সেই অভিযোগ তুলে আমাকে মারধর করেন। খবর পেয়ে অন্য স্টাফরা এসে আমাকে উদ্ধার পরবর্তী এর প্রতিবাদে কাউন্সিলর কার্যালয় ঘেরাও করে। এক্ষেত্রে মেয়রের বিরুদ্ধে যে উস্কানির অভিযোগ করা কচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
তবে এই বিষয়ে জানতে মেয়রের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এদিকে বরিশাল কোতয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি/তদন্ত) লোকমান হোসেন জানিয়েছেন, একই সময়ে দুই স্থানে সড়ক অবরোধ করায় শহরে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে জনভোগান্তি তৈরি হওয়ার বিষয়টি উভয়পক্ষকে বুঝিয়ে বলায় তারা সন্ধ্যা ৬টার দিকে অবরোধ তুলে নেয়।’
Leave a Reply