ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে সিরিজটা কেবল শেষ হলো। ২ ম্যাচের টেস্ট এবং তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে পরাজয়ের পর ওয়ানডে সিরিজে এসে সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। তামিম ইকবালের নেতৃত্বাধীন ওয়ানডে সিরিজে ক্যারিবীয়দের হোয়াইটওয়াশ করলো টাইগাররা। অধিনায়ক তামিম হলেন সিরিজ সেরা পারফরমার।
কিন্তু ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পরই টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়ে বসলেন তামিম। আবার টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অধিনায়কত্ব নিয়ে ক্রিকেট ভক্ত থেকে শুরু করে অনেকেই সন্তুষ্ট নয়।
এমন পরিস্থিতিতে বিসিবির ৫ম বোর্ড মিটিং অনুষ্ঠিত হলো আজ মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামস্থ বিসিবি কার্যালয়ে। সেখানে রিয়াদের নেতৃত্ব, তামিমের টি-টোয়েন্টি ছেড়ে দেয়া- এসব বিষয়ে আলোচনা হবে বলেই ধারণা করেছিল সবাই।
কিন্তু বোর্ড মিটিং শেষ করে আসার পর বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন তামিমের টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের বিষয়ে বললেন, ‘তামিমের টি-টোয়েন্টি – ওটা তো আগে থেকেই জানি। এটা তো নতুন কোনো বিষয় না।’
ঠিক আছে, তামিমের বিষয়টা যেহেতু আগে থেকে জানা, এ কারণে আলোচনাও হয়নি। তাহলে মাহমুদউল্লাহর টি-টোয়েন্টিতে নেতৃত্বের বিষয়টা? সেটাও আলোচনা হয়নি? বিসিবি সভাপতি জানালেন, এ বিষয়টাও আলোচনা হয়নি। তিনি বলেন, ‘মাহমুদউল্লাহর অধিনায়কত্ব নিয়ে বোর্ড মিটিংয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’
তবে, টি-টোয়েন্টিতে মাহমুদউল্লাহর নেতৃত্বের বিষয়টি বোর্ড মিটিংয়ে আলোচনা না হলেও সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে বিসিবি সভাপতিকে। সে উত্তর থেকে যেটা পরিষ্কার, সেটা হচ্ছে- অধিনায়কত্ব নিয়ে তারাও চিন্তিত। তবে, শুধু অধিনায়ক পাল্টালেই টি-টোয়েন্টিতে সবকিছু পরিবর্তন হয়ে যাবে না বলেও মনে করেন বিসিবি সভাপতি।
প্রশ্ন করা হয়, টি-টোয়েন্টিতে অধিনায়ক পরিবর্তনের কোনো পরিকল্পনা বোর্ডের আছে কি না? জবাবে বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা সেটা বলা মুশকিল। তাই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন। টি-টোয়েন্টিতে হঠাৎ করেই কিছুটা একটা পরিবর্তন করলে (দলের মধ্যে) আহামরি কিছু পরিবর্তন আসবে কিনা তা নিশ্চিত নই। এটা প্রথম। (যা করার) আমাদের লং টার্মে করতে হবে। যাই করি না কেন, আমাদের আলাপ করে নিতে হবে। এখনো দল আসেনি। আসার পর আলাপ আলোচনা করে দেখব।’
তবে, বিসিবি সভাপতির মতে, শুধু অধিনায়কত্বই টি-টোয়েন্টিতে সমস্যা নয় এবং বড় কোনো বিষয়ও না। বড় বিষয় হচ্ছে, দলের মধ্যে পাওয়ার হিটার নেই। পাপন বলেন, ‘টি-টোয়েন্টিতে আমাদের অনেক সমস্যা থাকলেও প্রথম সমস্যা পাওয়ার হিটিং। আমাদের জন্য এটা একটা বড় বিষয়। দেখেন টি-টোয়েন্টি আমরা যে উইকেটে খেলেছি সেই উইকেটেই কিন্তু ওয়ানডে খেলেছি। ওয়ানডে জিতলাম অথচ টি-টোয়েন্টিতে দাঁড়াতে পারিনি। পার্থক্য যদি দেখতে যান, একটা পাওয়া যাবে- পাওয়ার হিটিং।
এরপরই সবচেয়ে কঠিন প্রশ্নটির মুখোমুখি হলেন বিসিবি সভাপতি। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, ‘টি-টোয়েন্টিতে বোর্ড কি অধিনায়কত্বে সন্তুষ্ট?‘
জবাবে পাপন স্বীকার করে নেন, এটা কঠিন প্রশ্ন। তিনি বলেন, ‘এটা তো কঠিন প্রশ্ন। আসলে ব্যাপারটা ঠিক তা না। মুমিনুলের অধিনায়কত্ব নিয়েও আমাদের কখনো অসন্তুষ্টি ছিল না। রান পাচ্ছিল না, সেজন্য ওখানে পরিবর্তন করা হয়েছিল। অধিনায়ক মুমিনুলের অধিনায়কত্বে কোনো সমস্যা আমরা দেখিনি। তবে নিশ্চিতভাবে আমরা ওডিআইতে তামিমের অধিনায়কত্ব দেখে খুব ভালো লেগেছে। মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে বেশি কথা হচ্ছে কারণ একটাই, ও নিজে রান পাচ্ছে না বলে। আসল সমস্যাটা এখানে। ও আসলে ওর সঙ্গে কথা বলবো। আমার মনে হয় ও রান পেলেই ঠিক হয়ে যাবে।’
পাপন স্বীকার করে নিচ্ছেন- টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ দুর্বল। সুতরাং, এখানে শুধু অধিনায়ক পরিবর্তন করলেই সব ঠিক হয়ে যাবে না। তিনি বলেন, ‘একে তো খেলাটা (টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ) অস্ট্রেলিয়ায়। বলার অপেক্ষা রাখে না, এটা খুবই টাফ কল। আমাদের যেহেতু এটা উইকার সাইড- অধিনায়ক পরিবর্তন করলেই যে আহামরি পরিবর্তন আসবে, এরকম বিশ্বাস আসেনি আমাদের দলের ভেতরে। আহামরি পরিবর্তনও আপনি দুই তিন মাসে আনতে পারবেন না। তারা খেলার ভেতরেই আছে। কোনো ব্রেক নেই। আসলে ওদের কাছ থেকেই শুনবো বিশ্বকাপ নিয়ে কি করা যায়।’
বোর্ডের পক্ষ থেকে কী করার আছে, বিশ্বকাপে ভালো করার জন্য? পাপন বলেন, ‘আমাদের তরফ থেকে যেটা করা যায় ওই ধরণের কন্ডিশনে খাপ খাওয়ানোর জন্য তাদের সুযোগ করে দেয়া। সেটা আমরা করেছি। আমরা দুটো অনুশীলন ম্যাচ খেলবো। ৪২ দিনের সফর আছে। ত্রিদেশীয় সিরিজ আছে শক্তিশালী দলের বিপক্ষে। নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তানের বিপক্ষে। আমরা যতটুকু পারছি করছি।’
Leave a Reply