নিজস্ব প্রতিবেদক::::পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) স্বাক্ষর জাল করে খাসজমি ৪২ জনের নামে রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে- সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের সার্ভেয়ার হুমায়ুন কবির এই কাজের সঙ্গে জড়িত। এর মাধ্যমে তিনি সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। এ বিষয়ে তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলা ভূমি অফিসের গত ২৮ মার্চ ইস্যুকৃত ১ নম্বর স্মারকে ২২ জন ভূমিহীনের স্থলে ৩১ জন, ২৪ এপ্রিল ২ নম্বর স্মারকে ১২০ জন ভূমিহীনের স্থলে ১৩২ ও ৯ মে ৩ নম্বর স্মারকে ৫৩ জন ভূমিহীনের স্থলে ৭৪ জন ভূমিহীন দেখিয়ে কবুলিয়ত রেজিস্ট্রি করা হয়েছে।
নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ইউএনওর কার্যালয় থেকে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে উপজেলার ১৯৫ জন ভূমিহীনের তালিকা তৈরি করে উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয়ে পাঠানো হয়।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের সার্ভেয়ার হুমায়ুন কবির এ তালিকায় আরও ৪২ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করেন। এই ৪২ জনের নামে ৭২ একর ৬৩ শতাংশ খাসজমি রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়েছে। সার্ভেয়ার হুমায়ুন কবির ইউএনওর স্বাক্ষর স্ক্যান করে নতুন তালিকা সাবরেজিস্ট্রারের কাছে জমা দেন। পরে সাবরেজিস্ট্রার খাসজমি কবুলিয়ত রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন।
সরকারি ওই খাসজমির আনুমানিক মূল্য ২৫ কোটি টাকা। সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, সার্ভেয়ার যে ৪২ জনের নামে কবুলিয়ত রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন, তাঁদের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা করে নিয়েছেন।
এ নিয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে হুমায়ুন কবিরের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু বক্কর সিদ্দিক বরিশালটাইমসকে বলেন, ‘তিনি (হুমায়ুন) কয়েক দিন ধরে কর্মস্থলে আসছেন না। অনুপস্থিতি ও অবৈধ উপায় অবলম্বন করে সরকারি খাসজমি অন্যদের নামে রেজিস্ট্রি করিয়ে দেওয়ার জন্য তাঁকে কারণ দর্শানো নোটিস দিয়েছি।’
ইউএনওর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে- মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীনদের জন্য পাকা ঘর তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এ জন্য প্রত্যেক ভূমিহীনকে ২ শতাংশ করে খাসজমি উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয়ের মাধ্যমে রেজিস্ট্রি করে দেওয়া হয়েছে। যাঁদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে, তাঁদের তালিকা উপজেলা সাবরেজিস্ট্রারের কাছে পাঠানো হয়েছে।
সাবরেজিস্ট্রার তালিকা দেখে রেজিস্ট্রি করবেন, এটাই নিয়ম। সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের সার্ভেয়ার হুমায়ুন কবিরকে ভূমিহীনদের মধ্যে খাসজমি রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এ সুযোগে তিনি অতিরিক্ত ৪২ জনের নামে খাসজমি রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন। এই ৪২ জনের নামে কোনো খাসজমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়নি।
ইউএনও আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন, ‘তালিকা যাচাই না করে খাসজমি রেজিস্ট্রি করেছেন উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার। এ বিষয়ে তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি। জেলা প্রশাসককেও এ ঘটনার বিস্তারিত লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।’
এ বিষয়ে সাবরেজিস্ট্রার রেহেনা পারভীন বলেন, ‘ভূমিহীন-গৃহহীনদের দলিল ও ইউএনওর সই দেখে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছি। সরল বিশ্বাসের কারণে তালিকা যাচাই করিনি এবং প্রতিটি পাতা উল্টিয়ে দেখিনি। ওই সব কবুলিয়ত দলিল বাতিল করার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
Leave a Reply