জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বেড়েছে পরিবহন ভাড়া। বাড়তি ভাড়া কার্যকর হলেও রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় গণপরিবহন সংকটে পড়েছে মানুষ। আবার কোথাও কোথাও সরকারের নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত আদায় করা হচ্ছে। এ নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে তর্কবিতর্ক হয়েছে পরিবহন শ্রমিকদের। এমনকি হাতাহাতির মতো ঘটনাও ঘটছে। ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। অনেকে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন।
রোববার (৭ আগস্ট) সকালে রাজধানীর শনির আখড়া, ধোলাইপাড়, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, গুলিস্তান ও পল্টন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
চিটাগাং রোড থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত চলে শ্রাবণ পরিবহনের বাস। এই বাসে উঠলে দেখা যায়, নির্ধারিত নতুন ভাড়ার চেয়ে পাঁচ টাকা বেশি নিচ্ছেন হেলপার। এ নিয়ে হেলপারের সঙ্গে যাত্রীদের কথা কাটাকাটিও হয়।
একটি বেসরকারি কোম্পানিতে অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত সোহেল রহমান। তিনি বলেন, সরকার তেলের দাম বাড়ানোয় বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে বাসগুলো। মাতুয়াইল থেকে উঠলাম, বললো গুলিস্তান ৩০ টাকা। অথচ আগে ২০ টাকা ভাড়া ছিল। কি আর করা বাধ্য হয়ে অনেক বেশি ভাড়া দিয়েই যেতে হচ্ছে। আমরা সাধারণ মানুষ কষ্টে পড়ে গেছি। এভাবে আর কত চলবে। বেতন পাই কত টাকা। কিন্তু প্রতিনিয়ত খরচ বাড়ছেই। বেতন তো সেভাবে বাড়ছে না।
গুলিস্তান থেকে মিরপুরগামী শিকড় পরিবহনের বাসেও দেখা গেছে পাঁচ টাকা বেশি ভাড়া নিতে। সেই সঙ্গে অন্যান্য সময়ের থেকেও তাদের বাস সড়কে দেখা গেছে কম।
পরিবহনের সংকটের বিষয়ে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত সামসুন্নাহার নামে একজন বলেন, কাজলা থেকে অন্য সময় সকাল সাড়ে ৮টার পর বের হই। কিন্তু বাস সংকটের কথা চিন্তা করে আজ ৮টায় বের হয়েছি। তবুও বাস পাচ্ছি না। একটা বাস আসলে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ছে। আমি মহিলা মানুষ, আমার তো আর সেভাবে ওঠা সম্ভব না। সেজন্য এক ঘণ্টা দাঁড়িয়েই আছি।
বাস সংকট কেন জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিকড় পরিবহনের শ্রমিক জাগো নিউজকে বলেন, ‘মূলত ভাড়া বাড়লে মানুষ তা মাইনা নিতে চায় না। এখন লস দিয়া তো আর গাড়ি চালাইতে পারুম না। সেজন্য ভাড়া বাড়লে দু-একদিন গাড়ি বন্ধ রাখে। তাইলে মানুষ কিছু মাইনা নেয়। নইলে ভাড়া নিয়া আমগো লগে মারামারি করে।’
এদিকে আবার উল্টো চিত্র দেখা গেছে কোনো কোনো বাসে। আগের মতো ভাড়া নেওয়া এমন একটি পরিবহনের হেলপার বলেন, ‘আসলে আমরা কিছুদিন আগেও একবার তেলের দাম বাড়ায় ভাড়া বাড়াইছিলাম। তখন একটু বেশি বাড়ানো হইছিল। এখন যে নতুন ভাড়া ঠিক করছে, আগের বাড়তি ভাড়ার সঙ্গে সেটা ঠিক আছে। তাই আমাদের ভাড়া বাড়ানো লাগে নাই। আমরা সেজন্য আগের ভাড়াই নিতাছি।’
এদিকে দেশে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে শনিবার গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।
নির্ধারিত নতুন ভাড়া অনুযায়ী মহানগরে প্রতি কিলোমিটারে বাস ও মিনিবাসে ৩৫ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। দূরপাল্লায় বাসভাড়া বাড়িয়েছে ৪০ পয়সা। ফলে এখন থেকে মহানগর পর্যায়ে কিলোমিটারে বাসে ২ টাকা ৫০ পয়সা, মিনিবাসে ২ টাকা ৪০ পয়সা ভাড়া হবে। দূরপাল্লার বাসে ভাড়া হবে কিলোমিটারপ্রতি ২ টাকা ২০ পয়সা।
আগে ভাড়া ছিল মহানগর পর্যায়ে কিলোমিটারে বাসে ২ টাকা ১৫ পয়সা, মিনিবাসে ২ টাকা ১০ পয়সা ও দূরপাল্লার বাসে ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি ১ টাকা ৮০ পয়সা।
এর আগে শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাতে ডিজেল, পেট্রল, কেরোসিন, ও অকটেনের দাম বাড়ায় সরকার। এতে করে প্রতি লিটার ডিজেলে ৩৪, কেরোসিনে ৩৪, অকটেনে ৪৬ ও পেট্রলে ৪৪ টাকা বেড়েছে।
দাম বাড়ার পর প্রতি লিটার ডিজেল ১১৪ টাকা, কেরোসিন ১১৪ টাকা, অকটেন ১৩৫ টাকা ও প্রতি লিটার পেট্রল ১৩০ টাকায় কিনতে হবে।
আগে ভোক্তা পর্যায়ে খুচরা মূল্য ছিল প্রতি লিটার ডিজেল ৮০ টাকা, কেরোসিন ৮০ টাকা, অকটেন ৮৯ টাকা ও পেট্রল ৮৬ টাকা।
Leave a Reply