নিজস্ব প্রতিবেদক::: বরিশালে পর্যটকবাহী একটি মাইক্রোবাস আটকে ডিবি পরিচয়ে ২০ হাজার টাকা আদায় করার অভিযোগ উঠেছে। সোমবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে রাত সোয়া ১০টার মধ্যে নগরীর বাংলাবাজার মোড় থেকে আমতলা পানির ট্যাংকি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, ঢাকা থেকে কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রে বেড়াতে গিয়েছিলেন ১১ জন বন্ধু ও সহকর্মী। ঢাকায় ফেরার পথে বরিশাল নগরীতে তাদের মাইক্রোবাস তল্লাশি করে ৪ পিস বিয়ার উদ্ধার করে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয় দেওয়া কয়েকজন ব্যক্তি।
হাতকড়াও পরানো হয় তাদের। পরে থানায় সোপর্দ করার ভয় দেখিয়ে প্রথম ১ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত ২০ টাকায় রফাদফা করে বিকাশ নম্বরের মাধ্যমে টাকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। পর্যটকদের এভাবে হয়রানি করা হলে কুয়াকাটায় পর্যটকরা নিরুৎসাহিত হবেন বলে আশঙ্কা সুশীল সমাজ নেতৃবৃন্দের।
এ বিষয়ে তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার। ভুক্তভোগী ১১ জন ঢাকার গাজীপুরের কোনবাড়ির একটি গার্মেন্টস কারখানার সহকর্মী ও বন্ধু। তাদের একজনের বাড়ি বরিশাল নগরীর দক্ষিণ আলেকান্দা এলাকায়।
আবদুল্লাহ নামে ওই পর্যটক জানান, গত রবিবার রাত ১১টার দিকে তারা ১১ জন বন্ধু ও সহকর্মী একটি মাইক্রোবাসে ঢাকা থেকে কুয়াকাটার উদ্দেশে রওনা দেন। বরিশালে যাত্রা বিরতি শেষে সোমবার দুপুর ২টার দিকে কুয়াকাটা পৌঁছেন তারা।
দিনভর কুয়াকাটা অবস্থান শেষে ওইদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে বরিশাল নগরীর আলেকান্দায় পৌঁছে আবারও যাত্রা বিরতি করেন তারা। দীর্ঘ যাত্রায় ক্লান্ত হয়ে পড়েন তাদের কয়েকজন। তাদের সতেজ করতে নগরীর একটি অভিজাত ক্লাব থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকায় ৪টি বিয়ার কিনে মাইক্রোবাসে পুলিশ লাইন সড়ক হয়ে দক্ষিণ আলেকান্দার দিকে যাচ্ছিলেন তাদের অপর তিনজন বন্ধু।
রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাংলাবাজার মোড় এলাকা অতিক্রমকালে দুটি মোটরসাইকেল আরোহী কয়েকজন ব্যক্তি তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি গতিরোধ করে। গাড়িতে অবৈধ জিনিস আছে বলে ডিবি পুলিশ পরিচয়দানকারীরা গাড়ি তল্লাশি করতে চায়।
এ সময় তাদের তিনজনের দুইজনের হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়ে তিনজনের হাতেই হাতকড়া পরিয়ে দেন তারা। থানায় সোপর্দ করার ভয় দেখিয়ে ১ লাখ টাকা দাবি করে তাদের কাছে। তারা এত টাকা দেয়ার সামর্থ্য নেই জানালে অর্ধেক কমিয়ে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে ডিবি পরিচয়দানকারীরা।
দর-কষাকষির একপর্যায়ে তাদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। একপর্যায়ে তারা বাংলাবাজার মোড় থেকে তাদের মাইক্রোবাসসহ আমতলা পানির ট্যাংকি এলাকায় নিয়ে যান। শেষপর্যন্ত এক বন্ধুর সহায়তায় ফোন করে আবদুল্লাহ তার ব্যক্তিগত বিকাশ নম্বরে ২০ হাজার টাকা এনে ডিবি পরিচয়দানকারীদের দেওয়া ০১৭১৮৬২২৮** নম্বর বিকাশে সেন্ড মানি করেন। এ সময় ওই ৪ পিস বিয়ার নিয়ে যায় ডিবি পরিচয়দানকারীরা। পর্যটকদের আটকিয়ে অর্থ আদায়ের ঘটনা দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি প্রফেসর শাহ সাজেদা। তিনি বলেন, মানুষ আনন্দ করতে পর্যটন কেন্দ্রে যায়।
তাদের সাথে এমন ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিত। যারা হেনস্তা হয়েছেন, তারা আর কুয়াকাটায় আসবেন না। আর যারা এ ঘটনাটি শুনবেন, তারাও কুয়াকাটা যেতে নিরুৎসাহিত হবেন। প্রফেসর শাহ সাজেদা আরও বলেন, এ ধরনের সংঘবদ্ধ চক্র আছে। তারা প্রায়ই মানুষকে বেকায়দায় ফেলে অর্থ হাতিয়ে নেয়। তাদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের দাবি জানান তিনি।
সোমবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে সোয়া ১০টার মধ্যে নগরীতে ডিবির কোনো দল রাস্তায় ছিল না বলে দাবি করেন নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার হুমাউন কবির। এ বিষয়ে মুঠোফোনে বিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, ভুক্তভোগীদের একজনের সাথে মুঠোফোনে কথা বলে তিনি পুরো বিষয়টি জেনেছেন। ঘটনাটি তদন্ত চলছে। যে বা যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের আইনের আওতায় আনার কথা বলেন তিনি।
Leave a Reply