নিজস্ব প্রতিবেদক ।। তথ্য দিলেও অভিযান চালাতে অনীহার অভিযোগ বরিশাল সদর নৌ থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে। আর তার এই অনীহার কারনেই বড় কোন সাফল্য নেই সদর নৌ থানা পুলিশের। এককথায় অনিয়মের বেড়াজালে বন্দি হয়ে পড়েছে বরিশাল সদর নৌ থানা পুলিশের সফলতা। অথচ সদর নৌ থানায় ওসি হিসেবে প্রায় ৩ মাস অতিবাহিত করেছেন তিনি। কিন্তু কাঙ্খিত সাফল্য অধরাই রয়ে গেছে।
উল্টো তার অদক্ষতার কারনে বর্তমানে সদর নৌ থানা পুলিশের আভিযানিক কর্মকান্ড বিতর্কের মুখে পড়েছে। এমতাবস্থায় সুনাম ক্ষুণ্নের পথে সদর নৌ পুলিশ। ওসি হিসেবে সদর নৌ থানায় যোগদানের পরপরই আব্দুল জলিলের নেতৃত্বে মা ইলিশ রক্ষায় অভিযানে নামে সদর নৌ থানা পুলিশের একাধিক টিম।
কিন্তু তার অদক্ষতা, গাফোলতি, অভিযানের মানসিকতা ও সমন্বয়হীনতা না থাকায় একপ্রকারে সাফল্যহীন ছিল সদর নৌ থানা পুলিশ। তার অধীনে সাফল্যের পরিবর্তে উল্টো অভিযানে আটককৃত মা ইলিশ নদীতেই বিক্রী, আটককৃত অবৈধ কারেন্ট জাল বিক্রীর উদ্দেশ্যে ট্রলারে দেয়ারও বিস্তর অভিযোগ উঠে।
ট্রলারভর্তি অবৈধ কারেন্ট জালের ছোট একটি ভিডিও ক্লিপ সংরক্ষিত রয়েছে। কিন্তু অন্যদিকে মা ইলিশ রক্ষার অভিযানে কাউনিয়া থানা পুলিশ, কোস্টগার্ড ও রাবের সাফল্য ছিলো চোখে পড়ার মতো।
তথ্যানুসন্ধান সূত্রে জানাগেছে, বর্তমানে প্রতিদিন মধ্যরাতে দক্ষিনাঞ্চলের বিভিন্ন স্থান থেকে দেদারছে জাটকা, অবৈধ জেলি চিংড়ি ও ভাটার পোনা পাচার হচ্ছে। এক্ষেত্রে দপদপিয়া ব্রিজের ঢালে কোন কর্মপরিকল্পনা ছাড়াই দায়সারানো অভিযান চালানো হচ্ছে। যার কোন সফলতা নেই বললেই চলে স্থানীয়রা এটাকে লোক দেখানো অভিযান বলে বিদ্রুপও করেছেন।
এদিকে সদর নৌ থানা লঞ্চঘাটের অভ্যন্তরীনে হওয়ার পরেও প্রকাশ্যে লঞ্চঘাট এলাকাতে চলছে গাঁজা সেবন, বিক্রী, পরিবহন ও ছোট লঞ্চে বসছে জুয়ার আসর। কিন্তু ওসি আব্দুল জলিল রয়েছেন নীরব ভূমিকায়। কি কারনে তার এই নীরাবতা? স্থানীয় জনমনে এমনই প্রশ্ন। সবচেয়ে বিস্ময়কর হলো নৌ থানা এলাকার থেকে গাঁজার বড় চালান ধরে নিয়ে যায় ডিবি পুলিশ ও কোতয়ালী থানা পুলিশ।
কিন্তু নৌ থানার কোন ভ্রুক্ষেপই নেই এসব অভিযানের ব্যাপারে। তার এই পরিকল্পনাহীন কর্মকান্ডের কারনেই লঞ্চঘাট এলাকা অবৈধ কর্মকান্ডের জোন হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। অথচ বিগতদিনে দায়িত্বপালনকারি ওসিদের কর্মতৎপরতায় এই নৌ পুলিশই লঞ্চঘাট এলাকা থেকে বিপুল পরিমান ইয়াবা, গাঁজার চালান আটক করতে সক্ষম হয়েছে। এদিকে বর্তমানে জাটকা ইলিশের অভিযান চললেও নদীতে অভিযানের কোন তোড়জোর নেই নৌ পুলিশের। ফলে নদীতে অবাধে অবৈধ কারেন্ট জাল দিয়ে ইলিশ সম্পদ ধ্বংস করে চলেছেন অসাধু জেলে ও ব্যবসায়ীরা। আর নদীতে অভিযানের বরাদ্দ তেল অভিযান না করেই ভুয়া ভাউচার দিয়ে স্পিড ড্রাইভার রফিকের যোগসাজশে পুরো বরাদ্দের অর্থ আত্মসাৎ করেন ওসি আব্দুল জলিল বলে বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেন।
অথচ বিগত বছরে নদীথেকে প্রতিদিনই বিপুল পরিমানে কারেন্ট জাল, চরঘরা জাল, পাইজালসহ বিভিন্ন প্রকারের অবৈধ জাল জব্দ, অধিক সংখ্যক অভিযুক্ত জেলে আটক ছিলো চোখে পড়ারমতো। কিন্তু বর্তমান ওসির সময়ে তা শুধু গল্পের মতো।
এছাড়াও রাতের আঁধারে নৌ পুলিশের নাকের ডগায় পুরো কীর্তনখোলা জুড়ে অবৈধ বাল্কহেড এর ছড়াছড়ি। কিন্তু এসব অভিযান থেকে একপ্রকার নিষ্কৃীয়তা ও আত্মগোপনে সদর নৌ থানা পুলিশ। কিন্তু কি কারনে এই নীরাবতা, কিসের বিনিময়ে এসব অভিযানে ব্যথর্তার পরিচয় দিচ্ছে নৌ পুলিশ? এমনটাই প্রশ্ন রেখেছেন সচেতন মহল। তবে বরিশাল সদর নৌ থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল জলিলকে তার ব্যবহৃত (সরকারি) মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। কিছুক্ষণ পরে তিনি কল দিলে সাংবাদিক পরিচয় শুনে রিরক্তি প্রকাশ করে সংযোগটি কেটে দেন।
বরিশাল সদর নৌ থানা পুলিশের এরূপ নিষ্কয়তায় নৌ পুলিশের ডিআইজি ( দক্ষিণ বিভাগ) বলেন, নৌ পুলিশ সর্বদা যেকোন অনিয়ম-অপরাধ দমনে তৎপর রয়েছে। তবে গাফোলতির বিন্দুমাত্র সুযোগ নেই। কারো বিরুদ্ধে এরকম অভিযোগ প্রমানিত হলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে নৌ পুলিশ প্রধান (অতিরিক্ত আইজিপি) শফিকুল ইসলাম নৌ পুলিশ বরিশাল অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) কফিল উদ্দিনকে অবগত করার জন্য বলেন। এ বিষয়ে নৌ পুলিশ বরিশাল অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) কফিল উদ্দীন জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। কিভাবে অভিযান আরো বেগবান করা যায় সেদিকে তৎপর রয়েছে নৌ পুলিশ। কারো বিরুদ্ধে গাফোলতির অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply