১৯ বছর কারাবাসের পর ছাড়া পাচ্ছেন কুখ্যাত ফরাসি ‘ক্রমিক খুনি’ চার্লস শোভরাজ। তিনি নেপালের কারাগারে আছেন। গতকাল বুধবার দেশটির সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে মুক্তির আদেশ দিয়েছেন। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তাঁকে নিজ দেশে পাঠাতে হবে।
১৯৭৫ সালে নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে দুই বিদেশি পর্যটককে খুনের অভিযোগে ১৯ বছরের সাজা হয় শোভরাজের। তাঁরা হলেন—আমেরিকার কোনি জো ব্রোনজিক ও তাঁর বন্ধু লরেন্ট ক্যারিরি।
সত্তরের দশকে ভারত ও থাইল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশে আসা পশ্চিমা পর্যটককে হত্যার অভিযোগ রয়েছে চার্লস শোভরাজের বিরুদ্ধে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁর হাতে নিহত পর্যটকদের বিকিনি পরা অবস্থায় পাওয়া যেত। তাই তাঁকে ‘বিকিনি কিলার’ও বলা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক জালিয়াতির অভিযোগও আছে। দুই মার্কিন পর্যটককে হত্যার দায়ে ২০০৩ সালে শোভরাজের ২১ বছরের কারাদণ্ড হয়। এর আগে ১৯৭৬ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ভারতে কারাবন্দী ছিলেন।
ক্রমিক খুনি চার্লস শোভরাজকে বয়সের কারণেই ছাড়া হচ্ছে। ১৯৭০ থেকে ১৯৮০ সালে শোভরাজের নাম পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল। দক্ষিণ এশিয়ার একাধিক দেশে অন্তত ২০ জন বিদেশি ব্যাকপ্যাকার পর্যটককে হত্যার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। শোভরাজ ভারতে প্রথম গ্রেপ্তার হন। দিল্লির তিহার কারাগার থেকে পালিয়ে যান তিনি। পরে আবার গ্রেপ্তার হন। পরে নেপালে আজীবন কারাবাসে ছিলেন।
নেপালের সুপ্রিম কোর্টে শোভরাজের আইনজীবী মুক্তির দাবি জানিয়ে বলেন, ৯৫ শতাংশ কারাবাসের সাজা ভোগ করেছেন শোভরাজ। বয়সের কারণে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হোক। তা ছাড়া তাঁর আচরণও ভালো। শোভরাজের বয়স এখন ৭৮।
শোভরাজকে নিয়ে সম্প্রতি নেটফ্লিক্সে একটি সিরিজ হয়েছে। বিবিসি ও নেটফ্লিক্সের যৌথ প্রযোজনার ওই সিরিজে শোভরাজের জীবন দেখানো হয়েছে। এর আগে শোভরাজ ও তাঁর ক্রমিক হত্যা নিয়ে বইও আছে। আজ বৃহস্পতিবারই কাঠমান্ডুর কারাগার থেকে মুক্তি পেতে পারেন শোভরাজ।
আফগানিস্তান, ভারত, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, নেপাল, ইরান ও হংকংয়ে অন্তত ২০টি হত্যার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন শোভরাজ। অধিকাংশ সময়ই ব্যাকপ্যাকার পর্যটকদের লক্ষ্য বানাতেন তিনি। এমনভাবে খুন করতেন, যাতে হত্যার কোনো চিহ্ন না থাকে। ফরাসি নাগরিক হলেও একাধিক দেশের জাল পাসপোর্ট ছিল তাঁর কাছে। সত্তরের দশকের মাঝামাঝি সময়ে থাইল্যান্ডে প্রথম তাঁর নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। পাতায়ায় ছয়জন বিদেশিকে হত্যার অভিযোগেই এ পরোয়ানা জারি হয়। কিন্তু তাঁকে থাই পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। শোভরাজ ১৯৭৬ সালে ভারতে প্রথম গ্রেপ্তার হন। এরপর প্রায় দুই দশক ছিলেন কারাগারে। ১৯৮৬ সালে পালিয়েছিলেন কারাগার থেকে। কিছুদিনের মধ্যেই আবার গ্রেপ্তার হন। ভারতে পুরো সময় শাস্তি ভোগ করার পর ২০০৩ সালে নেপালে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন শোভরাজ। সেখানে গিয়ে আবার গ্রেপ্তার হন। এক মার্কিন ও এক কানাডিয়ান নাগরিককে হত্যার মামলায় সেখানে তাঁর আজীবন কারাদণ্ড হয়। শেষ পর্যন্ত বয়সের কারণে মুক্তি পাচ্ছেন শোভরাজ। নেপালের সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছেন, তাঁকে ফ্রান্সে ফিরে যেতে হবে। নেপালে তিনি ১৫ দিনের বেশি থাকতে পারবেন না।
Leave a Reply