নিজস্ব প্রতিবেদক:::পুলিশের কাছে ধরা পড়ার পর এক ডাকাত সর্দার আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সহযোগী হিসাবে প্রভাবশালী কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার নাম বলেছে। যাদের নাম বলা হয়েছে তারা সবাই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জে চলছে তোলপাড়।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে ডাকাতির ভাগ দেওয়া থেকে শুরু করে নিয়মিত তাদের চাঁদা দিতে হয় বলে তথ্য দিয়েছে ওই ডাকাত। যাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ তারা অবশ্য তা অস্বীকার করেছেন। থানার ওসির সঙ্গে বিরোধ আর রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্রের কারণে এসব মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে বলে দাবি তাদের।
বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি থানার ওসি শফিকুল ইসলাম। পরিপূর্ণ তদন্ত শেষ হওয়ার পরই কে দোষী আর কে নয় তা বলা যাবে বলে জানান তিনি। জানা যায়, বহু বছর ধরেই ডাকাত কবলিত এলাকা হিসাবে চিহ্নিত মেঘনা পাড়ের হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা।
বরিশালের উত্তর-পূর্ব সীমানার এই দুই উপজেলায় প্রায় বছর জুড়েই ঘটে ডাকাতি। কখনো লোকালয়ে আবার কখনো মেঘনা ও তার শাখা নদীগুলোয় হানা দেয় ডাকাতরা। লুটে নেয় সাধারণ মানুষ আর নৌপথের যাত্রীদের অর্থসম্পদ।
নদী তীরের বাসিন্দারা জানান, মেঘনা পারের বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে ঘন ছন বন (এক ধরনের লম্বা ঘাসের জঙ্গল)। এসব বনেই মূলত লুকিয়ে থাকে ডাকাতরা। তীরে বাঁধা থাকে তাদের ট্রলার। বন থেকে বেরিয়ে ট্রলারে চেপে ডাকাতির পর আবার ঢুকে যায় বনে।
সম্প্রতি এই ডাকাতদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযানে নামে মেহেন্দীগঞ্জের পুলিশ। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে গ্রেফতার হয় আন্তঃজেলা ডাকাত দলের ৬ সদস্য। এদের দেওয়া তথ্যে ৭ ডিসেম্বর গ্রেফতার হয় কুখ্যাত ডাকাত সর্দার নাঈম দেওয়ান। মেহেন্দীগঞ্জের দড়ির চর খাজুরিয়া ইউনিয়নের চুন্নু দেওয়ানের ছেলে নাঈমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হত্যা ও ডাকাতির ১৪টি মামলা রয়েছে।
গ্রেফতারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সহযোগী হিসাবে ক্ষমতাসীন দলের পাঁচ নেতার নাম প্রকাশ করে সে। ডাকাত সর্দার নাঈমকে গ্রেফতারের ঘটনায় মেহেন্দীগঞ্জে যান বরিশালের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন।
তার উপস্থিতিতে সাংবাদিকদের সামনে আনা হয় নাঈমকে। সে সময় নানা প্রশ্নের উত্তরে সবার সামনেই পাঁচ নেতার নাম বলে নাঈম। ওই সময় গোপনে ধারণ করা একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
ভিডিওতে দেখা যায়, ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের নাম উল্লেখ করে তাদের নিয়মিত ডাকাতির ভাগ দেওয়ার পাশাপাশি মাসিক ভিত্তিতে টাকা দিতে হয় বলে তথ্য দেয় নাঈম। সেই পাঁচ নেতা হলেন-দড়িরচর-খাজুরিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সালাম দেওয়ান। তিনি স্থানীয় সংসদ-সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা পঙ্কজ দেবনাথের অনুসারী।
৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি সদস্য শহিদ দেওয়ান। জেলা গ্রুপের অনুসারী হিসাবে পরিচিত ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক মোশাররফ আকন।
অপর দুজন হলেন বাচ্চু ও কাশেম দেওয়ান। এরা ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হলেও দলীয় কোনো পদ-পদবিতে নেই। ভাইরাল হওয়া ভিডিওর ব্যাপারে জানতে চাইলে সালাম দেওয়ান বলেন, এটা জেলা গ্রুপের ষড়যন্ত্র। আমি এমপির গ্রুপ বলে আমার বিরুদ্ধে এসব মিথ্যা অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে।
তাছাড়া থানার ওসি শফিকুল ইসলামের সঙ্গে আমার বিরোধ রয়েছে। আমি তার বিরুদ্ধে একবার সাক্ষী দিয়েছিলাম। তার প্রতিশোধ হিসাবে গ্রেফতার হওয়া ডাকাত দিয়ে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।
অপর অভিযুক্ত শহীদ দেওয়ান বলেন, এটা সবার জানা যে এখানে আওয়ামী লীগে দুই গ্রুপ। স্থানীয় এমপি পঙ্কজ দেবনাথ ও জেলা। জেলা বলতে জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা। আমি এমপি গ্রুপের বলে ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছি। তাছাড়া ওসিও আমাদের বিরুদ্ধ পক্ষ।
এই উপজেলায় আমি বহু চোর-ডাকাত ধরে থানায় দিয়েছি। আজ আমাকে বলা হচ্ছে ডাকাতের সহযোগী। সবই মিথ্যা বানোয়াট। মোশাররফ আকন বলেন, গ্রেফতার হওয়া এই নাঈম দেওয়ান কে? শহীদ দেওয়ানের আপন ভাতিজা।
আমার বংশের সবার ব্যাপারে খোঁজ নিন। দেখুন আমার আত্মীয়স্বজনের মধ্যে কেউ কোনো অপকর্মের সঙ্গে আছেন কিনা। এই শহীদ দেওয়ানের পরিবারে এমন অনেকে আছে যারা ডাকাতিসহ নানা অপরাধে বিভিন্ন সময় গ্রেফতার হয়েছে। আমি বহু চোর-ডাকাত ধরে পুলিশে দিয়েছি। এসবই এমপি গ্রুপের ষড়যন্ত্র।
এ বিষয়ে মেহেন্দীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত ডাকাত নাঈমকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হয়নি। রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছে। রিমান্ডে পাওয়া গেলে হয়তো অভিযোগ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিও নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কে কখন কোথায় কী ভিডিও করেছে আমার জানা নেই। তাছাড়া তদন্ত পুরোপুরি শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করাও সম্ভব নয়। তদন্ত শেষে আদালতে রিপোর্ট দাখিল করা হলে আসল সত্যটা কি তা সবাই জানতে পারবে। বিরোধের কারণে নাম জড়ানোর অভিযোগ প্রশ্নে তিনি বলেন, দেশের আইন-কানুন এতটা দুর্বল নয় যে চাইলেই কাউকে কোনো মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো যাবে। যারা এসব বলছে তারা না বুঝে বলছে।
Leave a Reply