দেশে বিপজ্জনক অবস্থায় চলে গেছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। প্রতিদিনই বিভিন্ন হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় আরও এক হাজার ৫০৩ হাসপাতালে ভর্তি ও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু রোগী ভর্তির সংখ্যা ৪৪ হাজার (৪৪,২০৫) ছাড়িয়ে গেছে। মৃতের সংখ্যা ২২৯ জনে পৌঁছেছে। রোগীর চাপ সামলাতে ঢাকার হাসপাতালগুলো হিমশিম খাচ্ছে। শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া ডেঙ্গু সংক্রমণবিষয়ক তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায় বছরের প্রথম সাত মাসেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর এই সংখ্যা দেশে তৃতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১৯ সালে এক লাখ এক হাজার এবং ২০২২ সালে ৬৮ হাজারের বেশি মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আরও এক হাজার ৫০৩ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ সময় মৃত্যু হয়েছে আরও চারজনের। তাতে এ বছর ২২৯ জনের মৃত্যু হলো ডেঙ্গুতে। এর আগে ২০২২ সালে ২৮১ জনের মৃত্যু হয়েছিল এডিস মশাবাহিত এ রোগে। শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন থাকায় ২৪টি হাসপাতাল ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি এবং মৃত্যুর তথ্য দেয়নি। অনেক জেলা থেকেও শুক্রবার তথ্য আসেনি। ফলে শুক্রবারের যে প্রতিবেদন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দিয়েছে, তাতে দিনের সব তথ্য আসেনি। বরাবরের মতোই শুক্রবারের বাকি তথ্য শনিবারের প্রতিবেদনে সন্নিবেশ করা হবে। তাতে এক দিনে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় উল্লম্ফন দেখা যাবে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে ৮২ জন, মিটফোর্ড হাসপাতালে ১০৫ জন, কুমিটোলা জেনারেলে ৭৪ এবং ডিএনসিসি কোভিড হাসপাতালে ৮৬ জন ও সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ১১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া বিভাগীয় শহরের মধ্যে ঢাকা শহর ব্যতীত গত ২৪ ঘণ্টায় এই বিভাগে ভর্তি হয়েছেন ১৪৫ জন, ময়মনসিংহে ৭৩ জন, চট্টগ্রামে ৬১ জন, খুলনায় ৬২ জন, রাজশাহীতে ৩৬ জন, রংপুরে ১৮ জন, বরিশালে ১৮০ জন এবং সিলেটে ২১ জন ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে জুলাই মাসের ২৮ দিনে ভর্তি হয়েছেন ৩৬ হাজার ২২৭ জন। জুলাইয়ে (প্রথম ২৮ দিনে) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দৈনিক গড়ে এক হাজার ২৯৩ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। দৈনিক গড়ে মৃত্যু ছয়জনের বেশি। গত এক দিনে ভর্তি রোগীদের মধ্যে ঢাকায় ৯০৭ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৫৯৬ জন রোগী। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন আট হাজার ৬৭৬ জন রোগী। তাদের মধ্যে ঢাকায় চার হাজার ৮৭০ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে তিন হাজার ৮০৬ জন। জুন মাসে পাঁচ হাজার ৯৫৬ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, মৃত্যু হয়েছিল ৩৪ জনের। জুলাইয়ের সেই সংখ্যা ইতোমধ্যে ছয়গুণ বেড়ে গেছে। মাসের হিসাবে জানুয়ারিতে ৫৬৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ জন, মার্চে ১১১ জন, এপ্রিলে ১৪৩ জন, মে মাসে এক হাজার ৩৬ জন এবং জুন মাসে পাঁচ হাজার ৯৫৬ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে জানুয়ারিতে ছয়জন, ফেব্রুয়ারিতে তিনজন, এপ্রিলে দুজন, মে মাসে দুজন এবং জুন মাসে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এ বছর এডিস মশা শনাক্তে চালানো জরিপে ঢাকায় মশার যে উপস্থিতি দেখা গেছে, তাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এ অবস্থায় সামনে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়ার আশঙ্কা করেছেন তারা। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এ বছর যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে ভুগছিলেন এবং শক সিনড্রোমে মারা গেছেন। এডিস মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে গত বছর ৬২ হাজার ৩৮২ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হন। তাদের মধ্যে রেকর্ড ২৮১ জনের মৃত্যু হয়।
Leave a Reply