রাফিজার বয়স সাড়ে চার মাস। বেশ হাসি-খুশিই ছিল। বুকের দুধ পান করা আর ঘুমানোর সময়টুকু বাদ দিয়ে যতক্ষণ জেগে থাকত ততক্ষণ হাত-পা নেড়ে খেলা করত। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে খুব বিরক্ত করছে সে। ঠাণ্ডা লেগেছে তার। বাবা পাশের এক ওষুধের দোকান থেকে ঠাণ্ডাজনিত ওষুধ এনে খাওয়াচ্ছে। কিন্তু তারপরও ভালো হচ্ছে না। ঠিকমত ঘুম না হওয়ায় কান্নাকাটি করছে সে। এক পর্যায়ে মেয়ে একেবারে নেতিয়ে পড়ে। এ অবস্থা দেখে তারা দ্রুত পাশের একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানান, রাফিজা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। দ্রুত তাকে আইসিউতে ভর্তি করাতে হবে। প্রায় ১০ দিন আইসিউতে চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠে রাফিজা। তারপর কেবিনে দেয়া হয় তাকে। সব মিলিয়ে ১৭ দিন পর বাসায় ফিরে রাফিজা।
এক বছর বয়সী মিথিলার ঘটনাও অনেকটা রাফিজার মত। কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই মিথিলার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। নগরীর খিলগাঁও এলাকার একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে ভর্তি করা হয় তাকে। আইসিউতে সাত দিন রাখার পর কিছুটা স্থিতিশীল হয়। তারপর আরো পাঁচ দিন কেবিনে রেখে পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার পর মা-বাবা মিথিলাকে বাসায় নিয়ে যায়।
শীতকালে প্রায়ই শিশুরা ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। এসময় সকালে খুব ঠাণ্ডা থাকে। সন্ধ্যা বা রাতে আবার ঠাণ্ডা বেড়ে যায়। যার ফলে শিশুরা এ তাপমাত্রার সাথে খুব বেশি খাপ খাওয়াতে পারে না।
ঢাকা শিশু হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মনির হোসেন বলেন, শিশুরা ঠাণ্ডাজনিত যে কয়েকটি রোগে ভোগে তার মধ্যে কাশি অন্যতম। বেশ কয়েক রকমের কাশি রয়েছে। যেমন- ক্রুপ কাশি, হুপিং কাশি এবং শুকনো কাশি। ক্রুপ কাশিতে শিশুর শ্বাসনালি ফুলে যায়। শুকনো কাশি মূলত ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণের জন্য হয়ে থাকে। এছাড়া হুপিং কাশি হলে সাধারণত শিশুরা বার বার কাঁশতে থাকে। এ কাশি দীর্ঘক্ষণও হতে পারে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সাইদুর রহমান সোহাগ বলেন, শিশুদের ঠাণ্ডা লাগতে পারে। এজন্য খুব বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তবে তা যদি এক সপ্তাহের বেশি থাকে তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
শীতে শিশুর শরীর গরম কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে রাখার পরামর্শ দেন এই বিশেষজ্ঞ। এছাড়াও শিশুদের সংক্রমণ প্রতিরোধ টিকা প্রদানেরও পরামর্শ দেন তিনি। শিশুর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য যথাযথ পুষ্টি নিশ্চিত করা, বুকের দুধ পান করানো এবং প্রচুর শক্তি সমৃদ্ধ বাড়তি খাবার দেয়া প্রয়োজন। অভিভাবকদেরকে অবশ্যই শিশুকে পরিচ্ছন্ন থাকার উপায়গুলো শেখাতে হবে এবং নিজেদেরকেও তা পালন করতে হবে। ছোটো থেকেই শিশুকে শেখাতে হবে যে হাঁচি এলে টিস্যু বা জামার হাতা দিয়ে নাক আড়াল করে ধরে হাঁচি দিতে হবে, ব্যবহার শেষে টিস্যুটাকে ফেলে দিতে হবে এবং নিয়মিত হাত ধুতে হবে। বড়দেরও যেকোনো ছোটো শিশুকে ধরার আগেই ভালোমতো হাত ধুতে হবে। শিশুরা যেসব জিনিস বেশি ধরে যেমন- খেলনা, টেবিল ইত্যাদি সাবান এবং পানি দিয়ে নিয়মিত মুছে জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে। এর পাশাপাশি বাসায় যেন কেউ ধূমপান না করে এবং কোনো কিছু থেকে বেশি ধোঁয়া উৎপন্ন না হয় সেদিকে খেয়ল রাখা। প্রতিকারের চাইতে প্রতিরোধ সবসময়ই উত্তম। নিউমোনিয়ার মতো মারাত্মক কিন্তু এত সহজেই প্রতিরোধযোগ্য একটি রোগ থেকে বাঁচতে, পর্যাপ্ত সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই।
সূত্র : বাসস
Leave a Reply