বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সরকারের পক্ষের লোকেরা হুমকি দিচ্ছে ভোটারা ভোটকেন্দ্রে না গেলে হত্যা ও গ্রাম ছাড়া করবে। কোনো কোনো প্রার্থী হুমকী দিচ্ছে, ভোট কেন্দ্রে না গেলে নাগরিক সুবিধা বাতিল করা হবে। ভোট না দিলে মসজিদ-কবরস্থান বন্ধ করার হুমকী দেয়া হচ্ছে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ভার্চুয়ালি এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন, অবৈধ ক্ষমতার মেয়াদ বাড়াতে পূর্বনির্ধারিত ফলাফল ঘোষণার পাতানো ডামি নির্বাচন ঘিরে দেশে এক অকল্পনীয় ভয়ংকর অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে। বন্দুক-পিস্তল, রামদা, রড, জিআই পাইপ, হকিস্টিকসহ দেশীয় অস্ত্র উঁচিয়ে প্রকাশ্যে মিছিল করছে তারা। নৌকা-ডামি, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন, রাষ্ট্রযন্ত্র প্রিজাইডিং অফিসার সব একাকার হয়ে গেছে। ছলে-বলে কৌশলে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আনার জন্য মরিয়া তারা।
তিনি বলেন, দেশ এখন দুই ভাগে বিভক্ত- একদিকে সাধারণ জনগণ, অন্যদিকে ‘আমরা আর মামুরা’। দেড় দশকের ভোটারবিহীন স্বৈরাচার এ সরকারের একটাই লক্ষ্য ৭ জানুয়ারি একটি তথাকথিত ডামি ভোটার উপস্থিতির অভিনব নির্বাচন দেখিয়ে গণতান্ত্রিক বিশ্বের নিষেধাজ্ঞার খড়গ এবং অনিবার্য পতন থেকে আত্মরক্ষা করা।
ভোটকেন্দ্রে ভোটার আসবে এমন নিশ্চয়তা পাচ্ছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, বহু এলাকায় আগামী ৭ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচন নিয়ে প্রার্থীদের মাঝেও কোনো আগ্রহ নেই। নোয়াখালী-২ আসনে নৌকার প্রার্থী মোরশেদ আলমের মতো কোনো কোনো স্থানে ‘আমি-ডামির’ প্রার্থীরা ভোট চাইতে গিয়ে জুতা পেটা খাচ্ছেন।
তিনি বলেন, তবে যতো যাই করুক-কেউ ভোট কেন্দ্রে যাবে না। অনিবার্য পতন অপেক্ষা করছে এ সরকার এবং মাফিয়াচক্রের জন্য। ৭ জানুয়ারি জনগণ এ সরকারকে লাল কার্ড দেখিয়ে বিদায় করবে। দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে গণতন্ত্রকামী মানুষের চলমান আন্দোলন এগিয়ে যাবে, জনগণের বিজয় হবেই হবে।
তিনি আরো বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল গত ২৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রামে এক মতবিনিময় সভায় স্বীকার করেছেন যে- ২০১৮ সালে রাতে ভোট হয়েছিল। তিনি বলেছেন, ৯৯ নয়, ১০০ শতাংশ নিশ্চিত করতে পারি এবার আর আগের রাতে ভোট হবে না। এ জন্য অনেক ক্ষেত্রেই ব্যালট পেপার সকালে যাবে।’ উনার এই সরল স্বীকারোক্তির পর যেসব জিনগত আওয়ামী মিথ্যুক এতদিন রাতের ভোট নিয়ে বিতর্ক করেছিলেন তাদের মুখ বন্ধ হবে নিশ্চয়ই। এবারের নির্বাচনে বহু এলাকায় ডামি প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরাই প্রকাশ্যে স্বীকার করছে কিভাবে ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর রাতে ভোট ডাকাতি করেছিল।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, এক তরফার ডামি নির্বাচন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ একটি হাস্যকর চাপাবাজির ডামি ইশতেহার ঘোষণা করেছে। মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য ইশতেহারে নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। অতীতে কোনো প্রতিশ্রুতি তারা রক্ষা করেনি। বরং উল্টোটা করেছিল। ইশতেহারে যা বলে তার সাথে বাস্তবতার মিল থাকে না।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে দিন বদলের সনদ হিসেবে ঘোষণা করে গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ ও তাদের লোকজনের দিন বদল করেছে। ক্ষমতাসীন দল গত ১৫ বছর দেশে দুর্নীতির সর্বোচ্চ রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। সরকারি দলের নেতাকর্মী সমর্থক সবাই এখন কোটিপতি। জনগণের টাকায় উন্নয়নমূলক প্রতিটি প্রকল্প সরকারি দলের টিকাদার কিংবা ক্যাডারদের দখলে।
তিনি আরো বলেন, দলীয়করণের আরেক চূড়ান্ত রূপ প্রশাসনের প্রতিটি স্তর। দেশটা যেন একটি দলের বাকিরা সব বহিরাগত। জীবনযাত্রাকে করে তুলেছে বিভীষিকাময়। এবারে যে ইশতেহার ঘোষণা করেছে তার মূল উপজীব্য বিষয় হলো- ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’। তাদের ‘স্মার্ট বাংলাদেশ হলো স্মার্ট লুটপাট, স্মার্ট শ্মশান। এবারের ইশতেহারে দুর্নীতিবাজদের অর্থ-সম্পদ বাজেয়াপ্তের অঙ্গীকার করেছে দুর্নীতিবাজ সরকার। তার মানে এবার যতটুকু লুটপাট করে খেতে বাকি ছিল সেটুকুও চেটেপুটে খাওয়ার টার্গেট নিয়েছে।
Leave a Reply