নির্বাচনে জয়ী হতে পারলে মানুষ পোড়ানোর হুকুমদাতা বিএনপি নেতা তারেক রহমানকে লন্ডন থেকে দেশে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আগামী নির্বাচনে জয়ী হয়ে আসতে পারলে ওই লন্ডনে বসে হুকুম দেবে আর দেশের মানুষের ক্ষতি করবে, দেশের মানুষ মারবে সেটি হতে পারে না। দরকার হলে ওটাকে ওখান থেকে ধরে এনে শাস্তি দেওয়া হবে, ধরে এনে শাস্তি দেব।
বিএনপি নেতাদের প্রতি প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, রেল পোড়ায়, বাস পোড়ায়, গাড়ি পোড়ায়, মানুষ হত্যা করে, আমাকে পর্যন্ত হত্যার চেষ্টা করেছে তারা। লন্ডনে বসে মানুষ হত্যার নির্দেশ আসছে। যারা অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত, আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করছে; খুনি, লম্পট, জুয়াড়ি তারেকের কথা শুনে যে বিএনপি নেতারা মানুষ খুন করছে, তার শাস্তি তারা পাবে।
গতকাল শনিবার সকালে নিজ নির্বাচনী এলাকা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজ মাঠে জনসভায় এসব কথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে সকাল সোয়া ১১টার দিকে সমাবেশস্থলে পৌঁছান এবং সমাবেশে জাতীয় পতাকা নেড়ে জনতাকে শুভেচ্ছা জানান। লাখো মানুষের উপস্থিতিতে জনসমুদ্রে পরিণত হয় সমাবেশস্থল।
নির্বাচন বানচালে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, নির্বাচন না হওয়ার চক্রান্তের সমুচিত জবাব আমরা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেব। যাতে আর কেউ বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। এখানে তারা তৃতীয় পক্ষকে ক্ষমতায় আনবে, এটাই তাদের লক্ষ্য।
টুঙ্গিপাড়ার জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমার সব থেকে বড় শক্তি টুঙ্গিপাড়াবাসী। এখানে অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে চলতে হয়েছে। তারপরেও আপনারা সব সময় আমাকে স্নেহ, ভালোবাসা, সমর্থন দিয়ে আগলে রেখেছেন। আমাকে শক্তি দিয়েছেন, সাহস দিয়ে এই দেশের মানুষের জন্য কাজ করবার সুযোগ দিয়েছেন। সেই জন্য আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ২০২৬ সালে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হবে জানিয়ে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই এই যাত্রা সফল করতে পারে। আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কেউ পারবে না। কারণ, বিএনপি-জামায়াতের সে যোগ্যতাই নাই। বিএনপি হচ্ছে খুনিদের দল আর জামায়াত হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের দল।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবুল বশার খায়েরের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক বাবুল শেখের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর চাচা বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, এমপি প্রার্থী শেখ হেলাল উদ্দিন, শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল ও শেখ সারহান নাসের তন্ময়, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকার উন্নয়ন প্রতিনিধি মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহবুব আলী খান ও সাধারণ সম্পাদক জিএম শাহাবুদ্দিন আজম, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ সাইফুল ইসলাম প্রমুখ।
নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র যারা করছে তাদেরও শাস্তি পেতে হবে
এরপর দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর নিজ নির্বাচনী এলাকার কোটালীপাড়া শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজ মাঠে নির্বাচনী জনসভায় যোগ দেন। সেখানে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কেউ নাক গলাতে এলে তা বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেবে না। নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র যারা করছে তাদেরও একদিন উপযুক্ত শাস্তি পেতে হবে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কেউ যদি নাক গলাতে আসে আমরা সেটি মেনে নেব না, বাংলাদেশ কখনও মানে নাই। মুক্তিযুদ্ধের সময় পারে নাই, মুক্তিযুদ্ধে আমরা বিজয় অর্জন করেছি।
নতুন ভোটারদের নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, তারুণ্যের শক্তি বাংলাদেশের অগ্রগতি। আমরা সেই তারুণ্যকেই স্মার্ট তরুণ সমাজ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়তে চাই। আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব। আজকের তরুণরাই হবে ২০৪১ সালের সৈনিক। তারাই চালাবে এই দেশ।
তাঁর সরকারের দারিদ্র্যবিমোচন কর্মসূচির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, দেশে দারিদ্র্যের হার আমরা অর্ধেকের বেশি কমিয়ে এনেছি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে আরও কমানো। এ দেশে হতদরিদ্র আর কেউ থাকবে না। যেটুকু আছে এখন ৫ দশমিক ৬ শতাংশ, আগামীবার নির্বাচিত হয়ে আসতে পারলে এবং জনগণের সেবা করার সুযোগ পেলে হতদরিদ্র বলে আর কেউ থাকবে না।
জনসভায় কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ভবেন্দ্র নাথ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত নির্বাচনী জনসভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আয়নাল হোসেন শেখ, কোটালীপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান বিমল বিশ্বাস, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান হাওলাদার, পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান হাজরা, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রাফেজা বেগমসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।
আওয়ামী লীগ আছে বলেই এত উন্নয়ন হয়েছে
টানা ১৫ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় দেশের ধারাবাহিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ আছে বলেই এত উন্নয়ন হয়েছে। এই উন্নয়ন প্রতিটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও জেলা পর্যায়ে এমনকি তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকা মার্কায় ভোট দিন।
গতকাল বিকেলে কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে নির্বচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। এদিন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে একনজর দেখতে সকাল থেকে বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে নেচে-গেয়ে জনসভায় আসেন মানুষ। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে সড়কপথে ছোটবোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে কালকিনিতে আসেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন এবং মাদারীপুরের তিনটি আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে নৌকার ৩ প্রার্থীকে পরিচয় করিয়ে দেন ও নৌকায় ভোট চান।
জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে খুনি আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা শুধু মানুষ হত্যা ও সম্পদ ধ্বংস করতে জানে। তারা কখনও মানুষকে মানুষ বলে মনে করে না। সন্ত্রাসী ও যুদ্ধাপরাধী, বিএনপি ও জামায়াতের রাজনীতি করার কি অধিকার আছে?
পদ্মা সেতুতে কোনো দুর্নীতি হয়নি উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, আবুল হোসেন যখন যোগাযোগমন্ত্রী তখন হঠাৎ বিশ্বব্যাংক একটা অভিযোগ নিয়ে এলো, পদ্মা সেতুর টাকায় দুর্নীতি হয়েছে। তখন পদ্মা সেতু নির্মাণ এ অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি, দক্ষিণাঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কেউ দুর্নীতি করবে, এটি কখনোই বিশ্বাসযোগ্য ছিল না।
কারও নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হচ্ছিল, আমাদের একটি ব্যাংকের এমডি, সে পদ হারাতে চাচ্ছিল না। বয়স হয়েছে, তারপরও পদ হারাতে চাচ্ছিল না। বসে বসে সেই ব্যক্তিই এ ষড়যন্ত্র করেছিল। তখন বিশ্বব্যাংক বলল দুর্নীতি হয়েছে। ঠিক তখনই আমি চ্যালেঞ্জ দিলাম, এখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি, তোমরা প্রমাণ করো। বিশ্বব্যাংক পরে প্রমাণ করতে পারে নাই।
জনসভায় প্রধানমন্ত্রী সাবেক সংসদ সদস্য ও যোগাযোগমন্ত্রী প্রয়াত সৈয়দ আবুল হোসেনকে পদ্মা সেতু নির্মাণে অবদানের জন্য শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
জনসভায় সভাপতিত্ব করেন কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপ, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী প্রমুখ।
Leave a Reply