সরকারের পদত্যাগ, ভোট বর্জন ও চলমান অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে লিফলেট বিতরণ করেছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। দ্বিতীয় দফায় গণসংযোগের পঞ্চম দিন শনিবার ঢাকাসহ সারাদেশে এই কর্মসূচি পালন করেন দলগুলোর নেতাকর্মী। একই দাবিতে পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করেছে জামায়াতে ইসলামী।
এদিন সরকার, নির্বাচন কমিশনকে লাল কার্ড প্রদর্শনসহ গণমিছিল করে গণতন্ত্র মঞ্চ। তবে পুলিশি বাধায় পণ্ড হয়েছে গণঅধিকারের কফিন মিছিল। আজ থেকে তৃতীয় দফায় আরও দু’দিন লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করবে দলগুলো।
শনিবার গণসংযোগকালে নেতারা বলেন, ৭ জানুয়ারি কেউ ভোটকেন্দ্রে যাবেন না। এরই মধ্যে অনেকেই একতরফা নির্বাচনে ভোট না দেওয়ার শপথ নিয়েছেন। বিজ্ঞাপন ও মাইকে ডেকেও সচেতন নাগরিকদের ভোটকেন্দ্রে নিতে পারবে না। ভোটের দিন বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে লাল কার্ড দেখাবে জনগণ।
সকালে ওলামা দলের নেতাকর্মীকে নিয়ে রাজধানীর তোপখানা রোডে লিফলেট বিতরণ করেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক। তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারির ভোট বর্জনে গ্রামগঞ্জের জনগণ একাট্টা হয়েছে। কারণ, এটা একটা একদলীয় নির্বাচন।
উত্তরা ও তুরাগ এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীকে নিয়ে লিফলেট বিতরণ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। জনগণকে ৭ জানুয়ারির ভোট রুখে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এ নির্বাচন বন্ধ করতে হবে। এটি একতরফা, অবৈধ ও ভাঁওতাবাজির নির্বাচন। এই ডামি নির্বাচনের বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, অর্থনীতিবিষয়ক সহসম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, ঢাকা মহানগর উত্তরের নেতা মোস্তফা জামান প্রমুখ। এলিফ্যান্ট রোডে লিফলেট বিতরণ করেন বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম।
মুগদা এলাকায় লিফলেট বিতরণ করে মৎস্যজীবী দল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলের সদস্য সচিব আবদুর রহিম, কেন্দ্রীয় নেতা ওমর ফারুক পাটোয়ারী, মো. শাহ আলম, হাজি আনোয়ার হোসেন, ফজলে কাদের সোহেল প্রমুখ।
রাজধানীর পান্থপথে লিফলেট বিতরণ করেছে যুবদল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নেতা নুরুল ইসলাম নয়ন, মোহাম্মদ ফিরোজ আবদুল্লাহ, মঈনুদ্দীন রুবেল, মাহাবুবুর রহমান পলাশ, কামরুজ্জামান নান্নু প্রমুখ।
এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভোট বর্জনের পক্ষে লিফলেট বিতরণ করেছে ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এদিকে ভোট বয়কটের আহ্বান জানিয়ে শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে লাল কার্ড প্রদর্শন ও গণমিছিল করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। এ সময় নেতারা বলেন, সরকার জোর করে সবাইকে ভোটকেন্দ্রে আনতে চায়। ৭ জানুয়ারি যা হচ্ছে, তা নির্বাচন নয়। যেখানে বিরোধী দল নেই, সেটা ভোট হতে পারে না। সরকার কোন প্রার্থীকে বা কেন্দ্রে কেন্দ্রে কাকে কত ভোট দেওয়া হবে, তার তালিকা তৈরি করছে। দেশের মানুষ এ মুহূর্তে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে লাল কার্ড দেখাচ্ছে। এর পর বিদেশিরাও লাল কার্ড দেখাবে।
এ সময় বক্তব্য দেন মঞ্চের নেতা ও নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ূম, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সিনিয়র সহসভাপতি তানিয়া রব, সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, শহীদুল্লাহ কায়সার, ফরিদুল হক আকবর খান প্রমুখ।
দুপুর ১২টার দিকে বিজয়নগর এলাকায় কফিন নিয়ে মিছিল করে নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ। এ সময় মিছিলে বাধা দেয় পুলিশ। নেতাদের অভিযোগ, সমাবেশ শেষে কফিন মিছিল করতে গেলে পুলিশ মারমুখী হয়। আটকের হুমকি দেয়। ধস্তাধস্তি করে কফিন ভেঙে ফেলে। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হন। নুর বলেন, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর মধ্যরাতে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে। জনগণের ভোটাধিকার হরণ ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংসের প্রতিবাদে আজকে আমাদের এই কফিন মিছিল। গণতন্ত্র এখন কফিনে; আমরা গণতন্ত্রের পুনর্জাগরণ করতে চাই।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান, উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ, শাকিল উজ্জামান, আবদুজ জাহের, কেন্দ্রীয় নেতা হাসান আল মামুন, মনজুর মোর্শেদ মামুন প্রমুখ।
সকালে প্রেস ক্লাব, পল্টন, বিজয়নগর এলাকায় গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেছে ১২ দলীয় জোট। এ সময় জোটের মুখপাত্র শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, আওয়ামী লীগ এবার চূড়ান্ত নব্য-স্বৈরশাসকের রূপ ধারণ করেছে। তাদের সর্বশক্তি দিয়ে হটাতে হবে। অন্যথায় দেশ ও জাতি নিরাপদ থাকবে না।
গণসংযোগে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) নওয়াব আলী আব্বাস খান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মাওলানা ড. গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ জাতীয় দলের শামসুল আহাদ, ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আবদুল করিম প্রমুখ।
পৃথকভাবে একই এলাকায় লিফলেট বিতরণ করেছে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট। এ সময় জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, এনপিপির মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, শাহাদাত হোসেন, গণদলের এ টি এম গোলাম মাওলা চৌধুরী, বাংলাদেশ ন্যাপের এম এন শাওন সাদেকী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। এদিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ভোট বর্জনে লিফলেট বিতরণ করেছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, গণফোরাম (মন্টু), পিপলস পার্টি ও বাংলাদেশ লেবার পার্টিসহ সমমনা দলগুলো।
এদিকে সারাদেশে মানুষের ‘স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পাওয়ায়’ গণসংযোগে মনোযোগ দিয়েছে বিএনপি। এ জন্য ভোটকেন্দ্রিক টানা কর্মসূচিতে যাওয়ার আগে লিফলেট বিতরণ কর্মসূচিতেই থাকতে চায় দলটি। এরই অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার থেকে আগামী সোমবার পর্যন্ত এ কর্মসূচিতেই থাকবে। এর আগেও তিন দিন লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করেছে তারা। সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবি এবং ভোট বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে জনমত তৈরি করতে এ পর্যন্ত সারাদেশে ১ কোটির বেশি লিফলেট বিতরণ করেছে বলে দলটির দপ্তর জানিয়েছে।
শনিবার দুপুরে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান, আজ ও আগামীকাল সোমবারও লিফলেট বিতরণের কর্মসূচি চলবে। তবে এখনও কেন্দ্রীয়, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা, উপজেলা-থানার অনেক নেতা এ কর্মসূচিতে অংশ না নেওয়ায় তৃণমূল নেতারা ক্ষুব্ধ বলে জানা গেছে।
জামায়াতের লিফলেট বিতরণ
নির্বাচন বর্জন, ভোটারদের ভোটদান থেকে বিরত, বিরোধী দলবিহীন নির্বাচন প্রত্যাখ্যান এবং দেশের হারানো গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করেছে জামায়াতে ইসলামী। শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এ কর্মসূচি পালন করেন দলটির নেতাকর্মীরা। নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে আজ রোববার এবং আগামীকাল সোমবারও গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ করবে জামায়াত। গতকাল বিবৃতিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম মাছুম।
বরিশালে গণসংযোগে পুলিশের ধাওয়া, গ্রেপ্তার
বরিশালে বিএনপির গণসংযোগ পুলিশের বাধায় পণ্ড হয়ে গেছে। এ সময় নগরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য সচিব হাফিজুর রহমান তারেককে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
মহানগর বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সদস্য জাহিদুর রহমান রিপন জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরের বাজার রোড এলাকায় একদল নেতাকর্মী লিফলেট বিতরণ শুরু করেন। এ সময় পুলিশ এসে ধাওয়া দেয়। সেখান থেকে তারেককে গ্রেপ্তার করা হয়।
Leave a Reply