বিশেষ প্রতিবেদক// প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে গড়া একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল বিশেষায়িত ব্যাংক পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক। অথচ,অল্পদিনেই এই বিশেষায়িত ব্যাংকটিকে দেউলিয়া করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে অভ্যন্তরীণ সিবিএ নেতাদের একটি অংশ। সেই দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের মূল হোতা সিবিএ সাধারন সম্পাদক ভোলা জেলার বাসিন্দা রোবেল ও সভাপতি টাঙ্গাইলের এনামুল এবং সহসভাপতি নেত্রকোনার বাসিন্দা সামছুল আরেফিন।শক্তিশালী হয়ে ওঠা দুর্নীতিবাজ এ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে রয়েছে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আর্থিক দুর্নীতি,চাঁদাবাজি,অনিয়ম,অর্থ আত্মসাৎ,অসদাচরণ ও আরও বহু অভিযোগ।অথচ,বারবার এদের বিরুদ্ধে সাধারন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে প্রতিবাদের আঙ্গুল তুলেও মেলেনা কোন প্রতিকার।দুর্নীতিবাজ চক্রের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করা যেন চাকরী ও জীবনের জন্য বড় হুমকি; তাই সহজে পাওয়া যায়না সম্মুখ ভুক্তভোগী।
রোবেল এনামুলের বিরুদ্ধে একাধিক লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনুসন্ধান শুরু করে অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা। অনুসন্ধানে মেলে তাদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের সত্যতা ও প্রমাণ।
রোবেল- এনামুলের বিরুদ্ধে যত অভিযোগঃ
ফেইসবুকে দেয়া বিজ্ঞপ্তিতে রোবেলের পাহাড় কিনতে চাওয়ার বিষয়টি অফিসের বিভিন্ন মহলে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।অফিসের রোবেলের বিভিন্ন সহকর্মীরা বলছেন ‘ রোবেল টাকার ভারে এতটাই বেপরোয়া হয়েছেন যে,তার ব্যক্তিগত ফেইসবুক আইডিতে তিনি পাহাড় কেনার ইচ্ছে পোষণ করেন।’ (ফেইসবুকের স্ট্যটাস হাতে এসেছে দখিনের ক্রাইমের হাতে)
তাদের(রোবেল এনামুল) বিরুদ্ধে একাধিক ভুক্তভোগী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শর্তে অভিযোগ করেছেন যে, ‘তারা(ভুক্তভোগী)পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের অবহেলিত কর্মকর্তা ও কর্মচারী। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক এর ওই সিবিএর দূর্নীতিবাজ নেতারা ব্যাংকের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন ভাবে প্রথমে বিপদে ফেলে। তারপর সমাধানের কথা বলে বিপুল পরিমান টাকা ঘুষ নিয়ে সমধান করে দেয়। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে এই টিমের বাহিরে কোন বদলী কোন বিভাগীয় মামলা নিষ্পত্তি গৃহ নির্মাণ লোন পদোন্নতি কোন কাজ করা সম্ভব নয়। ‘
এছাড়া,সিবিএ নেতা রোবেল হোসেন পদ অনুযায়ী সাধরান সম্পাদক।সে মূলত একজন মাঠসহকারী, ১৪ গ্রেডের একজন কর্মচারী সর্বসাকুল্যে বেতনভাতা ২০ হাজার টাকার মত, তার বাবা কাঠের স’ মিলে কাজ করেন। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান রোবেল।মাঠসহকারী হিসেবে চাকুরীতে যোগদান ২০১৯ সালে।
চাকুরীতে যোগদানের পর থেকে ২০২২ এই তিন বছরে সে গরীব অসহায় ব্যাংকের সদস্যদের নামে ভূয়া ঋণ দেখিয়ে ও সদস্যদের কাছ থেকে ঋণের কিস্তি আদায় করে অফিসে জমা না দিয়ে নিজে কোটি কোটি টাকার সম্পদের পাহাড় বানিয়েছে। (ঋণ গ্রহিতাদের লিখিত স্বীকারোক্তি প্রমাণ হিসেবে সংরক্ষিত আছে প্রতিবেদকের কাছে।)
তথ্য সূত্রে জানা যায়,রোবেল ভোলা জেলার রসলপুর ইউনিয়নে কর্মরত ছিল।রোবেল এর টাকা আত্মসাৎ এর তদন্ত করতে গেলে তার মামা পরিচয়ে আমিনুল পূর্বের রাজনৈতিক পরিচয় দিয়ে তদন্ত কর্মকর্তাকে লাঞ্চিত করার চেষ্টা করে। পরবর্তীতে তা ধামা চাপা দেয়া হয় এবং তা খেলাপী হিসেবে পরে থাকে সরকারের খাতায়।রোবেল এর আত্মসাৎকৃত টাকার তদন্ত কর্মকর্তাকে তার কথিত মামার দেয়া হুমকি ও লাঞ্চিত করার ভয় দেখানোর কল রেকর্ড সংরক্ষিত রয়েছে এ প্রতিবেদকের হাতে।
অন্যদিকে সিবিএ নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হওয়ার পর শুরু হয় রোবেল এর নতুন দুর্নীতির মেলা। যেকোন বদলীর রেট নির্ধারন করেন তিনি ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। গৃহ নির্মান লোন পাস করে দেয়ার জন্য তাকে ২ লক্ষ টাকা দিতে হয়।অভিযোগ রয়েছে রোবেল নেশাগ্রস্থ অবস্থায় প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান এর গাড়ীচালককে বেধরক মারধর করায় ঢাকার রমনা থানায় ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর মামলা করা হয়।মামলার নম্বর ৪৯২০(৪)/২।
বেপরোয়া রোবেল এর বিরুদ্ধে অভিযোগ এসব ঘুষের টাকা তিনি তার উপর নির্ভরশীল আত্মীয়,স্বজনদের নামে ব্যাংকের মাধ্যমে সরিয়ে নিয়ে অন্য ব্যবসায় ইনভেস্ট করেন।
আরেক অভিযুক্ত সিবিএ নেতা এনামুল হক।তিনি সভাপতি, সিবিএ, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের।তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে, তিনি বিভিন্ন কর্মচারীদের ভয়ভিতি দেখিয়ে বদলী হুমকি দেয় এবং টাকার চুক্তি করে সে বদলি থামায়।
আমাদের হাতে আসা একজন মাঠসহকারীর কল রেকর্ডিং থেকে জানা যায়,এনামুল তার কাছে ১ লক্ষ টাকা চাইছেন তাকে বিপদমুক্ত করতে।এছাড়াও আরও বহু অভিযোগ তার বিরুদ্ধে রয়েছে যা পরবর্তী পর্বে প্রকাশ হবে।
চক্রের আরেক দুর্নীতিবাজ সদস্য শামসুল আরেফীন।তিনি সহসভাপতি সিবিএ, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক। সে মূলত বিভিন্ন কর্মচারীদের পদোন্নতি/বদলীসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দিবে বলে সবাইকে ম্যাসেজ দিয়ে অবগত করে তার সঙ্গে দেখা করার জন্য। দেখা করতে আসলে দাম দর ঠিক করে চুক্তি যেকোন কাজের বদলীর রেট ৫০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকা।(এসংক্রান্ত প্রমাণাদি সংরক্ষিত রয়েছে প্রতিবেদকের হাতে)। পদোন্নতি,গৃহ নির্মান লোন পাস করে দেয়ার জন্য তাকে ২ লক্ষ টাকা দিতে হয়। এরকম একাধিক ফোন মেসেজ হাতে এসেছে প্রতিবেদকের হাতে।
চক্রের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত আরেক সদস্য মহারানী পারভিন।যিনি সিবিএ মহিলা সম্পাদিকা।তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি চক্রের সাথে সরাসরি জড়িত এবং বিভিন্ন বিষয় ‘ম্যানেজ’ করতে তাকে কৌশলে ব্যবহার করা হয়।তাদের সখ্যতা, একত্রে ছুটি কাটানোর ছবিও হাতে এসেছে দখিনের ক্রাইমের
অভিযোগের বিষয়ে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মোহাম্মদ জামিনুর রহমান বলেন ‘এরকম কোন ঘটনা ঘটে থাকলে তা ব্যাংকের আইন পরিপন্থী কাজ।প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে অবশ্যই।
অভিযুক্ত সংশ্লিষ্ট সিবিএ নেতারাদের বক্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন দিলেও তারা রিসিভ না করায় বক্তব্য সংগ্রহ সম্ভব হয়নি।
Leave a Reply