কর্তৃপক্ষের টনক নড়েছে প্রায় চব্বিশ মাস পর (!)
নেপথ্যে তথ্য অধিকার আইন প্রয়োগ।
দিনটি ছিল ১৫ মে ২০১৮।খবর এলো রাতে কাশিপুরে বিমানবন্দর থানা কর্তৃপক্ষ অর্থ ঋণ ও প্রতারণার মামলায় গ্রেফতার করেছে বন বিভাগের এক কর্মকর্তার যার নামের আদ্যক্ষর ‘ক’ ।রাতে থানায় তার বক্তব্য নিতে যেতে যেতে দেরি হওয়ায় সেটি আর সম্ভব হয়নি। পরেরদিন আদালত থেকে খবর নিলাম তাকে বিজ্ঞ আদালত কারাগারে প্রেরণ করেছেন।এরপর অনেকদিন ব্যস্ততায় খোঁজখবর নিতে পারিনি। তবে অনুসন্ধানের বিষয়বস্তু হিসেবে মাথায় রেখে ডায়েরির পাতায় লিখে রেখেছিলাম। রুটিন ওয়ার্ক অনুযায়ী ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের একদিন চেক করতে গিয়ে পুরানো ফাইল হাতে আসতেই মনে পড়লো যে,বিষয়টি পিছিয়ে পড়েছে।এরপর শুরু মনোনিবেশ এবং তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ অনুযায়ী তথ্য চেয়ে অনুরোধ পত্র পাঠানোর কাজ দিয়ে অনুসন্ধান শুরু করা।বলে রাখা ভাল,তথ্য অধিকার আইন নিয়ে আমার কাজের অভিজ্ঞতা ২০১৬ থেকে শুরু।আমি এ আইন প্রয়োগে যথেষ্ট সাচ্ছন্দ্য বোধ করি এবং এটির খুঁটিনাটি ভাল বুঝিও।
বন কর্মকর্তা নামের আদ্যক্ষর ‘ক’ এর বিষয় আমি প্রথম জানতে চাইলাম বরিশাল কেন্দ্রীয় কারাগারে।২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ তার জেলে থাকার বিষয় তথ্য নিশ্চিত হতে অনুরোধ পত্র প্রেরণ করি। জেল কর্তৃপক্ষ ৬ মার্চ লিখিতভাবে নিশ্চিত করেন যে জনাব ‘ক’ বরিশাল কোতোয়ালি থানার মামলা সিআর-২৬৪/১৬ র মাধ্যমে ১৬/০৫/২০১৮ তারিখ জেল এ আসেন। এবং পরবর্তীতে ১৭ তারিখ জামিনে বের হন।
এরপর বিষয়টি মৌখিকভাবে সামাজিক বন কর্মকর্তার কাছে তখন জানতে চেয়ে কোন সদুত্তর পেলাম না বরং বিভিন্ন চাপের মুখে পড়তে শুরু করলাম।এরপর ২০২২ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারিতে বন বিভাগ বরিশালে জেল খাটার তথ্য সংযুক্ত করে তথ্য জানতে চেয়ে অনুরোধ করি যে,জনাব ‘ক’ এই জেল খাটার বিষয় কর্তৃপক্ষ কি জানেন এবং তার বিরুদ্ধে কোন বিভাগীয় মামলা রয়েছে কি না; এর জবাবে ২ মার্চ বন বিভাগ উত্তরে জানায় তারা বিষয়টি জানতেন না এবং তার বিরুদ্ধে কোন বিভাগীয় মকদ্দমা চালু নেই। কিন্তু তবুও কর্তৃপক্ষ নিরব থাকলো বহুদিন।
এরপর আমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বরাবর নতুন একটি তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ এর ৮ ধারা মোতাবেক অনুযায়ী প্রথম ৮ মার্চ ২০২২ এ ইমেইলে তথ্য জানতে চাই।পরে সেই ইমেইল পাওয়া যাচ্ছেনা মর্মে জানানোর পর পুনরায় ২৮ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে সরাসরি, ইমেইলে আবার অনুরোধপত্র প্রেরণ করেছি।অথচ, নির্ধারিত সময় অনুযায়ী কোন প্রকার যোগাযোগ করা হয়নি।তাই সংক্ষুব্ধ হয়ে তথ্য অধিকার আইন এর ২৪ ধারা মতে জনাব হারুন অর রশিদ, বন সংরক্ষক,বিভাগীয় বন অফিস, বরিশাল এর হারুন অর রশিদ সাহেবের কাছে আপিল করি। অথচ,আপিল দায়েরের পর ১৩-০৬-২০২৪ তারিখ উক্ত কার্যালয় হইতে ইমেইলে একটি কথিত উত্তর প্রদান করা হয় যা তথ্য ফরম ‘ক’ এর সাথে কোন মিল নাই। উক্ত সরবরাহকৃত তথ্য,উত্তর বিশ্লেষণ করে দেখতে পাই গত ১৯/০২/২০২২ তারিখ তথ্য অধিকার আইনের মাধ্যমে সরবরাহ উত্তরটি পুনরায় নতুন করে ১৩/০৬/২০২৪ তারিখ প্রেরণ করা হয়েছে; যা সম্পূর্ণ বিভ্রান্তিকর এবং বর্তমান অনুরোধ পত্রের তথ্য মাফিক উত্তর নয়।মূলত অত্র কার্যালয়ে কর্মরত জনাব ‘ক’ র এর ফৌজদারি অপরাধে জেল খেটে সেই তথ্য কর্তৃপক্ষের কাছে গোপন করার পর সে বিষয়ে তার বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী আইন অনুযায়ী কি ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে তার অফিস আদেশ কপি চাওয়া হয় তথ্য ফরম’ক’ তে।সেই দুর্নীতি আড়াল করতে কর্তৃপক্ষ ইচ্ছেকৃতভাবে বিভ্রান্তিকর তথ্য সরবরাহ করেছেন যা তথ্য অধিকার আইন,২০০৯ এর ১৩ (ঙ) অনুসারে বিভ্রান্তমূলক তথ্য প্রদান করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ধারা ২৭ (ঘ) ও (ঙ) অনুযায়ী তথ্য কমিশন জরিমানা ছাড়াও ধারা ২৭ (৩) বলে অসদাচারণ বলে গণ্য।
তথ্য কমিশনে আমি এ নিয়ে লিখিতভাবে ফরমেট অনুযায়ী।এরপর গত ১৮ জনু বন বিভাগ কর্তৃপক্ষ আমার সাথে যোগাযোগ করেন এবং জানান যে তারা একটি চিঠি ইস্যু করেছেন। তারা জনাব ‘ক’ কে জানতে চান যে কেন তিনি জেল এ থাকার তথ্য গোপন করেছেন, কি মামলায়, কত তারিখে কেন জেল এ গিয়েছিলেন এবং সেই মামলার বর্তমান পরিস্থিতি কি ; সর্বোপরি এ অসদাচরণ ও দুর্নীতির দায়ে কেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবেনা তা জানতে চাওয়া হয়।
তো এই ছিল প্রায় ২৪ মাসের অক্লান্ত পরিশ্রম দুর্নীতির বিরুদ্ধে। যা আজ আশার মুখ দেখেছে।আমি আশাকরি আমার এ ঘটনা সবার সাথে শেয়ারের মাধ্যমে মানুষ জনস্বার্থে কাজ করতে এবং তথ্য অধিকার আইন নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হবেন।
~ নিয়াজ মোহাম্মদ ;
সাংবাদিক ও অনলাইন এক্টিভিস্ট
dainiknagorik@gmail.com
Leave a Reply