সম্প্রতি ভারতের আসাম রাজ্যে নাগরিকদের নামের চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশের পর কুড়িগ্রামের সীমান্ত এলাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) নজরদারী বাড়ানো হয়েছে। তালিকায় বাদ পড়া নাগরিকরা যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য সীমান্ত এলাকায় বিজিবি’র পাশাপাশি পুলিশও সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। যদিও কেন্দ্রীয়ভাবে এখন পর্যন্ত কোন নির্দেশনা আসেনি।
জানাা গেছে, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও মেঘালয় রাজ্যের সীমান্ত ঘেঁষা কুড়িগ্রাম জেলা। এই জেলার সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে ২৭৩ কিলোমিটার। এই সীমান্ত পাহাড়ায় রয়েছে ১৫ বিজিবি লালমনির হাট, ২২ বিজিবি কুড়িগ্রাম এবং ৩৫ বিজিবি জামালপুর। এরমধ্যে কুড়িগ্রামের চর ভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের ভোটঘাটি গ্রামের সীমান্ত এলাকার ১০০১ নং সীমান্ত পিলার থেকে ভূরুঙ্গামারীর ১০৭১ নং পিলার পর্যন্ত প্রায় ২০০ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা কুড়িগ্রামের সাথে যুক্ত।
এছাড়া ভারত থেকে ব্রহ্মপূত্র, দুধকুমোর, সোনাভরি, জিঞ্জিরামনদীসহ কয়েকটি নদী এই সীমান্ত দিয়ে এসেছে। নদী সীমান্ত এলাকায় কাঁটাতারের ব্যবস্থা নেই।
আসামের বহুল আলোচিত নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসি থেকে বাদ পড়া ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭জন নাগরিকদের মধ্যে অনিশ্চিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বেশ কয়েকদিন ধরে এই লোকদের বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারী বলে অভিহিত করে আসছেন। যে কোন সময় তাদেরকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হতে পারে।
এদিকে আসামের অর্থমন্ত্রী হিমান্ত বিশ্ব শর্মা বৃহস্পতিবার অনলাইন স্ক্রল ডট অন লাইন এ বলেছেন, ভারতের আসামে এনআরসি থেকে বাদ পড়া ব্যক্তিদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশকে রাজি করা উচিত। এ খবরে কুড়িগ্রামের সীমান্তবাসী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। কুড়িগ্রাম সীমান্ত হচ্ছে ভারতীয়দের পাঠানোর সবচেয়ে ভাল রুট। সেদিক বিবেচনা করে বিজিবি’র সদস্যরা তাদের নজরদারী বহুগুন বাড়িয়ে দিয়েছে।সীমান্তবর্তী গ্রাম গুলোর বাসিন্দাদের সর্তকতা মূলক নানা নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে বিজিবি’র পক্ষ থেকে।
কুড়িগ্রাম জেলা তিন দিক দিয়ে ঘিরে রেখেছে ভারত।বিশেষকরে জেলার ৯উপজেলার মধ্যে ভূরুঙ্গামারী, নাগেশ্বরী, কুড়িগ্রাম সদর, উলিপুর, রৌমারী উপজেলা আসাম সীমান্ত ঘেঁষা। এছাড়া ফুলবাড়ি উপজেলা পশ্চিমবঙ্গ এবং রাজিবপুর মেঘালয় সীমান্ত ঘেঁষা হওয়ায় এসব এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নের চর ইটালু কান্দা গ্রামের বাসিন্দা এরশাদ আলী (৫৮) জানান, মিয়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়ে সারা বিশে^ বাহবা পেলেও স্থানীয়রা চরম অশান্তিতে রয়েছে। দুঃশ্চিতা তাদেরকে সবসময় ভর করছে। একই ইউনিয়নের খেতার চরের রফিকুল ইসলাম (৫৫), ছাটকড়াইবাড়ি গ্রামের মিজানুর রহমান(৬০) শৌলমারী ইউনিয়নের গয়টা পাড়া গ্রামের সোনা মিয়া (৪৮), বেহুলার চরের হাবিবুর রহমান(৬২)সহ অনেকে একই মনোভাব প্রকাশ করেছেন।
জামালপুর ৩৫ বিজিবি’র পরিচালক লে.কর্ণেল নজরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি মাথায় রেখে বিজিবিকে সর্বোচ্চ সর্তক থাকার জন্য ইতিমধ্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেই সাথে নদীপথেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। আসামের পরিস্থিতি যদি কখনও অবনতি হয়, সেদিকেও আমাদের নজরদারি আছে।তবে বিষয়টি কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং করছে।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান বলেন, আসামের বিষয়টি ভারতের অভ্যন্তরিণ ।এ বিষয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে কোন নির্দেশনা নেই।তবে যেকোন উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি’র সাথে সমন্বয় করে কাজ করবে পুলিশ।
কুড়িগ্রামের সীমান্তবর্তী রৌমারী থানার ওসি আবু মোঃ দিলওয়ার হাসান ইনাম বলেন, আসামের বিষয়ে কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি। তারপরও পুলিশ সবসময় সর্তক রয়েছে। নির্দেশনা এলে পুলিশ সে অনুযায়ী প্রস্তুত রয়েছে।
Leave a Reply