নিজস্ব প্রতিবেদক:::বরিশালের বানারীপাড়ায় নরোত্তমপুর গ্রামে জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে নিরীহ প্রতিবেশীর ওপর হামলা ও গুলিবর্ষণ করার মামলার আসামী উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ফারুক হোসেন সরদারের (৫২) জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। রবিবার (১৭ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টায় বরিশাল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বানারীপাড়া আমলী আদালতে হাজির হয়ে আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হোসেন সরদার জামিনের প্রার্থনা করলে বিচারক সুমাইয়া রিজভী মৌরি তা নামঞ্জুর করে তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
বাদী মাইনুল ইসলাম ওরফে কাঞ্চন হাওলাদারের পক্ষের আইনজীবী সৈয়দ ওবায়দুল্লাহ্ সাজু জানান, ৩০৭ ধারায় গুলিবর্ষণ করে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে আসামী ফারুক হোসেন সরদারের জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
উপজেলার সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের নরোত্তমপুর গ্রামের আ. রশিদ সরদার ও প্রতিবেশী ইউনুস হাওলাদারের পরিবারের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে প্রায় ৬০/৭০ বছর ধরে বিরোধ চলে আসছে। তাদের মৃত্যর পরে আ. রশিদ সরদারের ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ফারুক হোসেন সরদারের পরিবারের সঙ্গে ইউনুস হাওলাদারের ছেলে কাঞ্চন হাওলাদারের পরিবারের বিরোধ অব্যাহত থাকে। ১ জুলাই শুক্রবার বিকালে ফারুক হোসেন সরদার ও তার অপর তিন ভাই ফিরোজ সরদার,হুমায়ুন সরদার ও মামুন সরদার বিরোধপূর্ণ ওই জমিতে সীমানা পিলার দিতে গেলে কাঞ্চন হাওলাদার ও তার পরিবারের লোকজন তাতে বাধা দেয়। একপর্যায়ে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে তিন সহোদরসহ ফারুক হোসেন সরদার লাঠি দিয়ে প্রতিপক্ষদের বেধড়ক পিটানোসহ তার লাইসেন্সকৃত পিস্তল দিয়ে এক রাউন্ড গুলি করেন। কাঞ্চন হাওলাদারের ভাই আজিজ হাওলাদারের অভিযোগ তার ভাইয়ের ছেলে মাসুমকে লক্ষ্য করে গুলি করা হলে তিনি ফারুক সরদারকে ধাক্কা দিলে তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় মাসুম প্রাণে বেঁচে যান।
এছাড়া ফারুক হোসেন সরদার প্রতিপক্ষ আজিজ হাওলাদারের মাথায় পিস্তল ঠেঁকিয়ে গুলি করার হুমকি দেয়। ওই সংঘর্ষের ধারণকৃত ভিডিও ওই দিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। তাতে দেখা যায়, ফারুক হোসেন সরদার পিস্তল হাতে গুলি করাসহ তিনি ও তার ভাইয়েরা প্রতিপক্ষ নারী-পুরুষদের লাঠি দিয়ে বেধরক পিটাচ্ছেন। ওই হামলায় কাঞ্চন হাওলাদার (৫৫),তার ভাই আজিজ হাওলাদার (৬২),ভাতিজা মাসুম (৩২),রাসেল (২৮),ভাইয়ের স্ত্রী পারভীন বেগম (৫৫),মেয়ে ফারজানা (২৫) আহত হন। ফারুক সরদারের প্রভাবের কারনে ভয়ে আহতরা বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি না হয়ে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি হন। ওই সময় ফারুক হোসেন সরদার পরিস্থিতি শান্ত করতে এক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করার কথা স্বীকার করে দাবি করেছিলেন, তিনিসহ প্রতিপক্ষের হামলায় তার ভাই হুমায়ুন কবির সরদার (৩৮),মামুন সরদার (৩২) ও হুমায়ুন কবিরের স্ত্রী মুক্তা (২৫) আহত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়েছেন। এদিকে ঘটনার পরপরই ফারুক হোসেন সরদার প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে থানায় যান।
ঘটনার প্রায় ৬ ঘন্টা পরে রাত পৌনে ১১টার দিকে বানারীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. হেলাল উদ্দিন ও ইন্সপেক্টর (তদন্ত) জাফর আহম্মেদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন যান। তখন সেখানে ফারুক হোসেন সরদার উপস্থিত ছিলেন। এদিকে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক হোসেন সরদারের বীরদর্পে থানায় যাওয়া, গভীর রাত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করা, ওসি ও ইন্সপেক্টরের (তদন্ত) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার সময় সেখানে তার উপস্থিত থাকা এবং যেখানে হামলা ও গুলি বর্ষনের ঘটনা ঘটে সেই ক্ষতিগ্রস্থ কাঞ্চন হাওলাদারের বাড়িতে ওসি ও ইন্সপেক্টর না গিয়ে ফারুক সরদারের বাড়ির উঠানে দাঁড়িয়ে তাদের পক্ষের লোকজনের বক্তব্য নেওয়া, থানায় কাঞ্চন হাওলাদারের মামলা না নিয়ে উল্টো ফারুক হোসেন সরদারের পক্ষে মামলা নেওয়া নিয়ে তখন নানা প্রশ্ন ওঠে।
এদিকে বানারীপাড়া থানায় মামলা না নেওয়ায় মাইনুল ইসলাম ওরফে কাঞ্চন হাওলাদার পরে ৬ জুলাই ফারুক হোসেন সরদার ও তার তিন ভাইসহ ৬ জনকে আসামী করে বরিশালে আদালতে মামলা দায়ের করলে বিচারক বানারীপাড়া থানাকে মামলাটি এজাহারভূক্ত করা নির্দেশ দেন। ওই মামলায় ১৭ জুলাই রবিবার হাজির হয়ে জামিন প্রার্থনা করলে বিচারক তা নামঞ্জুর করে ফারুক হোসেন সরদারকে জেলহাজতে পাঠান। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ বাদী পক্ষের মাঝে স্বস্তি ফিরে আসে।
Leave a Reply