বরিশালে স্কুলের মুল ফটকে তালা বরিশালে স্কুলের মুল ফটকে তালা – ajkalbd24.com
  1. admin@ajkalbd24.com : admin : H.M Aslam
  2. akazadjm@gmail.com : A K Azad : A K Azad
  3. ajkalbd24.com@gmail.com : ajkalbd24 : Niaz Mohammad
  4. hafijakhan804@gmail.com : ajkal1 : ajkal1
রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫, ০৭:২৩ পূর্বাহ্ন

বরিশালে স্কুলের মুল ফটকে তালা

আজকাল ডেস্ক :
  • আপডেটের সময় : মঙ্গলবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৩
  • ৫৪ সময় দর্শন

তারিকুল ইসলাম::বরিশাল নগরীর আমানাতগঞ্জ এলাকার ৪নং ওয়ার্ড-এর ৮৩নং মাহমুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দূর্ণীতির কারণে বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন অবিভাবকরা। প্রধান শিক্ষকের নানা অনিয়ম ও দূর্ণীতির কারণে  এখন ধ্বংসের পথে এই স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানটি।

আজ সকাল ৮.৩০মি. সময় ভিতর থেকে দুটি তালা দিয়ে বন্ধ ফটকের সামনে আন্দোলন করে অবিভাবকরা। এই সময় স্কুলে আসা সহকারী শিক্ষিকাগণ উপস্থিত হলে তারা প্রাধান ফটকে তালা দেয়া থাকার কারণে ভিতরে প্রবেশ করতে পারেনি৤

অভিভাবকেরা অভিযোগ করে যে, প্রধান শিক্ষক দীর্ঘদিন যাবত আমাদের বাচ্চাদের মারধর করে এমন কি আমাদের সাথে খারাপ আচরণ করে। অভিভাবকরা আরও জানান যে, যতক্ষন পর্যন্ত প্রধান শিক্ষককে বদলি করা না হবে ততক্ষন পর্যন্ত স্কুলের গেটের তালা বদ্ধ থাকবে। চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া  শিক্ষার্থীর মা অভিযোগ করে বলেন আমার স্বামী নেই আমার মেয়েটা এই স্কুলে দীর্ঘ দিন ধরে পরাশুনা করে প্রধান শিক্ষিকাকে বলেছি উপবৃত্তির কথা, সেটার ব্যবস্থা না করে আমাকে অপমান করে তার কক্ষ থেকে বের করে দেয়। ছাড়পত্র নিতে হলে দিতে হয় অনেক টাকা।

সম্প্রতি অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে; আলামিন নামে এক ছাত্র স্কুল মাঠে ফুটবল খেলার সময় প্রধান শিক্ষিকার মেয়ের গায়ে বল লেগে সামান্য আঘাত পায়, তার পরক্ষণে প্রধান  শিক্ষিকা আলামিন কে ডেকে নিয়ে মারধর করে এবং তার মেয়ের পা ধরিয়ে মাফ চাওয়ায়। তার মেয়ে একই স্কুলের নীচের শ্রেণির ছাত্রী।

অভিযোগ রয়েছে প্রধান শিক্ষকের একক সিদ্ধান্ত ও নিজের ইচ্ছেমতো স্কুলের নিয়মনীতি চালু করায় নানা সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আর এসব বিষয় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শিক্ষার্থীসহ অভিভাবক এবং এলাকাবাসী ও বিদ্যালয়টির একাধিক সহকারি শিক্ষক।

সূত্রে জানা যায়, ৮৩নং সরকারি মাহমুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৪৭ সাথে প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই সময় থেকে ওই বিদ্যালয়টি সুনামের সাথে পথ চলে আসছে। কিন্তু বর্তমানে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মাহমুদা খাতুনের একক সিদ্ধান্ত ও তার স্বেচ্ছাচারিতামূলক আচরণে স্কুলটি আজ বেহাল দশায় পড়ে রয়েছে। আর এতে করে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া এখন হুমকির মুখে।

লিখিত অভিযোগে আরো জানা যায়, ওই বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মাহমুদা খাতুন স্কুলে নিয়মিতভাবে না এসে বরং হাজিরা খাতায় নিজের মতো করে সময় বসিয়ে স্বাক্ষর দিয়ে পূরন করতেন। নিজের খেয়ালখুশি মতো শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাতেন; রুটিনে তাঁর ক্লাস থাকলেও বেশিরভাগ সময় তিনি ক্লাস করান না। এ নিয়ে সভাপতি মহোদয় কঠিন হলে মাহমুদা খাতুন স্কুল কমিটির বারাবর নিজের অনিয়মের কথা স্বীকার করে একটি মুসলেকা দিয়ে আর এমন হবে না বলে জানান, কিন্তু পরের দিন থেকেই একই অনিয়ম করতে থাকেন।

এ নিয়ে উক্ত স্বনামধন্য বিদ্যালয়টির ১১ জন সহকারি শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের নানা অনিয়ম ও দূর্নীতির বিরুদ্ধে স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে।

বর্তমানে ওই বিদ্যায়লটির বর্তমান সভাপতি হিসেবে সাইদুল হক পলাশ দায়িত্বভার গ্রহন করেন। বর্তমান সভাপতি সাইদুল হক পলাশ বলেন, অনেক দিন ধরে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের জন্য যথাযথ পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য কর্মকর্তাদের কাছে অসংখ্য লিখিত অভিযোগ দিয়েও সুফল পাচ্ছি না। তাঁর খুটির জোর কোথায় এটা আমার জানা নেই৤ গত তিন বছরে পনেরটির বেশী অভিযোগ উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে শুরু করে মাননীয় সচিব বরাবর পাঠানো হয়; কোনো এক অজানা কারণে প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে কোন কাজ হচ্ছে না। সম্প্রতি এলাকাবাসী আমাকে নোটিশ করেছে যে প্রায় প্রতিদিনই প্রধান শিক্ষিকা নানা কাজের অজুহাতে স্কুল থেকে বের হয়ে চলে যায়; কেবল বিদ্যুৎ বিল দেয়ার কথা বলে একই মাসে প্রায় ৬/৭ দিন বের হয়ে গেছে৤

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষিকা বলেন, “আমরা পাঠদানে মানসিক প্রস্তুতি হারিয়ে ফেলেছি। প্রধান শিক্ষক মাহমুদা খাতুন যোগদান করার পর আমাদের নানাভাবে হয়রানী করছে। স্কুলের নিয়ম-নীতি পাল্টে ফেলেছে। বেশ কিছুদিন যাবৎ প্রধান শিক্ষক মাহমুদা খাতুন আমাদের না জানিয়ে শিক্ষকদের কথা বিনা অনুমতিতে রেকর্ডিং, ভিডিও ও স্থিরচিত্র ধারন করছেন। আমরা নিজের বিষয় আলোচনা করেও তিনি সেই কথা ও ভিডিও চিত্র ধারন করছেন।” আর এসব রেকর্ডিং ও ভিডিও দিয়ে আমাদের জিম্মি করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তাই আমরা সভাপতি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কাছে অভিযোগ দায়ের করেছি। তারা আরও জানান যে স্কুলে সরকারী বরাদ্ধে ষ্টেশনারী খাতা কলম কাগজ দেওয়ার কথা থাকলেও সেসব আমরা আমাদের নিজেদের টাকায় ক্রয় করতে হচ্ছে৤

এসব অভিযোগের বিষয় মাহমুদা খাতুন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের বলেন, তার কথা কেউ শোনে না। তাকে তাড়ানোর জন্য সবাই এক হয়েছে। এছাড়া শ্রেণীকক্ষ দখলের বিষয় তিনি আরো বলেন, “আমার কোন রুম নেই, তাই এখানে আমি বসি। আমি সরকারি চাকুরী করি কোন সভাপতির কথায় চলতে পারবো না। আমি অসুস্থ তাই কথা বলতে পারব না, আমি আপানার সাথে পরে কথা বলব এই বলে ফোন কেটে দেয়।

এসব বিষয়ে জানতে বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান বলেন যে আমি নতুন এসেছি তার বিষয়ে আমি অবগত নই। তবে শিক্ষা কর্মকর্তা পাঠিয়ে আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি।

এসব অভিযোগের বিষয় ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ শামসুদ্দোহা বলেন একজন ব্যক্তির অপরাধের জন্য সরকারী প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা ঠিক নয়। প্রধান  শিক্ষক যদি অন্যায় করে থাকেন তাহলে উপরস্থ কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেন তিনি।

এসব অভিযোগের বিষয় বরিশাল উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফয়সাল জামিল বলেন, আমি এসে দেখি স্কুলের প্রধান ফটকে তালা ঝুলানো নির্বাচনের পরে তার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি। অভিভাবক ওনার কথা শুনে কিছুটা আশ্বস্থ হলে কাউন্সিলরের সহযোগিতায় গেটের তালা খুলে দেন অভিভাবকগণ।

সূত্র জানান, মাহমুদা খাতুনের বিরুদ্ধে এর পূর্বেও একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনিয়মের দায়ে ২০২৩ সালের ০৮ মে অধিদপ্তর কর্তৃক স্বাক্ষরিত চিঠিতে বরিশাল সদর উপজেলার ৮৩নং মাহমুদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বদলী করে নরকাঠি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠানো হলে সেখান থেকে ৫ দিন পরে আবার পূর্বের জায়গায় চলে আসে। সূত্র জানান যে, তাঁর বদলি স্থাগিত করা হয়েছে কোন এক অদৃশ্য শক্তির কারণে।

 

এ বিষয় বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি’র ছোট ছেলে জনাব সাইদুল হক পলাশ জানান যে  আমি প্রধান শিক্ষিকার অনৈতিক আবদার না শোনায় প্রধান শিক্ষিকা স্কলের বিষয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে; স্কুলটি আজ ধ্বংসের পথে। আমি স্কুলের স্বার্থে প্রধান শিক্ষিকাকে অন্য কোথাও বদলি করার দাবি জানাচ্ছি। তাঁর বিরুদ্ধে আমার কাছে অনেক অভিভাবক লিখিত ও মৌখিক আকারে অভিযোগ দিয়েছে; আমি সবসময়ই তা উপরস্থ কর্মকর্তাদেরকে জানিয়েছি। আশাকরি, উপরস্থ কর্মকর্তা তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিবে। জরাজীর্ণ বিদ্যালয়টি ক্রমশ প্রাণ ফিরে পেতে শুরু করেছিলো কিন্তু প্রধান শিক্ষকের অসহযোগিতা এবং স্বেচ্ছাচারিতা বিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রমকে ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত করছে। তাই প্রধান শিক্ষক মাহমুদা খাতুনকে দ্রুত অন্যত্র বদলীর দাবিও জানান সকল এলাকাবাসী।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর