গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া বলেছেন, আগামী ৭ জানুয়ারি হল আওয়ামী লীগের মরণ ঘণ্টা। এরপর জনগণ আওয়ামী লীগকে চুবিয়ে মারবে। ২০২৪ সালে দেশের অগ্রগতির সূচনা হবে। আওয়ামী লীগের সবাই কাঁদবে। গ্রামে গ্রামে তাদেরকে জনগণ পুকুরে চুবাবে। তখন এরা বলবে, মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনা, শীতকালে কেন এই ইলেকশন করতে গেলেন! তবে আমরা জনগণকে বলবো, আপনারা বিষাক্ত মানুষদের চুবিয়ে পুকুরের পানি নষ্ট করবেন না। আইনের শাসন ফেরত আসলে তাদের বিচার হবে। শুধু জেল না, অনেকের ফাঁসিও হবে।
আজ শুক্রবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরই) গণঅধিকার পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত কারারুদ্ধ বাংলাদেশ; ডামি নির্বাচনের ফাঁদ ও ভোটাধিকার শীর্ষক সর্বদলীয় আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। গণঅধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব ফারুক হাসানের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, এনডিপির চেয়ারম্যান ক্বারী মোহাম্মদ আবু তাহের প্রমুখ।
আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক অব জেলা জাজ শামসুল ইসলাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাবিবুর রহমান, প্রফেসর মাহবুবুর রহমান, সাদ্দাম হোসেন, আরিফুর রহমান তুহিন, যুগ্ম সদস্য সচিব আতাউল্লাহ, তারেক রহমান, সহকারি আহ্বায়ক শেখ খাইরুল কবির, কেন্দ্রীয় সদস্য জিয়াউর রহমান, ইমাম হোসেন, মোজাম্মেল মিয়াজী, আরিফ বিল্লাহ, যুব অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক সাকিব হোসেন, সদস্য সচিব সোহেল মৃধা, ছাত্র অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব মুনতাসীর মাহমুদ প্রমুখ।
রেজা কিবরিয়া বলেন, যারা স্বাধীন ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ দেখতে চান, সামনের বছর তাদের অনেক ভালো যাবে। ওনাদের (আওয়ামী লীগ) মনে অনেক কষ্ট। জনগণের টাকা পাচার করে নিয়ে গেছে। তারপরও তারা (আমেরিকা-ইউরোপ) প্রশ্ন করে, এর উৎস কি? গরীব মানুষের চুরি করা টাকা দিয়ে লবিস্ট নিয়োগ দিয়েছিল, কিন্তু লাভ হয়নি। টাকা দিয়ে অনেককে ম্যানেজ করা যায়, আমেরিকাকে ম্যানেজ করা যায় না। চোরদের আমেরিকানরা সম্মান করে না। ওইসব দেশে আইনের শাসন আছে। পাচার করে যে টাকা নিয়ে গেছে, তা বাজেয়াপ্ত হবে এবং সামনে যে নতুন সরকার আসবে, তারা ফেরত আনবে।
গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক আরও বলেন, এই দেশটা সম্ভাবনাময় একটা দেশ। এজন্য আমি ফেরত এসেছি। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দিনও আমেরিকায় সিটিজেন হয়েছে। আমি নেইনি। আমার বাবার হত্যার পর থেকে আমাকে অনেক সুবিধা দিতে চেয়েছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু আমি নেইনি। আমি আওয়ামী লীগকে অনেক কাছ থেকে দেখেছি। এতো নিম্নমানের নেতৃত্ব এরা দিয়েছে। বাংলাদেশ একটা সোনার দেশ। এমন একটি দেশকে নিম্নশ্রেণির চোররা দখল করে রেখেছে। ২০২৪ সালে নতুনভাবে শুরু হবে। ভালো নেতৃত্বের কারণে একটা দেশ অনেক দূর যেতে পারে। আমরাও পারবো। অনেক সময় নষ্ট হয়েছে, আর না। আসুন শপথ নেই। রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা ফিরিয়ে আনবো। আপনারা দেখেন, ৭ তারিখের পরে কি ঘটে। জনগণ কীভাবে এদের প্রত্যাখ্যান করে।
বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের ছোট করা হয়েছে। কেন পাকিস্তানিরা জেনারেল ওসামানীর কাছে আত্মসমর্পণ করেনি, করলেন ভারতের হাতে। মুক্তিযুদ্ধে কেন আওয়ামী লীগ ভূমিকা রাখেনি। যুদ্ধের পর ভারতের সেনাবাহিনী থানায় থানায় ক্যাম্প করেছে। শেখ মুজিবুর রহমান চাপ না দিলে ভারতের সেনাবাহিনী এখনও থেকে যেতো।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এই ১৫ বছরে ব্যাংক লুটপাট করেছে। নিজেদের নেতাদের নামে ব্যাংকের লাইসেন্স দিয়ে লুটপাট করে খেয়েছে। আজকে দেশে রিজার্ভ নেই কেন? এই দায় তো আপনাদের। সব লুটপাটের দায় আপনাদের। যারা লুটপাটে জড়িত তারা বলে বারবার দরকার, শেখ হাসিনা সরকার। তারা আপনাদের চায়। কিন্তু জনগণ আপনাদের চায় না। মন্ত্রী বলে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কিছু করার ক্ষমতা নাই। কেন নিতে পারেননি? কারণ, সিন্ডিকেট তো আওয়ামী লীগের লোক।
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখন আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগ যুদ্ধ চলছে। একজন আরেকজনের ওপর হামলা করছে, নির্বাচনী ক্যাম্প জ্বালিয়ে দিচ্ছে। যারা হামলা করছে ও যাদের ওপর করছে তারা সব আওয়ামী লীগের লোক। তারা এতো পাপ করছে যে, এখন নিজেরা নিজেরা সুইসাইড করতেছে মারামারি করে। তবে জয় জনগণের হবে, ইনশাআল্লাহ। সমস্ত জাতি ও দলকে একত্রিত করতে হবে। ৭ তারিখে নির্বাচন বন্ধ করতে হবে।
হঠাৎ নৌকায় চড়ে বসা বহিষ্কৃত ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওমর সাহেব জেলে ছিলেন। সেখান থেকে বের হয়েই কীভাবে তিনি গণভবনে গেলেন এবং প্রার্থী হলেন? তাহলে জেলখানায় দেনদরবার হয়েছে। আওয়ামী লীগে জেলে নেতাদের বন্দী করে আলোচনা করে ও চাপ দিয়ে লোকজনকে ইলেকশনে নিয়েছে।
গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শরিক দল ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজু বলেন, আওয়ামী লীগ একটি মাফিয়া দলে পরিণত হয়েছে। দেশকে সাংবিধানিক সংকটে ফেলেছে। গোটা জাতি আজ মাফিয়াদের কব্জায়। আজকে কেবল গরম গরম বক্তৃতা দিয়ে হাসিনাকে গালাগাল করলে হবে না।
এনডিএম সভাপতি ববি হাজ্জাজ বলেন, এককালে এ দেশ ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদীদের হাতে চলে গিয়েছিল। এখন এই দেশ আরেক সম্রাজ্যবাদীদের নজরে। যে কোনো সময় একটি সাম্রাজ্যের হাতে চলে যেতে পারে। তাই যে যেভাবে পারেন, সবাইকে একসঙ্গে দাঁড়াতে হবে। কিন্তু এটা সবাই পারছি না বলেই হচ্ছে না। এই দেশের রাজনীতিবিদরা পারে না। আমরা পারি গলাবাজি করতে। একবার এটা বলতে পারি না; সবাই আসেন, একসঙ্গে আন্দোলন করি। আর এজন্যই আওয়ামী লীগ এমনটা করতে পারছে। অথচ ছোট ছোট বাচ্চারা একত্রিত হয়ে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের মাধ্যমে দেখিয়ে দিয়েছে, তারাও পারে। তাই সব বিরোধী দলকে একসঙ্গে দাঁড়াতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে বড় রাহাজানি শুরু হবে আর মাত্র ৯ দিন পরে। এই ৯ দিন করবেন কি- সেই প্রশ্ন করেন।
এবি পার্টির আহ্বায়ক সোলাইমান চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে ভারতের অঙ্গরাজ্য করার মিশনে নেমেছে। ভারতের ৪০ জন প্রার্থী এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। যেটা প্রমাণ করে যে, এই নির্বাচন ভারত পরিচালিত করছে।
Leave a Reply