মিলন কান্তি দাস, নলছিটি,ঝালকাঠি।। নলছিটিতে ঘুষের টাকা দিয়েও ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় পরিবার গুলো সরকারি সাহায্য পাননি বলে অভিযোগ বাছাই কমিটির এক ট্যাগ অফিসারের বিরুদ্ধে।
উপজেলার মগড় ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের মহিলা ইউপি সদস্য আশা আক্তার ও ময়না বেগম ট্যাগ অফিসার উজ্জ্বল কৃষ্ণ বেপারীর বিরুদ্ধ এ অভিযোগ করে। মঙ্গ ৮ অক্টোবর মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে তারা লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযুক্ত কর্মকর্তা হলেন, সদ্য সাবেক উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা উজ্জল কৃষ্ণ বেপারী। তিনি সদ্য হেড অফিস বদলি হয়ে নলছিটি ছেড়ছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রেমালে উপজেলার মগড় ইউপির এক শত বায়ান্ন (১৫২) জন ক্ষতিগ্রস্তরা আবেদন দাখিল করেন। আবেদন যাছাই বাছাই করতে ট্যাগ অফিসার উজ্জ্বল কৃষ্ণ বেপারীকে মৌখিক নির্দেশে দেন উপজেলা নির্বার্হী অফিসার। জমা দেয়া নামের তালিকা সরেজমিনে যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সরজমিনে যান উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা উজ্জ্বল কৃষ্ণ বেপারী। ইউপি সদস্যদের দেওয়া তালিকা বাছাইয়ে ঠিক রাখার আশ্বাস দিয়ে ওই কর্মকর্তা ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে জনপ্রতি এক হাজার টাকা করে ঘুষ নেন। ইউপি সদস্যরা ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে ওই ঘুষের টাকা তুলেন। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে টিন ও টাকার চেক বন্টনকালে ইউপি সদস্যদের দেওয়া তালিকার অনেকেই এই সাহায্য পায়নি। ঘুষের টাকা দিয়েও সাহায্য না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো।
মগড় ইউনিয়নের সংরক্ষিত আসনের ইউপি সদস্য আশা আক্তার অভিযোগ দেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন , ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত ১৫ জনের নামের তালিকা ইউএনও( উপজেলা নির্বাহী অফিসার) স্যারের মৌখিক নির্দেশে তার কাছে জমা দেন তিনি । সরেজমিনে যাচাইয়ে তা ঠিক রাখার জন্য ট্যাগ অফিসার উজ্জল কৃষ্ণ বেপারীকে জনপ্রতি এক হাজার টাকা করে পনের জনের জন্য ১৫( পনের) হাজার টাকা দেন তিনি । কিন্তু তার দেওয়া তালিকার ক্ষতিগ্রস্তরা কেউ সাহায্য পায়নি। এতে ক্ষতিগ্রস্তরা তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়েছেন। তারা ভাবছেন তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তিনি ওই কর্মকর্তাকে টাকা দেননি। তিনি আরও জানান, ওই কর্মকর্তা ইউনিয়নের ১২ জন ইউপি সদস্যের কাছ থেকেই ওই হারে টাকা নিয়েছেন। এখন হয়তো অনেকেই তা স্বীকার করবেন না।
অপর ইউপি সদস্য ময়না বেগম জানান, তিনি ৫জন ক্ষতিগ্রস্তের জন্য ওই কর্মকর্তাকে ৫০০০ টাকা দিয়েছেন। তারাও কেউ সাহায্য পায়নি।
অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত কর্মকর্তা উজ্জ্বল কৃষ্ণ বেপারী সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, সরেজমিনে গিয়ে যাদের ঘরবাড়ির অবস্থা অত্যন্ত খারাপ দেখেছি, তাদের নাম ঠিক রেখে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে তালিকা দিয়েছি। তাতে অভিযোগকারী ওই মেম্বার সাহেবদের দেওয়া তালিকা থেকে যারা সাহায্য পাওয়ার যোগ্য তাদের কয়েকজনের নামও দিয়েছি। কিন্তু কেন তারা সাহায্য পায়নি তাতো আমি বলতে পারব না। আমিতো চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষ নই। আমি শুধু যাচাই বাছাই করেছি। ইউএনও স্যার চূড়ান্ত সিন্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, মেম্বর সাহেবদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে তারা এসব কথা বলছেন।
নলছিটি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নজরুল ইসলাম অভিযোগ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, সমস্ত উপজেলায় রেমালে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে টিন ও টাকার চেক স্বচ্ছভাবে বন্টন করা হয়েছে। যেটা সবাই জানে। আমি ওই কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করেছি। তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। এরপর ওই মেম্বার সাহেবদেরকে বলেছি যদি একান্ত ক্ষতিগ্রস্ত কেউ সাহায্য না পেয়ে থাকেন, তাদের জন্য ব্যবস্থা করা হবে।
Leave a Reply