নিজস্ব প্রতিনিধিঃঃ বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার লতা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান নেহালের বিরুদ্ধে জন্মনিবন্ধনে অতিরিক্ত টাকা আদায়, সদস্যদের (মেম্বার) সম্মানী ভাতার টাকা আত্মসাৎ ও দুস্থদের ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।সোমবার (৮ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে নগরীর বিবিরপুকুর পাড় সংলগ্ন বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে লতা ইউনিয়ন পরিষদের পাঁচ সদস্য সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন।

অভিযোগকারীরা হলেন-লতা ইউনিয়ন পরিষদের ১ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. স্বপন, ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. তাজুল ইসলাম, ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আলমগীর কাজী, ৭ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য মো. আলী হোসেন বিশ্বাস এবং ৭, ৮ ও ৯ নম্বর সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড সদস্য হেনা বেগম।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মো. তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, জন্মনিবন্ধন করতে জনপ্রতি ৫২ টাকা নেওয়ার নিয়ম থাকলেও জনগণের কাছ থেকে ৫০০ থেকে দুই হাজার করে টাকা নিচ্ছেন চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান। এভাবে তিনি প্রায় ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, ১০ টাকা কেজি সরকারি চাল পেতে কার্ডপ্রতি চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন চেয়ারম্যান। এমনকি একই পরিবারে একাধিক কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। এলজি এসপির বরাদ্দের টাকা রাস্তা, কালভার্ট, পুল নির্মাণ কার্যক্রমে ব্যয় না করে ৯০ ভাগ টাকা ব্যক্তির নামে টিউবওয়েল দিয়ে প্রায় ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

মেম্বারদের অভিযোগ, নন-ওয়েজ প্রকল্পের টাকা কোথায় কীভাবে ব্যয় হয়েছে তা কেউ জানে না। ৪০ দিনের কর্মসূচি প্রকল্পের ১০ ভাগ কাজ করা হয়নি। অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের টাকা জাল-জালিয়াতি করে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান নেহাল।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সরকারি নিয়মে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রতি মাসে একজন ইউপি সদস্যের সম্মানী ভাতা চার হাজার ৪০০ টাকা। তবে সাড়ে চার বছরে তারা একেকজন ১২ হাজার টাকা করে পেয়েছেন। সম্মানী ভাতা বাবদ তাদের জনপ্রতি দুই লাখ ৩৭ হাজার ৬০০ টাকা পাওনা রয়েছে। এসব টাকা পরিশোধ না করে প্রতি বছর বাজেট সভায় ভাতার টাকা পরিশোধ দেখানো হয়েছে।

মেম্বার তাজুল ইসলাম বলেন, করোনা মহামারি চলাকালীন মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় মোট ৪৩৯ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ২৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তা ইউনিয়নে কোথায় কীভাবে বরাদ্দ বা বিতরণ হয়েছে তার কোনো হদিস নেই। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গরিবদের জন্য ত্রাণ সহায়তা দেয় বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন জোনাল অফিস। তবে ইউনিয়নের অনেক দুস্থ তা পাননি।

এসব অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে গত ৬ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং গত ১৭ আগস্ট জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ মেম্বারদের।

সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন লতা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান নেহাল। তিনি বলেন, কয়েকজন মেম্বার সেসব অভিযোগ করেছেন, তা সবই মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তাদের বানোয়াট কথামতো আমি যদি দুর্নীতি করেও থাকি, তাহলে তারাও তো জড়িত। তবে সবই ষড়যন্ত্র। সামনে নির্বাচন। তাই একটি পক্ষ পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা প্রচারণা করছে।

ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান নেহালের বিরুদ্ধে মেম্বারদের করা অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে মেহেন্দিগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহাদাত হোসেন মাসুদের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হয়। তবে তিনি কল রিসিভ করেননি।