নিজস্ব প্রতিবেদকঃঃ জমিসহ আধা পাকা দোকানঘর দখল করতে বরিশালের উজিরপুর পৌর সদরে মাকে পিটিয়ে আহত করেছে সৎ ছেলেরা। এমনকি মারধরের পর মা রাশিদা বেগমের (৪০) ভোগ দখলীয় দোকানসহ বসতঘরে লুটপাট চালিয়ে তাতে তালা লাগিয়ে দেয় অভিযুক্ত সৎ ছেলেরা।সোমবার (১০ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পৌর সদরের ৪নং ওয়ার্ডস্থ মুক্তিযোদ্ধা ভবন সংলগ্ন এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। সৎ ছেলেদের মারধরে আহত রাশিদা বেগম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, রাশিদা বেগম নামের ওই নারী উজিরপুর পৌর সদরের ৪নং ওয়ার্ডস্থ লিচুতলা নামক স্থানের মৃত আলমগীর হাওলাদারের দ্বিতীয় স্ত্রী। প্রায় ২৪ থেকে ২৫ বছর আগে আলমগীর সরদারের প্রথম স্ত্রী মারা যান। প্রথম স্ত্রীর মো. আনিছুর রহমান সোহেল ও মো. ইউসুফ হাওলাদার স্বপন নামে দুই ছেলে রয়েছে। ছেলেরা বড় হয়ে চাকুরির সুবাদে বাড়িতে না থাকায় আলমগীর একাকীত্ব হয়ে পড়েন। এরপরই আলমগীর হাওলাদার প্রায় ১২ বছর আগে রাশিদা বেগমকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, আলমগীর হাওলাদার তার পৈত্রিক সম্পত্তিতে (পৌর সদরের লিচুতলা) একটি আধা পাকা টিনসেড দোকানঘর নির্মাণ করে দ্বিতীয় স্ত্রী রাশিদাকে নিয়ে বসবাস করতেন। দোকানঘরটির সামনের অংশে চা বিক্রি করতেন রাশিদা বেগম এবং পেছনের অংশে তারা বসবাস করতেন। ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি আলমগীর হাওলাদার ওই আধা পাকা টিনসেড দোকানঘরটি স্ত্রী রাশিদা বেগমকে লিখে দেন। এর কয়েক বছর পরই আলমগীর হাওলাদার স্ট্রোকের কারণে বিকলাঙ্ক হয়ে যান। তারপর দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী থেকে তিনি ২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। সেই থেকে স্বামীর আধা পাকা দোকানঘরে চা বিক্রি করে বসবাস করছিলেন রাশিদা বেগম। সম্প্রতি ওই জমিসহ দোকানঘর দখলের জন্য রাশিদাকে ভয়-ভীতিসহ নানা ধরনের ঝামেলা শুরু করেন দুই ছেলে সোহেল ও স্বপন এবং তাদের মামা রাজ্জাক সরদার। যার প্রেক্ষিতে এদের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর রাশিদা বেগম বাদী হয়ে বরিশাল বিজ্ঞ এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১০৭ ধারায় একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকে সৎ ছেলেদের সাথে রাশিদার বিরোধ চলে আসছিলো।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ভুক্তভোগী রাশিদা বেগম জানান, পূর্ব বিরোধের জের ধরে সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে দোকানঘরে গিয়ে ছেলে সোহেল, স্বপন, তাদের মামা রাজ্জাক সরদার ও সোহেলের স্ত্রী মেঘলা তাকে গালিগালাজ শুরু করেন। এর প্রতিবাদ করায় ছেলেসহ অন্যরা মিলে রাশিদাকে মারপিট করতে থাকে। এ সময় তার ডাক-চিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে আসেন এবং তাকে উদ্ধার করে আহত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। পরবর্তিতে দুই সৎ ছেলেসহ অন্য অভিযুক্তরা মিলে দোকানঘরে লুটপাট চালিয়ে নগদ টাকা ও মালামাল নিয়ে দোকানঘরে তালা লাগিয়ে দেয়।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) রাতে আহত রাশিদা বেগম বাদী হয়ে অভিযুক্ত সৎ ছেলে ও তাদের সহযোগীদের বিরুদ্ধে উজিরপুর মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগ সম্পর্কে জানতে রাশিদা বেগমের সৎ ছেলেদের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে উজিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলী আর্শাদ জানান, ওই নারী ও তার প্রতিপক্ষরা পরস্পরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ দুটির তদন্ত চলছে, ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।