যেআজকাল ডেস্ক।।দুনিয়া মানুষের বিচরণ ক্ষেত্র। তাও আবার সংক্ষিপ্ত সময়ের বিচরণ ক্ষেত্র এটি। আজ আছে তো কাল নেই। কেউ জন্ম নিচ্ছে আবার কেউ মারা যাচ্ছে। জন্ম-মৃত্যুর এ মঞ্চে মানুষের জীবন যেন এক রঙিন সুতোয় মোড়ানো। এ জীবনেই মানুষ খুঁজে ফেরে সফলতা।
জীবনের প্রতিটি ধাপে সফলতা লাভে কুরআনে রয়েছে অনেক নসিহত ও কর্মপদ্ধতি। যার যথাযথ বাস্তবায়নে মানুষ মানজিলে মাকসুদে পৌছতে সক্ষম হয়। কি ঘরে, কি বাইরে, কি শিশুর শিক্ষালয়, কি বিশ্ববিদ্যালয়, কি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে, কি চাকরিস্থলে। কি হাসপাতালে কি ওষুধ কারখানায়। কি পায়ে হাটা রাস্তায় কি যানবাহনে। কি সুস্থতা, কি অসুস্থতায়।
প্রতিটি পদক্ষেপেই রয়েছে মহান আল্লাহর ওপর আস্থা এবং বিশ্বাসের প্রভাব। এ আস্থা ও বিশ্বাসই মানুষকে ধাপে ধাপে সফলতার পথ দেখতে পায়। জীবনের এ সব ক্ষেত্রে সফলতা লাভে রয়েছে কুরআনের একটি বিশেষ দোয়ার প্রভাব। যার ভাব-ভাষায়ও তা সুস্পষ্ট। সবখানেই প্রযোজ্য এ দোয়া।
যুগে যুগে ইসলামিক স্কলাররাও এ দোয়ার ধরণা দিয়েছেন। লাভ করেছেন চূড়ান্ত সফলতা। এ যে মহান প্রভুর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য সাহায্য প্রার্থনার এক টুকরো পরশ পাথর। বান্দা প্রতিটি পদে পদে বলবে-
رَّبِّ أَدْخِلْنِي مُدْخَلَ صِدْقٍ وَأَخْرِجْنِي مُخْرَجَ صِدْقٍ وَاجْعَل لِّي مِن لَّدُنكَ سُلْطَانًا نَّصِيرًا
উচ্চারণ : রাব্বি আদখিলনি মুদখালা সিদকিও ওয়া আখরিঝনি মুখরাঝা সিদকিও ওয়াঝআললি মিল্লাদুংকা সুলত্বানান নাসিরা।’ (সুরা বনি ইসরাঈল : আয়াত ৮০)
অর্থ : হে আমার প্রভু! আমাকে যেখানে প্রবেশ করাবেন, কল্যাণের সঙ্গে প্রবেশ করাবেন। আর যেখান থেকে বের করবেন (তাও) কল্যাণের সঙ্গে বের করবেন। আর আমাকে আপনার কাছে এমন বিশেষ ক্ষমতা দান করবেন, যার সঙ্গে (আপনার) সাহায্য থাকবে।’
মানুষের প্রার্থনা যদি এমন প্রাণবন্ত ও আবেগময় হয়, তবে সে আবেগ ও প্রাণবন্ত আবেদন আল্লাহর দরবারে কবুল হবে ইনশাআল্লাহ।
মহান আল্লাহ মানুষের হৃদয়ের হাহাকারই চান। কার অন্তরে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা ও আবেগ কতবেশি তাই দেখেন। যার ভালোবাসা ও আবেগ বেশি হবে তার প্রার্থনাই আল্লাহর দরবারে কবুল হবে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়ার সুখ-দুঃখ প্রতিটি বিষয়ে আল্লাহর কাছে একান্ত হৃদয়ে ধরণা দেয়ার তাওফিক দান করুন। প্রতিটি পদে পদে সফলতা লাভ করার তাওফিক দান করুন। জীবনে সফলতা দান করুন। ব্যর্থতা থেকে মুক্ত রাখুন। আমিন।
একের পর এক বিপদ আসছে। বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলছে। আমাদের দেশেও মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে আমাদের আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনতা অবলম্বন ও ধৈর্য প্রদর্শন করতে হবে। মহামারির এই দিনগুলোতে আমাদের ধৈর্যধারণ করে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে।
একজন মুমিন জীবনের সব ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ করেন আর এটিই ইসলামের শিক্ষা। ঈমানদারদের সর্বাবস্থায় ধৈর্যধারণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেন-
‘হে ঈমানদাররা! তোমরা ধৈর্যধারণ কর, ধৈর্যে প্রতিযোগিতা কর এবং সর্বদা আল্লাহর পথে প্রস্তুত থাক, আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’ (সুরা-আল ইমরান : আয়াত ২০০)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম একবার আনসারদের কিছু লোককে বলেন, ‘আর যে ব্যক্তি ধৈর্যধারণ করে তিনি (আল্লাহ) তাকে ধৈর্যশীলই রাখেন। আর যে অমুখাপেক্ষী হতে চায়, আল্লাহ তাকে অভাবমুক্ত রাখেন। ধৈর্যের চেয়ে বেশি প্রশস্ত ও কল্যাণকর কিছু কখনও তোমাদের দান করা হবে না।’ (বুখারি)
হজরত আবু সাঈদ খুদরি ও হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মুসলিম ব্যক্তির ওপর যে কষ্ট-ক্লেশ, রোগ-ব্যাধি, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানি আসে, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে ফোটে, এসবের মাধ্যমে আল্লাহ তার গোনাহগুলো ক্ষমা করে দেন।’ (বুখারি)
ধৈর্য ধারণে যে দোয়া করব
মুমিন মুসলমান বিপদ-আপদে বিচলিত হয় না বরং ধৈর্যধারণ করে এবং আল্লাহর দরবারে এভাবে দোয়া করে-
– رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَتَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ
‘রাব্বানা আফরিগ আলাইনা সাবরাও ওয়া তাওয়াফফানা মুসলিমিন।’ (সুরা আরাফ: আয়াত ১২৬)
অর্থ: হে আমাদের প্রভু-প্রতিপালক! তুমি আমাদের প্রতি ধৈর্য অবতীর্ণ কর আর আত্মসমর্পণকারী অবস্থায় মৃত্যু দাও।’
– ربَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِي أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ
‘রাব্বানাগ ফিরলানা যুনুবানা ওয়া ইসরাফানা ফি আমরিনা ওয়া সাব্বিত আকদামানা ওয়াংসুরনা আলাল কাওমিল কাফিরিন।’ (সুরা আল-ইমরান : আয়াত ১৪৭)
অর্থ: ‘হে আমাদের প্রভু-প্রতিপালক! আমাদেরকে আমাদের পাপ ও আমাদের কাজের মধ্যকার বাড়াবাড়ি ক্ষমা কর। আর আমাদের পদক্ষেপকে দৃঢ়প্রতিষ্ঠিত কর আর অস্বীকারকারী জাতির বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য কর।
ধৈর্য ধারণকারীদের জন্য সুসংবাদ
যারা ধৈর্যশীল তাদের জন্য আল্লাহ তাআলা সফলতার সুসংবাদ দিয়েছেন। ভয়, ক্ষুধা, ধন-সম্পদ ও জীবনের ক্ষয়-ক্ষতির মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা মুমিনদের পরীক্ষা করেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
‘আমি তোমাদের কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব। তুমি সংবাদ দাও ধৈর্যশীলদের, যারা তাদের ওপর বিপদ আপতিত হলে বলে- ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ আমরা তো আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চিতভাবে তার দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী। এদের জন্যই রয়েছে এদের প্রভুর পক্ষ থেকে অনেক আশিস ও কৃপা আর এরাই হেদায়াতপ্রাপ্ত।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫৫-১৫৭)
সুতরাং বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনতা অবলম্বন করা এবং ধৈর্যধারণ করার বিকল্প নেই। বিশেষ করে যারা মহামারি করোনায় আক্রান্ত, তারা এবং পরিবারবর্গের মধ্যে যারা আক্রান্ত তাদের ধৈর্যধারণ করা জরুরি। পাশাপাশি অন্যদের ধৈর্যধারণের পরামর্শ দেই এবং তাদের সাহস জোগাই।
ময় প্রভুর দরবারে বিনীত প্রার্থনা, হে আল্লাহ! তুমি মুসলিম উম্মাহকে মহামারি করোনাভাইরাসের দিনগুলোতে এবং অন্যান্য বিপদে সর্বাবস্থায় সর্বোচ্চ ধৈর্যধারণ করার তাওফিক দান কর। তোমার রহমতের ছায়ায় সবাইকে স্থান দাও।
Leave a Reply