বিষখালী নদী তীরবর্তী ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ায় বেড়িবাঁধ রক্ষার পাইলিংয়ে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসী বলছে, বেলে মাটির ধসেপড়া বেড়িবাঁধ রক্ষায় পাইলিংয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে পুরাতন গাছ ও শুকনো চিকন বাঁশ। তাও আবার এলোমেলো বসিয়ে পাইলিং করা হচ্ছে। এনিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে বেড়িবাঁধ ও পাইলিংয়ের কাজ করাচ্ছে। এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা কোনো তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, কাঁঠালিয়া উপজেলার বিষখালী নদী তীরবর্তী লঞ্চঘাট এলাকায় বেলে মাটি দিয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। সম্প্রতি উপকূলীয় এলাকায় বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় শক্তির প্রভাবে সেই বালু মাটির বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। সেই ধস ঠেকাতে জরুরি মেরামত প্রকল্পে বেড়িবাঁধের প্রাক্কলন তৈরি করে ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ড। বরিশালের জনৈক কালাম হোসেন নামে এক ব্যক্তিকে এ কাজের ঠিকাদারী দেয়া হয়।
বালু মাটির বাঁধ দুপাশেই ধসে পড়ছে। নদী তীরবর্তী পাড়ে ধসেপড়া বেড়িবাঁধ রক্ষায় উদ্যোগ না নিয়ে ভিতরের দিকে পাইলিং বসানোর কাজ শুরু করে। বেড়িবাঁধ থেকে অন্তত ৩ ফুট দূরে এ পাইলিং দেয়া হচ্ছে। পাইলিংয়ের খুঁটি হিসেবে পুরাতন গাছ, শুকনো ও চিকন বাঁশ এলোমেলোভাবে বসানো হয়েছে।
খুঁটি বসানোর কাজ প্রায় শেষ। খুঁটির সঙ্গে দেয়া হয়েছে মরিচা ধরা ড্রামশিট। ধারণা করা হচ্ছে, কয়েক লাখ টাকা প্রাক্কলিত মূল্যে এ কাজ করানো হচ্ছে। সরকারি নির্দেশনায় টেকসই মানের কাজের নির্দেশ থাকলেও দায়সারাভাবে এ কাজ করা হচ্ছে। এতে সরকারি লাখ লাখ টাকা খরচের মূল উদ্দেশ্য ব্যাহত হবার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কাঠালিয়া লঞ্চঘাট এলাকার নদীর তীরবর্তী বাসিন্দা নাসির উদ্দিন, মাসুদুর রহমানসহ বেশ কয়েকজনে জানান, ভেকু মেশিন দিয়ে নদীর চরের বেলে মাটি কেটে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। যাতে পানির ঢেউ লাগলেই গলে গলে পড়ছে। একারণে বেড়িবাঁধ স্থায়ী হচ্ছে না। বন্যা কিংবা জলোচ্ছ্বাস দেখা দিলেই বেড়িবাঁধে ধস দেখা যায়। জরুরি ভিত্তিতে বেড়িবাঁধের ধস ঠেকাতে পাইলিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়। সেই পাইলিংয়ে রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি। পুরানো গাছ, শুকনো ও চিকন বাঁশ এবং মরিচা ধরা ড্রামশিট ব্যবহার করা হচ্ছে। যা একবছরও টিকবে না বলেও অভিমত জানান তারা।
এব্যাপারে ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী শাহরিয়ার তানভীর বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’র প্রভাবে পানি বেড়ে যাওয়ায় বেড়িবাঁধে ধস দেখা দেয়। বেড়িবাঁধ রক্ষার্থে জরুরি সংস্কার প্রকল্পে ডিজাইন ও পরিকল্পনা করে প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করে পাইলিংয়ের কাজ শুরু করানো হয়। কাজ এখনও চলমান রয়েছে, জিও ব্যাগ ফেলাসহ আরও অনেক কাজ বাকি আছে। কাজের শেষে মূল্যায়ন কমিটি পরিদর্শন করে মতামত দিলে সেভাবেই বিল পাস করা হবে। তবে কাজের দৈর্ঘ্য এবং বরাদ্দের বিষয়টি জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি।
এবিষয়ে ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম নিলয় পাশা বলেন, ‘কাঠালিয়া লঞ্চঘাট এলাকায় বেড়িবাঁধে ধস দেখা দিলে আমরা জরুরি ভিত্তিতে সংস্কারের জন্য কার্যাদেশ দেই। পাইলিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এখনও অনেক কাজ বাকি আছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এই প্রকল্পে আছেন। তিনি জিও ব্যাগ তৈরির পরে তা গণনা করবেন। কাজের মান যাচাই করবেন। তার দেয়া মন্তব্যের ভিত্তিতে বিল প্রদান করা হবে।’
Leave a Reply