বরিশালে ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ নিয়ে সংঘর্ষ, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমানের বাসভবনে হামলা এবং এরপর একাধিক মামলার ঘটনায় বিব্রতকর অবস্থায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও সরকার। দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের মধ্যে সিভিল প্রশাসনের সম্পৃক্ততায় ত্রিমুখী সংকট তৈরি হয়েছে সেখানে। আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন, ‘তুচ্ছ ঘটনাকে ঘিরে সংশ্লিষ্টরা বাড়াবাড়ি করেছেন’। তারা চাইছেন, তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হোক দোষীদের বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে ওই ঘটনার বিষয়ে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, ‘বরিশালের ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, সরকারি কর্তব্য পালন করতে গিয়ে একজন নির্বাহী অফিসার কীভাবে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের দ্বারা হেনস্থা হয়েছেন। আইনের মাধ্যমেই দুর্বৃত্তদের মোকাবিলা করা হবে এবং আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।’
তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেটা হয়েছে, যে পর্যায়ে গিয়েছে—এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। পরিস্থিতি বিচার বিশ্লেষণ করে ঠাণ্ডা মাথায় কাজ করলে এতোদূর গড়াতো না। এখানে যারা সংশ্লিষ্ট, তাদের বাড়াবাড়ি হয়েছে, তা না হলে বিষয়টি এ পর্যায়ে আসতো না
বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) রাতে দেয়া বিজ্ঞপ্তিতে তারা আরও বলেছে, ‘(বরিশাল সিটি করপোরেশনের) মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ও তার দুর্বৃত্ত বাহিনী সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের দিয়ে নানা প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন এবং সমস্ত জেলায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। বরিশালের মেয়র, যার অত্যাচারে সমগ্র বরিশালবাসী অত্যন্ত অতিষ্ঠ, সেই সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর হুকুমেই এই ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।’ অবিলম্বে মেয়রের গ্রেফতার দাবি এবং তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে অঙ্গীকারও ব্যক্ত করেছে তারা।
পুরো ঘটনাটি সারাদেশে তোলপাড় ফেলেছে। বিশেষ করে, অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনেরর সংবাদ বিজ্ঞপ্তি নিয়ে সরগরম স্যোশাল মিডিয়া। নির্বাচিত একজন মেয়র, যিনি আবার মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন, তাকে ও তার অনুসারীদের ‘রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত’ বলে ইঙ্গিত করা এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের মতো মেয়রের অভিযুক্ত করে ‘তার অত্যাচারে সমগ্র বরিশালবাসী অত্যন্ত অতিষ্ঠ’ বলে উল্লেখ করার বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। সিভিল প্রশাসনের একটি সংগঠনের এমন ‘ঝাঁঝালো’ বক্তব্য শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে কি-না তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
এ বিষয়ে অবশ্য আওয়ামী লীগ নেতাদের তেমন প্রতিক্রিয়া নেই। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মাদ ফারুক খান বলেন, ‘সংবিধান সবাইকে সংগঠন করার অধিকার দিয়েছে। তারা তাদের লোকদের পক্ষে বলতেই পারে। তবে, তাদের কথা যে গ্রহণ করতেই হবে, এমন কিছু নয়।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘বিষয়টি ছিল মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুকের মধ্যকার রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার দ্বন্দ্ব। এটি সারাদেশেই আছে। ঘটনাচক্রে এখানে যুক্ত হয়ে গেছে প্রশাসন। মূলত মেয়রের লোকজন প্রতিমন্ত্রীর ফেস্টুন ছিঁড়তে গিয়েই এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে।’
Leave a Reply