বরিশালে ইউএনও বাসভবনে হামলার ঘটনায় বিব্রতকর অবস্থায় ক্ষমতাসীন দল বরিশালে ইউএনও বাসভবনে হামলার ঘটনায় বিব্রতকর অবস্থায় ক্ষমতাসীন দল – ajkalbd24.com
  1. admin@ajkalbd24.com : admin : H.M Aslam
  2. akazadjm@gmail.com : A K Azad : A K Azad
  3. ajkalbd24.com@gmail.com : ajkalbd24 : Niaz Mohammad
  4. hafijakhan804@gmail.com : ajkal1 : ajkal1
রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫, ১২:৫৫ অপরাহ্ন

বরিশালে ইউএনও বাসভবনে হামলার ঘটনায় বিব্রতকর অবস্থায় ক্ষমতাসীন দল

আজকাল ডেস্ক :
  • আপডেটের সময় : শুক্রবার, ২০ আগস্ট, ২০২১
  • ১৭৮ সময় দর্শন

বরিশালে ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ নিয়ে সংঘর্ষ, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমানের বাসভবনে হামলা এবং এরপর একাধিক মামলার ঘটনায় বিব্রতকর অবস্থায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও সরকার। দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের মধ্যে সিভিল প্রশাসনের সম্পৃক্ততায় ত্রিমুখী সংকট তৈরি হয়েছে সেখানে। আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন, ‘তুচ্ছ ঘটনাকে ঘিরে সংশ্লিষ্টরা বাড়াবাড়ি করেছেন’। তারা চাইছেন, তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হোক দোষীদের বিরুদ্ধে।

অন্যদিকে ওই ঘটনার বিষয়ে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, ‘বরিশালের ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, সরকারি কর্তব্য পালন করতে গিয়ে একজন নির্বাহী অফিসার কীভাবে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের দ্বারা হেনস্থা হয়েছেন। আইনের মাধ্যমেই দুর্বৃত্তদের মোকাবিলা করা হবে এবং আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।’

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেটা হয়েছে, যে পর্যায়ে গিয়েছে—এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। পরিস্থিতি বিচার বিশ্লেষণ করে ঠাণ্ডা মাথায় কাজ করলে এতোদূর গড়াতো না। এখানে যারা সংশ্লিষ্ট, তাদের বাড়াবাড়ি হয়েছে, তা না হলে বিষয়টি এ পর্যায়ে আসতো না

বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) রাতে দেয়া বিজ্ঞপ্তিতে তারা আরও বলেছে, ‘(বরিশাল সিটি করপোরেশনের) মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ও তার দুর্বৃত্ত বাহিনী সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের দিয়ে নানা প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছেন এবং সমস্ত জেলায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। বরিশালের মেয়র, যার অত্যাচারে সমগ্র বরিশালবাসী অত্যন্ত অতিষ্ঠ, সেই সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর হুকুমেই এই ঘটনা সংঘটিত হয়েছে।’ অবিলম্বে মেয়রের গ্রেফতার দাবি এবং তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে অঙ্গীকারও ব্যক্ত করেছে তারা।

পুরো ঘটনাটি সারাদেশে তোলপাড় ফেলেছে। বিশেষ করে, অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনেরর সংবাদ বিজ্ঞপ্তি নিয়ে সরগরম স্যোশাল মিডিয়া। নির্বাচিত একজন মেয়র, যিনি আবার মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন, তাকে ও তার অনুসারীদের ‘রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত’ বলে ইঙ্গিত করা এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের মতো মেয়রের অভিযুক্ত করে ‘তার অত্যাচারে সমগ্র বরিশালবাসী অত্যন্ত অতিষ্ঠ’ বলে উল্লেখ করার বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। সিভিল প্রশাসনের একটি সংগঠনের এমন ‘ঝাঁঝালো’ বক্তব্য শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে কি-না তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।

এ বিষয়ে অবশ্য আওয়ামী লীগ নেতাদের তেমন প্রতিক্রিয়া নেই। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মাদ ফারুক খান বলেন, ‘সংবিধান সবাইকে সংগঠন করার অধিকার দিয়েছে। তারা তাদের লোকদের পক্ষে বলতেই পারে। তবে, তাদের কথা যে গ্রহণ করতেই হবে, এমন কিছু নয়।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, ‘বিষয়টি ছিল মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুকের মধ্যকার রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার দ্বন্দ্ব। এটি সারাদেশেই আছে। ঘটনাচক্রে এখানে যুক্ত হয়ে গেছে প্রশাসন। মূলত মেয়রের লোকজন প্রতিমন্ত্রীর ফেস্টুন ছিঁড়তে গিয়েই এমন কাণ্ড ঘটিয়েছে।’

অবস্থা যেখানে গেছে, আমি মনে করি, যারই দোষ পাওয়া যায়; প্রশাসনের লোক হোক, মেয়র হোক, আইনের আওতায় তাকে নেওয়া উচিত। আইন অনুযায়ী নিষ্পত্তি হওয়া উচিত

জানা যায়, গত বুধবার (১৮ আগস্ট) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের লোকজন অনুমতি ছাড়া সদর উপজেলা কমপ্লেক্সে ঢুকে ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করতে শুরু করে। এ সময় ইউএনওর নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যরা তাদের পরিচয় জানতে চান। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। খবর পেয়ে ইউএনও ঘটনাস্থলে আসেন। সেখানে তিনি সিটি করপোরেশনের লোকদের নিরাপত্তার স্বার্থে প্রশাসনিক এলাকায় রাতে ব্যানার উচ্ছেদ বা অপসারণ অভিযান না চালাতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তারা তা উপেক্ষা করে অপসারণ অভিযান চালাতে থাকে। এ নিয়ে আনসার সদস্যদের সঙ্গে তাদের হাতাহাতি হয়। পরে সিটি করপোরেশনের লোকজনের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যোগ দেন। এরপর সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এতে ক্ষিপ্ত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ইউএনওর সরকারি বাসভবনে হামলা করেন। এসময় হামলা থেকে রক্ষা পেতে আনসার সদস্যরা কয়েক রাউন্ড ফাঁকা রাবার বুলেট ছোড়েন।

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক হাসান আহেমদ ওরফে বাবুর নেতৃত্বে ছাত্রলীগের জেলা কমিটির সহ-সভাপতি আতিকুল্লাহ খান মুনিম, সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিব খান, সাজ্জাদ সেরনিয়াবাতসহ শতাধিক নেতাকর্মী সেখানে যান। এসময় নেতাকর্মীরা ইউএনওর বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। তারা বাসভবনের গেট ভেঙে নিচতলায় ঢোকার চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এলে হামলাকারীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। একপর্যায়ে তারা পুলিশের ওপর চড়াও হন। পরিস্থিতি সামাল দিতে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়। পুলিশ লাঠিচার্জও করে। এ ঘটনায় পুলিশ ও আনসার সদস্যসহ ৩০-৪০ জন আহত হন।

পরে এ ঘটনায় দুটি মামলা হয়। কোতয়ালী মডেল থানায় দায়ের করা মামলা দুটির একটিতে বাদী ইউএনও মুনিবুর রহমান, দ্বিতীয়টিতে বাদী হয় পুলিশ। দুটি মামলায়ই প্রধান আসামি করা হয় মেয়র সাদিক আবদুল্লাহকে।

দেশের আইন অনুযায়ী তদন্ত হচ্ছে। যে দোষী হবে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদি সরকারি কর্মকর্তা ভুল করেন, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা হবে। অতীতে আমরা সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি না? নিয়েছি তো

ঘটনার পরদিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে হামলার ঘটনায় দোষী ও প্ররোচনাকারীদের শাস্তি হবে।’

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আরেক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘ইউএনওর বাসভবনে হামলার ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক, তাদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। তারা যদি আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীও হয়, তবুও ছাড় দেয়া হবে না।’

এ বিষয়ে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘অবস্থা যেখানে গেছে, আমি মনে করি, যারই দোষ পাওয়া যায়; প্রশাসনের লোক হোক, মেয়র হোক, আইনের আওতায় তাকে নেওয়া উচিত। আইন অনুযায়ী নিষ্পত্তি হওয়া উচিত।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর