নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল: মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য বরাদ্দকৃত ঘরের জন্য স্থানীয় এমপির সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ফেঁসে গেছেন পিরোজপুরের ইন্দুরকানী উপজেলার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসাইন মুহাম্মদ আল-মুজাহিদ।
ওই উপজেলায় জাতীয় পার্টির (জেপি) নেতা ইকবাল হোসেন সেপাইয়ের নামে ঘরটি বরাদ্দ দেওয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে। জানা গেছে, জাতীয় পার্টির নেতা ইকবাল হোসেন সেপাই উপজেলার ৩ নম্বর বালিপাড়া ইউনিয়নের বালিপাড়া গ্রামের মো. আলমগীর সেপাইয়ের ছেলে। তার নামে আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়।
পরে ঘরে এয়ার কন্ডিশনার, ডিশ কানেকশন লাগানোর পাশাপাশি ঘরের অবকাঠামো পরিবর্তন করেন ওই নেতা। বিষয়টি নিয়ে গত জুন মাসে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। এ নিয়ে পিরোজপুর জেলা প্রশাসক তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমিহীন ও গৃহহীনদের ঘর দেওয়ার কথা থাকলেও ভূমিহীন পরিবার বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সরকারি নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি। আশ্রয়ণের ঘরে এয়ার কন্ডিশনার লাগানোতে বোঝা যায়, ইকবাল সেপাই প্রকৃত ভূমিহীন নন। এমন কি ইকবাল সেপাই ঘরটি অনুমোদিত নকশা ও প্রাক্কলনের ব্যত্যয় ঘটিয়ে নিজেই নিজের ইচ্ছামতো নির্মাণ করেন।
আর এজন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কর্তৃক সঠিক পর্যবেক্ষন না করা ও দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ এনে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর সুপারিশ করেছেন বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার আমিন উল আহসান।
ওই ঘরটি বরাদ্দের বিভিন্ন নথি পর্যালোচনা করে জানা গেছে, ওই ঘরটি বরাদ্দের জন্য গত ২০২০ সালের ২৫ অক্টোবর পিরোজপুর-২ (ভান্ডারিয়া, কাউখালী ও ইন্দুরকানী) আসনের এমপি জেপি’র চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু স্থানীয় ১৬ জনের নামে ভূমিহীন ও গৃহহীন উল্লেখ করে একটি ডিও লেটার দেন।
ওই ডিও লেটার (ডিও নং ১২৮, পিরোজপুর-২/২০২০/২০৩-১) এর ১১ নম্বর তালিকায় মো. ইকবাল হোসেন সেপাইয়ের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া ইকবাল সেপাই একজন প্রকৃত ভূমিহীন, গৃহহীন ও অস্বচ্ছল বলে (২০ অক্টোবর ২০২০, স্মারক নং-বালিপাড়া/ইউপি/ ২০২০-৩৭) প্রত্যয়ন পত্র দেন স্থানীয় বালিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. কবির হোসেন।
এমন কি ঘর দেওয়ার জন্য উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটির সব সদস্য ইকবাল সেপাইকে ঘর দেওয়ার সুপারিশ করেন। এ ব্যাপারে জানতে ঢাকায় অবস্থানরত (প্রশিক্ষণ) ওই উপজেলার সাবেক ইউএনও হোসাইন মুহাম্মদ আল-মুজাহিদ বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্যের (এমপি) পাঠানো আধা সরকারি চিঠি (ডিও লোটার), ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দেওয়া ভূমিহীন সনদপত্র, আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন সংক্রান্ত টাস্কফোর্স কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে ইকবাল সেপাইকে ঘর দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে জানতে স্থানীয় এমপি আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সঙ্গে কথা বলতে মোবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। ইকবাল সেপাইয়ের পক্ষে প্রত্যয়পত্র দেওয়া ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. কবির হোসেন জানান, যখন তাকে প্রত্যয়পত্র দেওয়া হয়েছিল, তখন ইকবাল সেপাই একজন প্রকৃত ভূমিহীন, গৃহহীন ও অস্বচ্ছল ব্যক্তি ছিলেন।
তবে তিনি পরে বালুর ব্যবসা করে কিছুটা স্বচ্ছল হয়েছেন। ওই ঘর দেওয়ার ব্যাপারে সাবেক ইউএনওর কোনো ব্যক্তিগত কারণ ছিল না। তিনি গৃহ প্রদান টাস্কফোর্স কমিটির সুপারিশে ঘর দিয়েছেন।
Leave a Reply