আজকাল বিডি ডেস্ক।। গাজীপুরে পরাজয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বাকি চারটি সিটিতে কী পরিস্থিতি হয় সেটা নিয়ে এখন পর্যালোচনা করছে দলটি। সবচেয়ে বেশি চিন্তায় আছেন তারা বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নিয়ে।
গাজীপুরে দল থেকে বহিস্কৃত বিদায়ী মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুনকে পাত্তাই দেয়নি আওয়ামী লীগ। তারা ভেবেছিলেন, জাহাঙ্গীরের প্রার্থীতা বাতিল হওয়ায় তার মা আর কোনো ফ্যাক্টর নয়। হেসে খেলে নৌকা প্রতীক নিয়ে আজমত উল্লা খান জয় পেয়ে যাবেন। কিন্তু সেটা হয়নি। আজমত উল্লা পরাজয় মেনে নিয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে অভিহিত করেছেন।
কিন্তু অভিযোগ করেছেন, দলের নেতা-কর্মীরা তার সঙ্গে ‘গাদ্দারি’ করেছেন। এখন আওয়ামী লীগ সেই সব ‘গাদ্দারদের’ চিহ্নিত করার কাজ শুরু করেছে। কিন্তু স্থানীয়রা বলছেন বাস্তব অবস্থা হলো ভোটাররা জায়েদা খাতুনকেই বেছে নিয়েছেন। প্রার্থী বাছাইয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি দলটি। আর স্থানীয় রাজনীতিতে অভ্যন্তরীণ কোন্দল তো আছেই।
গাজীপুরে সাধারণ ওয়ার্ড ৫৭টি। এরমধ্যে বিএনপির বহিস্কৃত প্রার্থীদের ১০ জন সাধারণ ওয়ার্ডে নির্বাচিত হয়েছেন। আর আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা ৪৭ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর হয়েছেন। কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা এত ভালোর করার পরও মেয়র পদে ফেল। এটাই বড় প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
বাকি চার সিটিতে কী হবে?
খুলনা ও বরিশাল সিটিতে নির্বাচনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার সময় শেষ হয়েছে। প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে। এখন চলছে নির্বাচনি প্রচার। এই দুই সিটিতে ভোট হবে ১২ জুন।
রাজশাহী ও সিলেট সিটি নির্বাচনে ১ জুনের মধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাহারের সুযোগ রয়েছে৷ পরের দিন প্রতীক বরাদ্দ ও আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হবে। ভোট হবে ২১ জুন।
বরিশালে চূড়ান্ত মেয়র প্রার্থী হলেন আওয়ামী লীগের আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ, জাতীয় পার্টির মো. ইকবাল হোসেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিম, জাকের পার্টির মিজানুর রহমান বাচ্চু, স্বতন্ত্র কামরুল আহসান রুপম ও আলী হোসেন।
খুলনায় চূড়ান্ত মেয়র প্রার্থী আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক, জাতীয় পার্টির শফিকুল আলম মধু ও ইসলামী আন্দোলন হাফেজ আবদুল আওয়াল।
রাজশাহীতে মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পত্র বৈধ হয়েছে চার জনের । তারা হলেন: আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সদ্য সাবেক সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন, জাতীয় পার্টির সাইফুল ইসলাম, জাকের পার্টির লতিফ আনোয়ার ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. মুরশিদ আলম।
সিলেটে বৈধ প্রার্থীরা হলেন: আওয়ামী লীগের আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান, জাকের পার্টির মো. জহিরুল আলম, স্বতন্ত্র মোহাম্মদ আবদুল হানিফ কুটু ও মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন।
খুলনা এবং রাজশাহীতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের তেমন কোনো সমস্যা দেখছেনা দলটি। কারণ ওই দুই সিটিতে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কোনো প্রার্থী নেই। বিএনপি বা বিএনপির সমর্থনেও কোনো প্রার্থী নেই। ফলে এই দুই সিটিতে অনেকটাই নির্ভার আওয়ামী লীগ। কিন্তু সমস্যা আছে বরিশাল ও সিলেট নিয়ে।
বরিশালে মেয়র পদে এবার গাজীপুরের মতই নতুন প্রার্থী। তিনি হলেন, সদ্য বিদায়ী মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর চাচা আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ। চাচার সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো নয়। তিনি প্রার্থী হিসেবে যেমন নতুন, বরিশালের স্থানীয় রাজনীতিতেও প্রভাবশালী নন। সাদিক আব্দুল্লাহ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি তার কর্মী সমর্থকদের নিয়ে তার চাচা মেয়র প্রার্থী খায়ের আব্দুল্লাহর কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখছেন। তার জন্য কাজও করছেন না। ভোটের হিসেবে তাদের কী অবস্থান হবে তা নিয়ে আওয়ামী লীগে নানা মত আছে।
এই সিটিতে বিএনপির সাবেক মেয়র আহসান হাবীব কামালের ছেলে কামরুল আহসান রুপমও মেয়র প্রার্থী। বরিশালে তার পিতার ব্যাপক প্রভাব আছে। আর বরিশাল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। দলের পক্ষে বরিশালের চরমোনাইর পীর মরহুম সৈয়দ ফজলুল করিমের ছেলে সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিম বরিশালে মেয়র প্রার্থী হয়েছেন। দলটি বরিশালের মেয়র পদটির জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করছে। এখানে তাদের বড় ভোট ব্যাংক আছে। গাজীপুরে তাদের প্রার্থী ৪৫ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছেন। পাঁচ সিটিতেই মেয়র পদে তাদের প্রার্থী আছে। বরিশালের স্থানীয় পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতারা জানান সতর্ক না হলে গাজীপুরের মতো বরিশালেও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর আপসেট হতে পারে।
সিলেটে বিএনপির সদ্য বিদায়ী মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রার্থী হলে আওয়ামী লীগের আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তেন। তবে এখনো তিনি চ্যালঞ্জেমুক্ত নন। কারণ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা তাকে নিতে পারছেন না। তাকে লন্ডন প্রবাসী নেতা হিসেবে উড়ে এসে জুড়ে বসা প্রার্থী মনে করা হচ্ছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের ৭০ ভাগ নেতা-কর্মী তার সঙ্গে এখনো নেই।
স্থানীয় সূত্র জানায়, কাউন্সিলর পদে সব ওয়ার্ডেই বিএনপির প্রার্থী আছে। তাদের জন্য যদি বিএনপি-জামায়াতের ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যান তাহলে সেই ভোট চলে যাবে জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলাম বাবুলের বাক্সে। আর এর সঙ্গে যদি স্থানীয় আওয়ামী লীগের নিরব বিরোধিতা অব্যাহত থাকে তাহলে এখানেও গাজীপুরের মতো ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘‘গাজীপুরে আমাদের বিশ্বাস ভঙ্গ হয়েছে। কেউ কেউ বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন। তাই আমাদের মেসেজ হচ্ছে বাকি চারটি সিটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে আমাদের প্রার্থীরা জিতবেন।”
তার কথা, ‘‘এই নির্বাচনে বিএনপি থাকলে গাজীপুরে এমন ঘটনা ঘটতো না। তখন সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকতেন। বিএনপি না থাকায় স্থানীয় পর্যায়ে নানা হিসাব ও সম্পর্ক কাজ করেছে।”
বাকি চার সিটির মধ্যে খুলনা ও রাজশাহীতে কোনো সমস্যা নেই বলেও মনে করেন এস এম কামাল হোসেন৷ তিনি বলেন, ‘‘বরিশাল ও সিলেটে কিছু সমস্যা আছে। এই জন্য ওই দুই সিটিতে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী কেন্দ্রীয় টিম সেখানে গিয়ে কাজ করছে। ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। এটাই হলো আসল কথা।”
আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন বলেন,” গাজীপুরের সঙ্গে অন্য চার সিটিকে মেলালে চলবে না। একেক জায়গার প্রেক্ষাপট ও পরিস্থিতি একেক রকম। যেখানকার যে পরিস্থিতি আমরা সেখানে সেইভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
তিনি বলেন, ‘‘মেয়র পদে আজমত উল্লা না জিতলেও গাজীপুর আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। বিএনপির প্রার্থী ছিলো না। আর ভোট আওয়ামী লীগের বাইরে চলে যায়নি। কাউন্সিলর ৯০ ভাগ আমাদের পাস করেছেন। এটাই তার বড় প্রমাণ।”
বরিশালে সিনিয়র নেতারা কাজ করছেন আর সিলেটে সমস্যা কেটে গেছে দাবি করে এই নেতা আরো বলেন, ‘‘বরিশালে আমাদের নেতা আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ কাজ করছেন। আমি নিজে একাধিকবার সিলেটে গিয়েছি। সিলেটের প্রার্থী ডয়ানামিক। তিনি সবার মন জয় করেছেন। খুলনা এবং রাশাহীতে কোনো সমস্যা নেই। আমরা চার সিটিতে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।
Leave a Reply