বরিশাল:: বরিশাল কোতয়ালি থানার সাবেক পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মো. ফিরোজ কবির এবং তার স্ত্রী সাবরিনা আহমেদ ইভাকে মানিলন্ডারিং আইনের একটি মামলায় কারাদণ্ড দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। আজ বুধবার ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে আদালত মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪(২) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে ফিরোজ কবিরের ৬ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির দ্বিগুণ মূল্যের সমপরিমাণ ১ কোটি ৭৪ লাখ ৩৪ হাজার ৩৮৮ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন।
সাজাপ্রাপ্ত ফিরোজ পুলিশ পরিদর্শক (নি.) বরিশাল জেলা, (সাবেক উপ-পুলিশ পরিদর্শক, গুলশান বিভাগ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ)। অন্যদিকে ফিরোজ কবিরের স্ত্রী সাবরিনা আহমেদ ইভার একই আইনে ৪ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন।
রায়ে আসামি ফিরোজ কবির কর্তৃক অর্জিত অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তি অর্থাৎ ৮৭ লাখ ১৭ হাজার ১৯৪ টাকার সম্পত্তি মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪(৩) ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রের অনুকুলে বাজেয়াপ্ত করেছেন আদালত। রায়ে আসামি ফিরোজ কবিরকে প্রদত্ত অর্থদণ্ডের টাকা রায়ের দিন হতে ৬০ কার্যদিবসের মধ্যে পরিশোধের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। ব্যর্থতায় তা দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর ১৮৯৮ এর ৩৮৬ ধারা অনুযায়ী আদায়যোগ্য হবে।
মামলায় বলা হয়, আসামি ফিরোজ কবির ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি হতে ২০১৬ সালের ৩১ মে র্পযন্ত এবি ব্যাংক গুলশান শাখার, ডাচ বাংলা ব্যাংক, গুলশান শাখার, এনআরবি কর্মাশিয়াল ব্যাংকের গুলশান শাখার, ইসলামী ব্যাংক, গুলশান শাখা, ব্রাক ব্যাংক, গুলশান শাখার চলতি হিসাবের এবং তার স্ত্রী সাবরিনা আহমদে ইভার নামে পরিচালিত ডাচ বাংলা ব্যাংকের গুলশান শাখার হিসাবে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সর্বমোট ৩০৯ দশমিক ৯৭ লক্ষ টাকা জমা করেন। তাদের ব্যাংক হিসাবসমূহে পেশার সঙ্গে অসামঞ্জস্যর্পূণ বিপুল অঙ্কের লনেদের সম্পন্ন হয়েছে। অধিকাংশ হিসাব খোলার সময় ফিরোজ কবির অর্থের উৎস চাকরি দেখিয়েছেনে।
কিন্তু যে ধরনের ও যে অঙ্কের লেনদেন হয়েছে তা বেতন ভাতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। অর্থের উৎস সম্পর্কে অভিযুক্তরা কোন সন্তোষজনক ব্যাখ্যা বা প্রমাণ দাখিলে ব্যর্থ হয়েছেন। এতে প্রাথমকিভাবে প্রমাণিত হয় যে, জমাকৃত উক্ত অর্থ মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ২(শ) ধারায় উল্লখিতি ‘র্দুনীতি ও ঘুষ’ সংক্রান্ত সম্পৃক্ত অপরাধলব্ধ। উক্ত হিসাবসমূহের লেনদেন পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, ফিরোজ কবিরও তার স্ত্রী সাবরিনা আহমদে ইভার সঞ্চয়ী এবং চলতি হিসাবসমূহে ছোট ছোট অঙ্কে রাউন্ড ফিগারে অর্থ জমা করা হয়েছে।
সন্দেহজনক উৎস থেকে এসব অর্থ জমাকরণের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং এর প্রথম ধাপ সংযোজন বা প্লেসমেন্ট সম্পন্ন হয়েছে। তহবিলের উৎস ‘পার্সোনাল প্রপার্টি’ দেখিয়ে ফিরোজ কবির এবি ব্যাংকে আটটি এফডি আর হিসাব খোলেন। এসব ‘পার্সোনাল প্রপার্টি’ এর স্বপক্ষে কোন দলিল পাওয়া যায়নি। প্রকৃতপক্ষে একই ব্যাংকের সঞ্চয়ী হিসাব থেকে টাকা ট্রান্সফার করে এ সকল হিসাব খোলা হয়। কাজেই এ সকল হিসাব খোলার সময় অর্থরে উৎস গোপনের প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হয়। এভাবে চলতি ও সঞ্চয়ী হিসাবে প্রাথমিকভাবে জমাকৃত অর্থ ট্রান্সফার করে বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআর/টার্ম/ ডিপোজিট স্কীম হিসাব খোলা হয়। সেসব হিসাব মেয়াদান্তে এবং কখনো মেয়াদ পূর্তির পূর্বইে নগদায়ন করে সঞ্চয়ী বা চলতি হিসাবে জমা করা হয়। এভাবে সংযোজিত অর্থের উৎস গোপনে অভিপ্রায়ে পর্যায়ক্রমে জটিল লেনদেনের মাধ্যমে বিভিন্ন স্তরে সরানোর মাধ্যমে মানলিন্ডারিং এর ‘স্তরিকরণ বা লেয়ারিং’ পর্যায় সম্পন্ন হয়েছে।
ফিরোজ কবির ও তার স্ত্রী সাবরিনা আহমদে ইভা খুবই অল্প সময়রে ব্যবধানে বিপুল সম্পদ র্অজন করছেন। তাদের অর্জিত সম্পদের মধ্যে অনুসন্ধানে ইতিমধ্যে প্রাপ্ত সম্পদসমূহ হলো-ফিরোজ কবিরের নামে গুলশানের শাহজাদ পুরে এন. জি. জাফর নিবাসনামীয় ০৯ তলা ইমারতের ৭ম তলার ১০০০ বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাট এবং সাবরিনা আহমেদ ইভার নামে একই ঠিকানার ৭ম তলার ১০০০ বর্গফুট আয়তনের এবং একই তলার ১১০০ বর্গফুট আয়তনের ও ৯ম তলায় ৯০০ বর্গফুট আয়তনের মোট তিনটি ফ্ল্যাট, সর্বমোট চারটি ফ্ল্যাট যার দালিলিক মূল্য ৮৩ দশমিক ৯৮ লাখ টাকা। ঢাকা মেট্টো -গ-২৩-১৯৯২ নং মোটরগাড়ি, যার মূল্য ৯ লাখ টাকা। সঞ্চয়ী ও চলতি হিসাবসমূহে ৫ দশমিক ১৭ লাখ টাকা।
দুদকের সহকারী পরিচালক সৈয়দ আতাউল কবির ২০১৭ সালের ৩ অক্টোবর এ মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্তের পর ২০১৯ সালে দুদক এ মামলায় চার্জশিট দাখিল করেন।’
Leave a Reply