বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন,‘জালিম সরকার নানা কূটকৌশলে গত ৭ জানুয়ারি এক অদ্ভূত ডামি নির্বাচন করে জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়া আবারো ক্ষমতা দখল করেছে। জনগণ সরকারের ডামি নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। জাতিসঙ্ঘ ও গণতান্ত্রিক বিশ্ব সরকারের ডামি নির্বাচনকে এখনো স্বীকৃতি দেয়নি। বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক বিশ্ব থেকে একঘরে হওয়ার উপক্রম হয়েছে। সরকারের ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সরকারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ছাড়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। দেশবাসীর প্রত্যাশা কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করে সরকার শুভ বুদ্ধির পরিচয় দিবে।
শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) জামায়াতে ইসলামী যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চলের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও যশোর-কুষ্টিয়া অঞ্চল পরিচালক মোবারক হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জেলা কর্মপরিষদ সদস্যদের শিক্ষাশিবিরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শিক্ষাশিবিরে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি হামিদুর রহমান আযাদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, মানারাত ইউনিভার্সিটির সাবেক ভিসি ড. আবদুর রব ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন প্রমুখ।
উপস্থিত ছিলেন মাওলানা আজিজুর রহমান, ড. আলমগীর বিশ্বাস, অধ্যক্ষ আলী মুহসীন, আবদুল মতিন ও জেলা আমিরবৃন্দ।
সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান আরো বলেন, ‘ইসলাম বিদ্বেষী সরকার নাগরিকদের ইসলাম থেকে দূরে রাখতে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় নাস্তিকতার অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে। ট্রান্সজেন্ডারদের প্রমোট করা হচ্ছে। যৌনতার বিষবাষ্প ছড়ানো হচ্ছে। বিজাতীয় শিক্ষা-সংস্কৃতি, কৃষ্টি-কালচার আমদানি করে দেশের সমাজ ব্যবস্থাকে কলুষিত করা হচ্ছে। ধ্বংস করা হচ্ছে যুব সমাজের চরিত্র। দেশের অভিভাবক সমাজ ও বাবা-মা সন্তানদের লেখাপড়া ও ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। তারা সন্তানদের সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। সচেতন দেশবাসীকে সরকারের জাতিসত্তা বিনষ্টের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে এবং প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
ভারপ্রাপ্ত আমিরে জামায়াত বলেন, আমাদেরকে একমাত্র আল্লাহর দাসত্ব করতে হবে এবং রাসূলের আনুগত্য করতে হবে। নিজেদের পরিবারকে জাহিলিয়াত মুক্ত রাখার পাশাপাশি সমাজকেও জাহেলিয়াত মুক্ত রাখতে হবে। সন্তানদের ইসলামী পরিবেশে বেড়ে ওঠার সুযোগ দিতে হবে। ছোট বেলা থেকেই তাদের জামায়াতে নামাজ আদায় করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। আমাদের প্রতিটি পরিবারকে নামাজি পরিবার বানাতে হবে। সমাজ থেকে অসৎ নেতৃত্ব বিদায় করে তদস্থলে সৎ, যোগ্য ও মেধাবী নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে। ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলন জোরদার করতে হবে। আল্লাহর আইন ও সৎ লোকের শাসনের প্রয়োজনীয়তা নিজের পরিবার ও সমাজের সামনে উপস্থাপন করতে হবে। কুরআনের আলোয় আলোকিত করতে হবে নিজেদের জীবন, পরিবার ও সমাজ। প্রতিটি ঘরে কুরআন-হাদীসের সঠিক শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে হবে। আমাদের প্রতিটি পরিবারকে ইসলামের দুর্গে পরিণত করতে হবে। ঋণমুক্ত জীবন-যাপন করতে হবে। বেশি বেশি সালামের প্রচলন করতে হবে। মানুষকে খাওয়ানোর প্রাক্টিস করতে হবে। আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশির হক আদায় করতে হবে এবং কারো হক নষ্ট করা যাবে না। সুখে-দুঃখে ও বিপদাপদে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে- মৌখিক দাওয়াতের চেয়ে আমলি দাওয়াত বেশি কার্যকর। তাই আমাদেরকে আমলি জিন্দেগীর মাধ্যমে দাওয়াতি কাজ করতে হবে।
ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম বলেন, ‘রাসূল সা:-এর সাহাবীগণ ছিলেন গোটা উম্মতের মধ্যে অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। তারা কুরআনের প্রতিটি আয়াতের ওপর আমল করতেন। যুগ যুগ ধরে চলে আসা রীতি-নীতি বিনা বাক্যে ছেড়ে দিয়েছিলেন। কুরআন ও রাসূল সা:-এর স্পর্শে এসে তারা সোনার মানুষ হতে পেরেছিলেন। তারা আনুগত্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গিয়েছেন। তারা ছিলেন নবী আদর্শের জীবন্ত প্রতীক। তাদের কথা ও কাজের মধ্যে কখনো গড়মিল পরিলক্ষিত হয়নি। তাই তারা জাহিলিয়াতের সমাজে বাস করেও উত্তম মানুষ হতে পেরেছিলেন। আমাদেরকে সাহাবীদের ন্যায় কুরআন-হাদিস অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে হবে। নিজেদের পছন্দকে জলাঞ্জলি দিতে হবে। আমাদেরকে সাহাবীদের ন্যায় প্রতিটি কথা ও কাজে মিল রাখতে হবে। আনুগত্যের পরাকাষ্ঠা দেখাতে হবে। তাদের ন্যায় রাসূল সা:-এর প্রতিটি সুন্নত মজবুতভাবে ধারণ করতে হবে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তি
Leave a Reply