“কোরআন শরীফ পড়ার ফজিলত”
কোরআন তেলাওয়াতকারীর পিতা-মাতাকে নূরের টুপি পরানো হইবে।
হজরত মোয়াজ জোহানি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোরআন শরিফ পড়ে ও এর ওপর আমল করে, তার মাতা-পিতাকে কেয়ামতের দিন এমন একটি (নূরের) টুপি পরানো হবে, যার জ্যোতি সূর্যের জ্যোতি থেকেও বেশি হবে। যদি তা তোমাদের ঘরের মধ্যে উদিত হতো! তাহলে যে স্বয়ং কোরআনের ওপর আমল করে, তার এ আমল সম্পর্কে তোমাদের কী ধারণা হতো? (আবু দাউদ)
ফায়দাঃ কোরআন পড়া ও এর ওপর আমল করার বরকত হলো তেলাওয়াতকারীর মাতা-পিতাকে এমন তাজ (টুপি) পরানো হবে, যার আলো সূর্য থেকে বহু গুণ উজ্জ্বল হবে। আর যদি সেই সূর্য তোমাদের ঘরের মধ্যে হয়, অর্থাৎ সূর্য কোটি কোটি মাইল দূরে থেকেও এত বেশি আলো দান করছে, যদি তা ঘরের মধ্যে এসে পড়ে নিশ্চয়ই বহুগুণ বেশি আলো দান করবে। সুতরাং এ হাদিস থেকে বোঝা গেল যে কোরআন তেলাওয়াতকারীর পিতা-মাতার কত বড় সম্মান ও ইজ্জত। কাজেই চিন্তা করে দেখুন, স্বয়ং তেলাওয়াতকারী ও তার ওপর আমলকারী কত বড় সম্মানের অধিকারী হবে। আর পিতা-মাতার ওই মর্যাদা শুধু এ জন্য যে তাঁরাই সন্তানের জন্ম ও শিক্ষার পেছনে অবদান রেখেছেন।
সূর্য ঘরে হওয়া সম্বন্ধে যে উপমা দেওয়া হয়েছে, এতে নৈকট্যের দরুন অধিক আলো অনুভূত হওয়া ছাড়াও আরো একটি সূক্ষ্ম বিষয়ের প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে। তা হলো কোনো জিনিস কাছে থাকলে তার সঙ্গে ভালোবাসা তৈরি হয়, তা একান্ত আপন হয়ে যায়। কিন্তু তা যদি কাউকে বখশিশ দেওয়া হয়, তবে তার জন্য তা কতই না গৌরবের বিষয় হবে।
হাদিস শরিফে আরো বর্ণিত আছে, যে ব্যক্তি কোরআন শরিফ পড়ে এবং সে অনুযায়ী আমল করে, তাকে নূরের তৈরি একটি তাজ পরিয়ে দেওয়া হবে এবং তার মাতা-পিতাকেও নূরের তৈরি দুটি জোড়া পরিয়ে দেওয়া হবে। তারা আরজ করবে, হে আল্লাহ্! এই জোড়াগুলো কিসের বিনিময়ে? তখন এরশাদ হবে, তোমাদের ছেলেমেয়েদের কোরআন পড়ার বিনিময়ে।
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেন, কেউ যদি তার ছেলেকে কোরআন শরিফ নজরানা পড়ায়, তার পূর্বাপর সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়, আর যে হেফজ করাবে, তাকে কেয়ামতের দিন চতুর্দশীর পূর্ণচন্দ্রের সমতুল্য করে ওঠানো হবে এবং তার ছেলেকে বলা হবে, পড়তে থাকো। ছেলে যখন একটি আয়াত পড়বে, পিতার একটি দরজা বুলন্দ হতে থাকবে। এভাবে সে পুরো কোরআন শরিফ পূর্ণ করবে।
সন্তানকে কোরআন শরিফ পড়ালে এসব মর্যাদার অধিকারী হবে- কথা এটাই নয়। দ্বিতীয় কথা শুনে রাখুন, আল্লাহ না করুক, আপনি যদি ছেলেকে দু-চার পয়সার লোভে ধর্মীয় শিক্ষা থেকে বঞ্চিত রাখেন, তবে যে চিরস্থায়ী পুণ্য থেকে আপনি বঞ্চিত থাকলেন। শুধু তাই নয়, আল্লাহপাকের আদালতে আপনাকে রীতিমতো হিসাব দিতে হবে।
হাদিসে বর্ণিত আছে- ‘তোমরা প্রত্যেকেই একজন রক্ষক এবং প্রত্যেকে আপন রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে।’
হ্যাঁ, ওইসব দোষত্রুটি থেকে আপনি নিজেকে এবং সন্তানকে রক্ষা করতে যত্নবান হোন। কিন্তু মনে রাখবেন, উকুনের ভয়ে কাপড় না পরে উলঙ্গ থাকা কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। তবে কাপড় পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করুন। মোটকথা, আপনি যদি সন্তানকে উপযুক্ত দ্বীনদারি শিক্ষা দেন, তবে নিজের জবাবদিহির কোনো আশঙ্কা থাকলই না; বরং যত দিন সন্তান নেক আমল করবে ও আপনার জন্য দোয়া-এস্তেগফার করবে, তা আপনার পদমর্যাদা বাড়িয়ে দেবে। কিন্তু যদি সামান্য পার্থিব লোভ-লালসায় পড়ে ছেলেকে ধর্মজ্ঞান থেকে বঞ্চিত রাখেন, তবে যে শুধু নিজ কৃতকর্মের প্রতিফল ভোগ করবেন তা-ই নয়; বরং ছেলের সব ধরনের অন্যায় আচরণের একটি ফিরিস্তি আপনার আমলনামায়ও লিপিবদ্ধ হতে থাকবে। আল্লাহর দিকে চেয়ে আপন অবস্থার ওপর একটু সচেতন হোন। নশ্বর দুনিয়া যেকোনো অবস্থায়ই চলে যাবে এবং মৃত্যু যেকোনো মহাবিপদের পরিসমাপ্তি ঘটাবে; কিন্তু আখেরাতে সেই মহা মসিবতের পর আর মৃত্যু আসবে না। এর কোনো পরিসীমা নেই।
সূত্র:- ফাযায়েলে কোরআন।
Leave a Reply