বরিশালে নদীর তীরে শীতে কাপঁছে বেদে সম্প্রদায়
মোঃ শহিদুল ইসলাম:: নাগরিকত্ব থাকলেও নেই কোন নাগরিক অধিকার,শীতে মানবেতর জীবনযাপন করছে বরিশালের বেদে সম্প্রদায়ের মানুষেরা। বরিশাল নগরীর ৯ নং ওয়ার্ড রসুলপুর ও সদর উপজেলার ৩ নং চরবাড়িয়া ইউনিয়ন তালতলী এলাকায় বেদে সম্প্রদায় মানুষদের খবর রাখে না কেউ। অভিযোগ ভাসমান নৌকায় বসবাসরত বেদে পল্লী জনগোষ্ঠীর। দুই এলাকা মিলিয়ে প্রায় ৬৫টি পরিবারের ৪৫০ বেদে সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করে কীর্তনখোলা ও তালতলী চরবাড়িয়া পাশে অবস্থিত নদীতে। শুধু দুই এলাকায় নয় বরিশালের বিভিন্ন এলাকায় তাদের দেখা যায় করুন অবস্থায় রয়েছে। নদীরতীরে গেলে দেখা মেলে নৌকাতে পলিথিন দিয়ে মোড়ানো কাঠের ছাউনি তাদের জরাজীর্ণ বসতি। শীত নিবারণ করার মত কোন গরম কাপড় নেই তাদের, শিশুরা শিক্ষার মৌলিক অধিকার থেকে বেশি ভাগ বঞ্চিত। করোনার কারণে আয় না থাকায় অনেকের ঘরের খাবার জোগাতে হিমশিত খাচ্ছে। প্রতিবছরের মত এ বছর ও শীত এসেছে। আর এই শীতে সবচেয়ে অসহায় বেদে সম্প্রদায়ের লোকেরা। শীতকাল তাদের জন্য যেন অভিশাপ হয়ে আশে। প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে শীতে কুপোকাত হয়ে শীতকালীন ঠন্ডাজনিত নানা রোগে ভোগছেন তারা। একদিকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অপরদিকে শীতের কারনে অসুস্থ হয়ে পড়ছে বিশেষ করে শিশুরা। যেখানে দুবেলা দুমুঠো খাবার যোগাড় করতে পারছে না সেখানে শীতের কাপড় যেন আকাশ থেকে চাঁদ নিয়ে আসার মত গল্প। এক কথায় মানবেতর জীবন-যাপন করছে তারা। এমনটা জানালেন রসুলপুর বেদেপল্লীদের সরদার আলী হোসেন। বরিশালে গত দুই তিন দিন যাবদ জেঁকে বসেছে শীত। এদিকে বরিশাল আবহাওয়া অফিস এর আবহাওয়াবিদ বলছেন, বরিশালে শনিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৯.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস,আজকে তাপমাত্রা ছিল ৯.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, এবং বাতাসের আর্দ্রতা ছিল-১০০ শতাংশ।এমনটাই জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিস। প্রচন্ডশীতল হাওয়া আর তীব্র শীতে জনজীবনে নেমে এসেছে অশান্তির ছায়া। কনকনে ঠান্ডাকে মোকাবেলা করতে অনেকেই অনেক ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন। তবে দারিদ্রপীড়িত বেদে জনগোষ্ঠীর ভালো কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে ওঠে না। ঠান্ডার প্রকোপ এখন ডাঙার মানুষের কাছেও এক অভিশাপের নাম। সেই রেশ পড়েছে নদী তীবরর্তী এলাকায় বসবাসরত বেদে সম্প্রদায়ের মাঝেও। কী শীত, কী গ্রীষ্ম—নৌকাই তাদের বাসস্থান। তারা বেদে সম্প্রদায় নামেই বহুল পরিচিত। কোন রকমে মাছ ধরে জীবন চলে। কষ্টের যেন শেষ নেই। তাদের থাকা-খাওয়া সব কিছুই নৌকায়। তাদের কষ্টের তীব্রতা বেড়ে যায় শীত মৌসুমে। তবু বাঁচতে হবে এ বিশ্বাস নিয়ে জীবন যুদ্ধে টিকে আছেন অসহায় বেদে সম্প্রদায়ের লোকেরা। নিম্ন আয়ের লোক বলে গরম কাপড়ও কেনা হয় না। এই ঝেকে বসা শিতে তাদের কেউ কেউ নৌকা ছেড়ে এখন ডাঙায় বাস করছে। কিন্তু সেখানেও ঝুপড়ি ঘর। কোন রকমে বাঁশ-কাঠ দিয়ে তৈরি। যেখানে প্রচন্ড শীতল বাতাসের আনাগোনা। আবদুল রব,বিউটি, রেক্সসনা,বাদল জানান,নদীতে মাছ ধরে বিক্রি করে আমাদের সংসার চালাতে হয়। আর এখন নদীতে তেমন মাছ পাওয়া যায় না। এ কারনে তাদের রোজগার অনেক কমে গেছে। তারা অভিযোগ করে বলেন,এই শীতে এখন পর্যন্তকেউ কোন সাহায্য করেনি আমাদের। আমাদের আয় কমে গেছে এতে আমরা চরম অভাব অনাটনে মধ্যে আছি। শুধু ভোটের আগে জনপ্রতিনিধিরা ভোটের জন্য তাদের কাছে এবং বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু ভোট শেষে বেদেদের আর কোন খবর নেয় না তারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিজ নিজ এলাকার জনপ্রতিনিধিরা বলেন,সরকারের দেয়া শীতবস্ত্র আসলে ভাসমান বেদে সম্প্রদায় লোকদেরও দেয়া হবে বলে জানান তারা।
Leave a Reply