এ সময় আগের কমিটির আহ্বায়ক জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমির এবং সদস্যসচিব নুরুল ইসলাম জিহাদীকে মহাসচিব ঘোষণা করা হয়ে। এ ছাড়া হেফাজতের প্রয়াত আমির শাহ আহমদ শফীর বড় ছেলে মো. ইউসুফকেও রাখা হয়েছে।
গত ২৬ মার্চ ২০২১ ও তৎপরবর্তী হেফাজতে ইসলামের সহিংস কর্মসূচির প্রেক্ষিতে দেশব্যাপী হেফাজতের নেতাদের গ্রেপ্তার ও নানামুখী চাপে গত ২৫ এপ্রিল হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় সোমবার রাজধানীর জামিয়া ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম মাদ্রাসায় (খিলগাঁও মাদ্রাসা) উপদেষ্টা কমিটি, খাস কমিটি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ে হেফাজতে ইসলাম তাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করেছে।
উপদেষ্টা কমিটিতে ১৬ জন, খাস কমিটিতে ০৮ জন ও কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৩৫ জন সদস্য নিয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়। পূর্বের কমিটিতে খাস কমিটি অংশটি অনুপস্থিত ছিল যার ফলে নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নিতে হেফাজত হিমশিম খাচ্ছিল, সে সুযোগে বিতর্কিত ও রাজনৈতিক সুযোগসন্ধানী ব্যক্তিরা হেফাজতকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছিল।
কমিটিতে নায়েবে আমির হিসেবে রাখা হয়েছে নয়জনকে। তারা হলেন- মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মাওলানা সালাউদ্দিন নানুপুরী, অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা মুহিব্বুল হক (সিলেট) ও মাওলানা উবায়দুর রহমান মাহবুবসহ (বরিশাল), মাওলানা আবদুল হক (ময়মনসিংহ), মাওলানা ইয়াহইয়া (হাটহাজারী মাদরাসা), মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস (ফরিদাবাদ মাদরাসা), মাওলানা তাজুল ইসলাম ও মাওলানা মুফতি জসিমুদ্দীন (হাটহাজারী মাদরাসা)।
যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে নাম রয়েছে পাঁচজনের। তারা হলেন- মাওলানা সাজেদুর রহমান (বি-বাড়িয়া), মাওলানা আবদুল আউয়াল (নারায়নগঞ্জ), মাওলানা লোকমান হাকীম (চট্টগ্রাম), মাওলানা আনোয়ারুল করীম (যশোর) ও মাওলানা আইয়ুব বাবুনগরী।
সহকারী মহাসচিব হিসেবে আছেন মাওলানা জহুরুল ইসলাম ও মাওলানা ইউসুফ মাদানী। সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে মাওলানা মীর ইদ্রিস (চট্টগ্রাম), অর্থ সম্পাদক হিসেবে মাওলানা মুফতি মুহাম্মদ আলী (মেখল) ও সহঅর্থ সম্পাদক হিসেবে আছেন মাওলানা মুফতি হাবিবুর রহমান কাসেমী (নাজিরহাট)।
প্রচার সম্পাদক করা হয়েছে মাওলানা মুহিউদ্দীন রব্বানীকে (সাভার) এবং সহপ্রচার সম্পাদক করা হয়েছে মাওলানা জামাল উদ্দীনকে (কুড়িগ্রাম)। দাওয়াবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে আছেন মাওলানা আবদুল কাইয়ুম সোবহানী (উত্তরা) এবং সহকারী দাওয়া হিসেবে আছেন মাওলানা ওরম ফারুক (নোয়াখালী)।
এ ছাড়া কমিটিতে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে নয় জনকে। তারা হলেন- মাওলানা মোবারাকুল্লাহ (বি.বাড়িয়া), মাওলানা ফয়জুল্লাহ (মাদানীনগর), মাওলানা ফোরকানুল্লাহ খলিল (চট্টগ্রাম), মাওলানা মোশতাক আহমদ (খুলনা), মাওলানা রশিদ আহমদ (কিশোরগঞ্জ), মাওলানা আনাস (ভোলা), মাওলানা মাহমুদুল হাসান (ফতেহপুরী) এবং মাওলানা মাহমুদুল আলম (পঞ্চগড়)।
কমিটি থেকে বাদ পড়েছেন- সদ্য বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক, নাছির উদ্দিন মুনির, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, কেন্দ্রীয় নেতা জাকারিয়া নোমান ফয়জী, খালিদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, হাসান জামিল, মুফতি হারুন ইজহারসহ নানা ইস্যুতে বিতর্কে জড়িয়ে পড়া হেফাজতের নেতারা।
হেফাজতে ইসলামের বর্তমান কমিটিতে ঠাঁই হয়নি কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের। পূর্বের কমিটি দখল করে নিয়েছিল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও খেলাফত মজলিশের উচ্চপদধারী ব্যক্তিরা যা হেফাজতকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের সুযোগ করে দিয়েছিল। হেফাজত ইসলাম বিভিন্ন ঘটনায় হোঁচট খেয়ে শেষ পর্যন্ত অনুধাবন করতে পেরেছে যে উদ্দেশ্যে হেফাজতে ইসলাম গঠন করা হয়েছিল সে উদ্দেশ্য থেকে তারা বিচ্যুত হয়েছে। তাই তারা বিতর্কিত ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে প্রবীণ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও বিজ্ঞ আলেমদেরকে দিয়ে নতুন করে হেফাজতে ইসলামকে পুনর্গঠন করার প্রত্যয়ে কমিটি ঘোষণা করেছে।
কমিটি ঘোষণা উপলক্ষে প্রেস ব্রিফিংয়ে সংগঠনটির মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম জানান, আজ থেকে হেফাজতে ইসলামের অন্যতম প্রধান কাজ হবে সংগঠনের গঠনতন্ত্র তৈরি ও অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের দিয়ে সাংগঠনিক কাঠামো পরিচালনা করা। তিনি দাবি করেন ভাঙচুর ও বিশৃঙ্খলায় হেফাজতের কোনো কর্মী জড়িত ছিল না বরং হেফাজতকে ব্যবহার করে একটি চক্র নিজেদের ফায়দা হাসিল করতে চেয়েছিল। যার জন্য তিনি দোষীদের শাস্তি প্রদানপূর্বক নির্দোষ ও নিরীহ আলেমদের হয়রানি না করে অতি দ্রুত মুক্তির দাবি জানান। কমিটি ঘোষণা উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়া প্রায় সব নেতা উপস্থিত ছিলেন। তবে আমির জুনায়েদ বাবুনগরী শারীরিক অসুস্থতার জন্য উপস্থিত হতে না পারলেও তার সম্মতি ও পরামর্শে কমিটি ঘোষিত হয়েছে বলে হেফাজতের মহাসচিব জানান।
Leave a Reply