নিজস্ব প্রতিনিধিঃবরিশাল নগরীর আমতলার মোড় থেকে ছোট ছেলেকে কোলে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে নথুল্লাবাদ পর্যন্ত এসেছি। ঢাকায় যাওয়ার কোনো উপায় পাইনি। এখন ব্যাটারিচালিত একটি ভ্যান দুই হাজার টাকায় ভাড়া করেছি। চালক মাওয়া ঘাট পর্যন্ত দিয়ে আসবেন। খুব ঝুঁকি নিয়ে যাচ্ছি, তবে পেটের দায়ে যেতেই হবে।
বুধবার সকালে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের সামনে বসে কথাগুলো বলছিলেন, স্ত্রী ও ছোট ছেলেকে নিয়ে ভ্যানযোগে বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করা রনি ফকির। শুধু তিনিই (রনি) নয়; একইভাবে ব্যাটারি চালিত রিকশা, ভ্যান ও মোটরসাইকেলযোগে বরিশাল ছাড়তে শুরু করেছেন কর্মস্থলমুখী মানুষ। মাওয়া ঘাট পর্যন্ত পৌঁছতে এসব বাহনে একেকজন যাত্রীকে গুনতে হচ্ছে সাত থেকে আটশ’ টাকা। অধিক ঝুঁকি নিয়ে যাত্রা শুরু করা অধিকাংশ যাত্রীরা বলছেন, চাকরিস্থল থেকে জরুরি ডাক আসায় তাদের ঢাকায় যেতে হচ্ছে।
রাজধানীমুখী বেশির ভাগ মানুষ সকাল থেকে জড়ো হন বরিশাল নগরীর কাশিপুরের সুরভী ফিলিং স্টেশনের সামনে। সেখান থেকে কেউ রিকশা-ভ্যান, আবার কেউ মোটরসাইকেলে ঢাকার পথে রওনা দিচ্ছেন। ব্যাটারিচালিত ভ্যানচালক ওহাব হাওলাদার বলেন, সবকিছু তো বন্ধ। মাহিন্দ্রা ও সিএনজিও চলেনা। এরজন্য আমি ভ্যান লইয়া নামছি। একটা ট্রিপ হইলেই হয়। বরিশাল থেকে মাওয়া পর্যন্ত প্রতিজনের কাছ থেকে আটশ’ টাকা করে নেই। ভ্যানচালক ওহাব হাওলাদার আরও বলেন, মঙ্গলবার নগরীর কাশিপুর থেকে যাত্রী নিয়ে মাওয়া যাওয়ার পথে কোনো বিভ্রান্তি হয়নি। পুলিশের চেকপোস্টগুলোতে মাইক্রোবাস আর প্রাইভেটকার চেক করতে দেখেছি। আমাদের কোথাও থামায়নি। শুধু মাঝপথে টেকেরহাট বসে ভ্যানের ব্যাটারিতে চার্জ দিতে হয়েছে।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের টেকনিক্যাল ম্যানেজার জাহিদুল ইসলাম বলেন, ঈদের ছুটিতে বরিশালে বাড়িতে এসেছিলাম। এখন অফিস থেকে জরুরিভাবে যেতে বলেছে। চাকরি বাঁচাতে হলে যেভাবেই হোক ঢাকায় যেতেই হবে, সেই টার্গেট নিয়েই বের হয়েছি। তিনি আরও বলেন, কোনো যানবাহন না পেয়ে মাওয়া পর্যন্ত তিন হাজার টাকায় একটি ভ্যান ভাড়া করেছি। মাওয়া থেকে বিকল্প উপায়ে ঢাকায় পৌঁছাতে হবে।
জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন বলেন, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের বরিশাল অংশে অনেক চেকপোস্ট রয়েছে। এসব চেকপোস্ট অতিক্রম করে ঢাকায় যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই গ্রামগঞ্জের রাস্তা ধরে কেউ কেউ মাওয়ায় পৌঁছতে পারে।
Leave a Reply