ভর্তি না নিলে কী আর করুম, মরলে পোলা বাড়িতেই মরুক ভর্তি না নিলে কী আর করুম, মরলে পোলা বাড়িতেই মরুক – ajkalbd24.com
  1. admin@ajkalbd24.com : admin : H.M Aslam
  2. akazadjm@gmail.com : A K Azad : A K Azad
  3. ajkalbd24.com@gmail.com : ajkalbd24 : Niaz Mohammad
  4. hafijakhan804@gmail.com : ajkal1 : ajkal1
রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫, ০৪:৫৮ অপরাহ্ন

ভর্তি না নিলে কী আর করুম, মরলে পোলা বাড়িতেই মরুক

আজকাল ডেস্ক :
  • আপডেটের সময় : সোমবার, ২ আগস্ট, ২০২১
  • ১০৭ সময় দর্শন

অনলাইন ডেস্কঃঃ ভাই, আমার কাছে আর সামান্য কিছু টাকা আছে, আরও ৫০০ টাকা বেশি দিমুনে। দয়া করে পোলাডারে মিটফোর্ড হাসপাতালে নামাইয়া দেন।’ অ্যাম্বুলেন্স চালকের কাছে এভাবেই আকুতি করছিলেন হারুনুর রশীদ। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত ১০ বছরের ছেলে সাকিবকে তিন হাসপাতালে ভর্তি করতে না পেরে চতুর্থ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স চালকের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন তিনি।

কিন্তু ওই চালকের ঝাঁঝালো উত্তর, ‘এমনিতেই ভাড়া কম দিয়া আইছেন, তিনটা হাসপাতালে ঘুরে অনেক সময় নষ্ট করছেন। এক হাজার টাকায় গেলে চলেন, না হইলে অ্যাম্বুলেন্স থেকে রোগী নামান, কম টাকায় পারলে অন্য অ্যাম্বুলেন্স নিয়া যান।’

সোমবার (২ আগস্ট) দুপুর আড়াইটার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল-২ এর (করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল) জরুরি বিভাগের সামনে এমন দৃশ্যের অবতারণা হয়।

রাজধানীর টঙ্গীর বাসিন্দা হারুনুর রশীদ পেশায় একটি ইলেকট্রিক দোকানের কর্মচারী। চার-পাঁচদিন ধরে তার ছেলে সাকিব জ্বরে ভুগছিল। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সোমবার টঙ্গীর একটি হাসপাতালে নেয়া হয় তাকে। পরীক্ষায় ডেঙ্গুজ্বর শনাক্ত হয়। চিকিৎসকরা তখন হারুনকে জানান, রোগীর অবস্থা অবনতির দিকে যাচ্ছে। তাকে দ্রুত ঢাকার কোনো হাসপাতালে নিয়ে যান।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল-২ এর (করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল) জরুরি বিভাগের সামনে হারুনুর রশীদ জাগো নিউজকে বলছিলেন, ‘করোনার কারণে দোকান বন্ধ থাকায় আয়-রোজগার নেই। পরিচিতজনদের কাছ থেকে ঋণ করে স্ত্রী, শিশুকন্যা ও শাশুড়িকে সঙ্গে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে ঢাকায় রওনা হই। সকাল থেকে সরকারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ঢামেক হাসপাতাল হয়ে ঢামেক হাসপাতাল-২ এ আসি। চিকিৎসকরা জানান, আমরা যে হাসপাতালগুলোতে গিয়েছি সেগুলোতে ডেঙ্গু নয়, করোনা রোগী ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা দ্রুত আমাদের মিটফোর্ড হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেন।’

টঙ্গী থেকে যে অ্যাম্বুলেন্সে হারুন তার ছেলেসহ পরিবারকে নিয়ে রওনা হন, সেই অ্যাম্বুলেন্স তিনটি সরকারি হাসপাতাল ঘুরে থেমে যায়। পরবর্তী হাসপাতালে যাওয়ার জন্য যে ভাড়া দাবি করে, তা দেয়ার সামর্থ্য ছিল না হারুনের। সেজন্য শিশুর মতো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে অ্যাম্বুলেন্স চালককে বারবার অনুরোধ করছিলেন

তিনি যখন কাঁদছিলেন, কিছুটা দূরে আনুমানিক পাঁচ-ছয় বছরের ছোট্ট একটি মেয়ে অ্যাম্বুলেন্সটির (ঢাকা-মেট্রো-ছ-৭১-১৬৪০) জানালা দিয়ে বারবার বাইরে উঁকি দিচ্ছে। পাশে একজন বৃদ্ধা, তার পাশে সটান শুয়ে আছে সাকিব নামে ছেলেটি। লাল চোখের ছেলেটিকে ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে দেখা যায়।

হারুন অ্যাম্বুলেন্স চালকের সঙ্গে কথা বলার সময় তার মাকেও কাতর দেখা যায়। দুজনই তাদের সন্তানকে পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (মিটফোর্ড হাসপাতাল) নিতে অ্যাম্বুলেন্স চালককে অনুরোধ করছিলেন। কিন্তু ওই চালক এক হাজার টাকার কমে কোনোভাবেই মিটফোর্ড হাসপাতালে যেতে রাজি হচ্ছিলেন না। তার মতো সেখানে থাকা অন্য অ্যাম্বুলেন্স চালকও এক হাজার টাকা ভাড়া চাইছিলেন হারুনের কাছে।

বারবার নিজের কাছে পাঁচশ টাকা থাকার কথা জানিয়েও কোনো চালকের মন গলাতে না পেরে হারুনুর রশীদ জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ যোগাযোগ করে সহায়তা চান। তিনি জানান, ছেলেকে নিয়ে টঙ্গী থেকে দুই হাজার টাকা অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে ঢামেক হাসপাতালে এসেছিলেন। তার কাছে আর বেশি টাকা নেই। তিনি সাহায্য চান।

হারুনের এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৯৯৯ থেকে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানানো হয়। কিছুক্ষণ পর একজন অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার ফোন করে জানান, ৯৯৯ থেকে ফোন করা হয়েছিল, তিনি বাড্ডায় আছেন, তাই আসতে পারবেন না। হারুন ফের ৯৯৯-এ ফোন করলে তাকে বলা হয়, অ্যাম্বুলেন্স যোগাযোগ করবে, ৫০০ টাকা দিতে হবে। এতে হারুন রাজি হলে তাকে অপেক্ষা করতে বলা হয়।

তখন অপেক্ষারত সাকিবের মা হতাশাজড়িত কণ্ঠে স্বামীকে বলেন, ‘এই ৫০০ টাকা দিয়া দিলে চিকিৎসা আর খরচ চলবে ক্যামনে? এতগুলো সরকারি হাসপাতালেও যখন ভর্তি নিলো না, চলো বাড়িত লইয়া যাই, মরলে পোলা বাড়িতেই মরুক।’

তিনি বলেন, ‘শুনেছিলাম ৯৯৯-এ গরিবদের সাহায্য করা হয়। কই অহন তো ৫০০ টাকা ভাড়া দিতে হইতাছে।’

অন্যদিকে টঙ্গী থেকে আসা অ্যাম্বুলেন্সের মালিকের স্ত্রী পরিচয়ে এক নারী হারুনুর রশীদের মোবাইলে ফোন করে দ্রুত গাড়িটি ছেড়ে দেয়ার তাগিদ দেন। তখন অসুস্থ শিশুটিকে নামিয়ে অন্য ভাড়া নিয়ে সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সটি চলে যায়।

কিছুক্ষণের মধ্যে ৫০০ টাকা ভাড়ার চুক্তির অ্যাম্বুলেন্সটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল-২ এর (করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল) জরুরি বিভাগের সামনে আসে। এ সময় হারুনুর রশীদ চালককে বলেন, ‘ভাই ওখানে কিন্তু পোলার ভর্তির ব্যবস্থা কইরা দিতে অইবো। আমার পকেট খালি। ভর্তি করাতে না পারলে বা টাকা চাইলে দিতে পারুম না।’ এ কথা বলতে বলতে তারা রওয়ানা হন মিটফোর্ড হাসপাতালে দিকে।

পরে হারুনুর রশীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, তিনি তার ছেলেকে মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন। শিশুটি এখন হাসপাতালের দুই নম্বর ভবনের ছয় তলায় চিকিৎসাধীন।

ছেলের চিকিৎসার্থে হারুন দেশের বিত্তবানদের কাছে সহায়তা কামনা করেন। এজন্য নিজের ব্যক্তিগত নম্বর ০১৭১৫২১৯৫৫৫-এ যোগাযোগের অনুরোধ জানান তিনি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরও খবর