কোনো অজানা কারণে কখনোই উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন ও মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের ব্যাপারে আগ্রহ দেখায় নাই অতীতের কোনো সরকার। শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সরকারই উত্তরবঙ্গের মানুষের কথা চিন্তা করেন। তাদের সুখ-শান্তি ও জীবনমান উন্নয়নের কথা ভাবেন। একমাত্র শেখ হাসিনার কারণেই উত্তরবঙ্গে ‘মঙ্গা’ শব্দটি আজ নিশ্চিহ্ন।
শুক্রবার বনানী মডেল স্কুল মাঠে অসহায়-দুস্থ মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ এসব কথা বলেন।
এ সময় রংপুর বিভাগের ৯টি জেলা শাখার নেতাদের কাছে রংপুর অঞ্চলের শীতার্ত মানুষের জন্য কম্বল হস্তান্তর করা হয়। বনানী মডেল স্কুল মাঠে প্রায় ১০০০ অসহায় শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করে যুবলীগ।
যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, ‘সোনার বাংলা’ কায়েম করার লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালের এই জানুয়ারি মাসেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী এনেছিলেন। যেটা ‘দ্বিতীয় বিপ্লব’ হিসেবে পরিচিত, অনেকে ‘বাকশাল’ হিসাবেও জানে। কিন্তু আমরা ভুলে যাই এই দ্বিতীয় বিপ্লবের অন্তর্মূলের তাৎপর্য। এর মূলে ছিল মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায় করা, ন্যায়পরায়ণ সমাজব্যবস্থা কায়েম এবং মানবিকতা। আমরা চতুর্থ সংশোধনী বা বাকশাল নিয়ে কেউ কেউ বিব্রতবোধ করি, কেউ কেউ এড়িয়ে যেতে চাই। কিন্তু বিষয়টি পাশ কাটিয়ে যাওয়ার বিষয় না।
তিনি বলেন, আমি এই বিষয়টা নিয়ে আজকে কিছু কথা বলব। দ্বিতীয় বিপ্লব আমাদের ইতিহাসের একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। প্রথমত, বঙ্গবন্ধু বাকশাল, বা তার দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন জাতীয় সংসদের বিপুল ভোটে পাশ করে। সামরিক ফরমান জারি করেও করেন নাই, বা ‘হ্যাঁ-না’ ভোটের মাধ্যমেও করেন নাই। বঙ্গবন্ধু বাকশাল গঠন করার কারণও ব্যাখ্যা করেছিলেন, তিনি বলেছিলেন- ‘ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাস, সারা জীবন গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করলাম, কত জেল খাটলাম, আর এখন এক পার্টি করতে যাচ্ছি।….আমি এটা চাইনি। বাধ্য হয়ে করতে হচ্ছে। অন্য কোনো পথ খোলা না দেখে আমি স্বাধীনতার পক্ষের লোকদের নিয়ে সমমনাদের একটি রাজনৈতিক মঞ্চ হিসেবে বাকশাল গঠন করেছি। আমি সমাজতন্ত্রবিরোধী, ধর্মনিরপেক্ষতাবিরোধী এবং সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কোনো দল বা ব্যক্তিকে বাকশালে নেব না। আরও একটি কথা, আমার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য নয়, দেশকে বাঁচানোর জন্য এই পদক্ষেপ। আমি ক্ষমতা অনেক পেয়েছি, এমন আর কেউ পায়নি। সেই ক্ষমতা হলো জনগণের ভালোবাসা ও নজিরবিহীন সমর্থন।….আমার এই একদলীয় ব্যবস্থা হবে সাময়িক। দেশটাকে প্রতিবিপ্লবের হাত থেতে রক্ষা করে আমি আবার গণতন্ত্রে ফিরে যাব। মনে রাখতে হবে, বিশ্ব এখন দুই ভাগে বিভক্ত; শোষক আর শোষিত। চেষ্টা করব আমার গণতন্ত্র যেন শোষকের গণতন্ত্র না হয়। আমার দুঃখী মানুষ যেন গণতন্ত্রের স্বাদ পায়। আমার গণতন্ত্র পশ্চিমা গণতন্ত্রের মতো বৈষম্যমূলক এবং শোষণের হাতিয়ার হবে না।’
পরশ বলেন, শোষিতের গণতন্ত্রই ছিল বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য- এ কথা তো তিনি নিজেই বলেছেন। শোষিতের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এটা ছিল তার দ্বিতীয় বিপ্লব। তাকে হত্যা করার পর বিবিসি এক সংবাদ ভাষ্যে বলেছিল: ‘পৌনে দুইশ বছরের ইংরেজ ঔপনিবেসিক শাসনের পর এই প্রথম শেখ মুজিব এক নতুন ধরনের স্থানীয় সরকারভিত্তিক শাসনকাঠামো গড়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন।’
‘শেখ মুজিব কি কখনো রাজনৈতিক মিথ্যাচার, শঠতা ও চাণক্যনীতির আশ্রয় নিয়েছেন? না, কেউ তা বলতে পারবে না। তাহলে গুরুতর অন্তর্ঘাতমূলক অবস্থার প্রেক্ষাপটে তার নেওয়া একটা দুঃসহ অবস্থা মোকাবিলার সাময়িক ব্যবস্থা নিয়ে যারা তাকে সন্দেহ করে এবং ভুল বুঝে, দেশের স্বাধীনতা অর্জনে তাদের ত্যাগ কতটুকু? আজীবন সংগ্রামী শেখ মুজিবের চেয়েও বেশি? এ ছাড়া ওই সময়ে বিশ্ব পরিস্থিতিতে এ ধরনের নিয়ন্ত্রণমূলক ও স্থিতিশীল পরিবেশে অর্থনৈতিক বিকাশের ব্যবস্থা তো অনেক দেশেই ছিল। অতএব, বঙ্গবন্ধু যদি ওইসব দেশের অনুকরণে বাকশাল গঠন করে দ্রুত আর্থিক বিকাশ ও স্থিতিশীল রাজনৈতিক সমাধান সৃষ্টি করতে চেয়ে থাকেন, তাহলে তো তাকে দোষ দেওয়া যায় না। তিনি যা করেছিলেন, তা সাংবিধানিকভাবেই করেছিলেন। তিনি যেটা করেছিলেন সেটা মানুষের ন্যায্য অধিকার আদায় করার জন্য করেছিলেন, ন্যায়পরায়ণ সমাজ ব্যবস্থা সৃষ্টির জন্য করেছিলেন এবং মানবিকাতার জন্য করেছিলেন।’
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর মানবিকতা প্রতিষ্ঠার অন্যতম সহযোগী ছিলেন শেখ ফজলুল হক মণি। তিনি তার অজস্র লেখায় যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের সুবিধা বঞ্চিত শ্রেণির মানুষের দুঃখ-কষ্টের কথা তুলে ধরেছিলেন ও মানবিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে সচেষ্ট হয়েছিলেন।
এ সময় যুবলীগ চেয়ারম্যান রংপুরবাসীর উদ্দেশে বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালে রংপুরকে বাংলাদেশে ৭ম প্রশাসনিক বিভাগ হিসাবে মর্যাদা দিয়েছেন। ৮টি জেলা, মোট ৩৩টি নির্বাচনী আসন নিয়ে আমাদের রংপুর বিভাগ। রংপুর বিভাগীয় সদর দপ্তর সম্প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেছেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম, আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী এমপি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মুতিউর রহমান বাদশা, মো. রফিকুল আলম জোয়ার্দার সৈকত, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মো. মাজহারুল ইসলাম, মো. সোহেল পারভেজ, প্রফেসর ড. মো. রেজাউল কবির, ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন বাবুল, দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইন উদ্দিন রানা, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক মো. ইসমাইল হোসেন, দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এইচএম রেজাউল করিম রেজা, প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দী, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মো. সাদ্দাম হোসেন পাভেল, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক মো. শামছুল আলম অনিক, উপ-দপ্তর সম্পাদক মো. দেলোয়ার।
Leave a Reply