নিজস্ব প্রতিবেদকঃঃবরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার চরগোপালপুর, জাঙ্গালিয়া ও আলিমাবাদ ইউনিয়নে ছয় দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। এতে ওই তিন ইউনিয়নের ১০ হাজারেরও বেশি মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।কয়েকজন বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের জুলাই মাসে নদীবেষ্টিত দুর্গম ওই তিন ইউনিয়নে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। নদী বিছিন্ন এলাকা হওয়ায় তখন মাসকাটা নদীর তলদেশ দিয়ে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ লাইন নেওয়া হয়েছিল।
গত ৮ মার্চ সকালে মাসকাটা নদী খনন করতে গিয়ে সাবমেরিন ক্যাবল কেটে ফেলেন ড্রেজার শ্রমিকরা। সেই থেকে ছয়দিন ধরে চরগোপালপুর ও জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নে পুরোপুরি এবং আলিমাবাদ ইউনিয়নের বিশাল একটি অংশে বিদ্যুৎ নেই। ফলে ওই তিন ইউনিয়নে ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী, কৃষকসহ সব শ্রেণিপেশার ১০ হাজারেরও বেশি মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
মেহেন্দিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী ব্যবস্থাপক (এজিএম) জিয়াউর রহমান সোমবার (১৪ মার্চ) বিকেলে বলেন, মেহেন্দিগঞ্জের পাতারহাট স্টিমারঘাট সংলগ্ন মাসকাটা নদীর তলদেশ দিয়ে তিনটি সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে ওই তিন ইউনিয়নে বিদ্যুৎ গেছে। এদিকে মাসকাটা নদীর নাব্য সংকটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে খনন কাজ চলছে। বিআইডব্লিউটিএর তত্ত্বাবধানে বিআইডব্লিউটিসির ঠিকাদার নদী খননের কাজ করছে। ড্রেজার দিয়ে খননের সময় সাবমেরিন ক্যাবল যাতে কাটা না পড়ে, এজন্য জায়গা চিহ্নিত করে লাল নিশানা টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এজিএম জিয়াউর রহমান আরও বলেন, ক্যাবলের জায়গায় ড্রেজিং শুরুর আগে ঠিকাদারের লোকজন ও শ্রমিকদের নিয়ে বৈঠক হয়। সরেজমিনে গিয়ে জায়গাগুলো দেখিয়ে দেওয়া হয়। এছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠি দিয়ে সতর্কভাবে ড্রেজিংয়ের অনুরোধও জানান। এত কিছুর পরও গত ৮ মার্চ মাসকাটা নদীতে ড্রেজিংয়ের সময় তিনটি সাবমেরিন ক্যাবল কেটে ফেলা হয়। এতে কম হলেও ৫ কোটিরও বেশি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বিষয়টি জানতে পেরে পল্লী বিদ্যুতের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গেছেন উল্লেখ করে এজিএম জিয়াউর রহমান বলেন, পুনরায় সংযোগ দেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ ওয়ার হাউজ থেকে সাবমেরিন ক্যাবল আনা হয়েছে। তবে সাবমেরিন ক্যাবল সংযোগ নেওয়ার জায়গায় এখনো ড্রেজিং কাজ চলছে। তাই আবারও কাটার আশঙ্কায় সংযোগ দেওয়া যাচ্ছে না। তবে ঠিকাদারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তারা দু-একদিনের মধ্যে ওই জায়গায় ড্রেজিং কাজ শেষ করতে পারবে। পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের স্টাফরা প্রস্তুত আছেন। ড্রেজিং শেষ হলে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টার মধ্যে ওই তিন ইউনিয়নে বিদ্যুৎ চালু সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) ড্রেজিং বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসেন বলেন, পাতারহাট স্টিমারঘাট সংলগ্ন মাসকাটা নদীতে পল্লী বিদ্যুতের স্টাফরা অনেকটা অনুমানের ভিত্তিতে লাল নিশানা দিয়েছিলেন। নিশানার বাইরে ড্রেজিং করা হয়। কিন্তু স্রোত ও জোয়ার-ভাটায় ক্যাবল নড়াচড়া করে স্থানচ্যুত হওয়ায় ৮ মার্চ সকালে খননকালে সাবমেরিন ক্যাবল কেটে যায়। এটা কেউ ইচ্ছে করে করেনি। সতর্কভাবেই ড্রেজিং করা হচ্ছিল। এরপর কারো উদাসীনতা ছিল কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার আব্দুল মান্নান বলেন, সাবমেরিন ক্যাবল কেটে ফেলায় ৫ কোটিরও বেশি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া তিন ইউনিয়নের মানুষ দুর্ভোগে রয়েছেন। এ ঘটনা তদন্তে পল্লী বিদ্যুতের একজন ডিজিএমকে (টেকনিক্যাল) প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নুরুন্নবী বলেন, ড্রেজিংয়ের সময় যাতে কোনোভাবেই সাবমেরিন ক্যাবল কাটা না পড়ে, এজন্য আমার নির্দেশে পল্লী বিদ্যুৎ থেকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হয়েছিল। এছাড়া কয়েকবার কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এরপর ড্রেজিং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছিলেন তারা সতর্কভাবে কাজ করবেন। এরপরও সাবমেরিন ক্যাবল কাটা পড়েছে। আমি বলবো কাটা হয়েছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই কেউ এ কাজটি করেছে। এতে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থের ক্ষতি হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
Leave a Reply