আজকাল বিডি নিউজ ডেস্ক।। করোনাকালিন সময়ে ও বিশেষ দুর্যোগের সময়ে দেশের সরকার বিভিন্ন ধরণের ত্রাণ দিয়ে হতদরিদ্র মানুষদের সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দেয়।অথচ, কিছু অসাধু মানুষদের কূটকৌশলে সরকারের সেই মহৎ উদ্যোগ হয় ব্যর্থ। এমন এক বরাদ্দকৃত ত্রাণ আত্মসাৎ এর ঘটনা ঘটেছে বরিশাল জেলায়। সদর উপজেলার তিন মেট্রিক টন চালসহ জেলার ২৫ টন চাল পুরোটাই আত্মসাৎ এর অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
দীর্ঘদিনের অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ২৯/০৯/২০১৯ তারিখে বরিশাল জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার প্রেরিত (সূত্র- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের স্মারক নং-৫১.০১.০৬০০.০০০.২০.০০৭.১৯-১৭৬, তারিখ-২৪/০৯/২০১৯/৬২২)র চিঠির মাধ্যমে বরিশাল জেলার সদর উপজেলায় ‘ বিভিন্ন সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন বন্যা, ভারী বর্ষণ ও নদী ভাঙ্গনে বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনদের ‘ সাহায্য করার জন্য বরিশাল সদর উপজেলায় ০৩ মেট্রিক টন ত্রাণ কার্য( চাল) উপ বরাদ্দ প্রদান করা হয়। যা তিনটি ইউনিয়নে এক টন করে বরাদ্দ পেয়েছিল।
অথচ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপনের পরিষদ সভাপতি মুকুন্দু লাল রায়, সাধারণ সম্পাদক শ্যামল চন্দ্র দেবনাথ সহ বরিশাল সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি মন্দির সভাপতি – সাধারণ সম্পাদক এর সাথে যোগাযোগ করে জানা গেছে তাদের জানামতে এমন কোন বিশেষ বরাদ্দ নেই।তারা শুধু দুর্গাপূজার উপলক্ষে কিছু টাকা অথবা চাল বরাদ্দ পান বলে জানায়।এবং তারা আরও জানান, হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজা উদযাপন বিষয়ক মহানগর নেতা নারায়ণ চন্দ্র দে নারু এ বিষয় পরিচালনা করে থাকেন।
অনুসন্ধানে আরও বেড়িয়ে আসে, গত ২৯-০৯-২০১৯ তারিখ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন এর সাক্ষরিত উপজেলা পরিষদ থেকে ৫১.০১.০৬৫১.০০০.২০.০০১.২০১৯-২০ স্মারক নং একটি চিঠিতে পুনঃ বরাদ্দকৃত চাল সংশ্লিষ্ট উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার মাধ্যমে বুঝে নেয়ার জন্য বলা হয়।সেখানে স্পস্ট উল্লেখ ছিল ছিল শায়েস্তা বাদ, চর বাড়িয়া,চন্দ্র মোহন এর ইউপি চেয়ারম্যানদের বরাবরে চাল ছাড় করার অনুরোধের বিষয়টি।
অথচ, এই তিন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এর সাথে ও তাদের সচিবদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা এরকম কোন ত্রানের কথা জানেন না বলে জানান।
এদিকে, বরিশাল সদর এর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের সাক্ষরসহ ২-১০-২০১৯ তারিখের কাগজপত্র দেখে জানা যায়, নারায়ন চন্দ্র দে নারু পূজা কমিটির সভাপতি পরিচয়ে ২১ মেট্রিক টন চাল তুলে নিয়েছেন।
কিন্তু,মানবিক সহায়তা কর্মসূচি বাস্তবায়ন নির্দেশিকা ২০১২-২০১৩ অনুযায়ী ব্যয় করার নিয়ম অনুযায়ী উক্ত উপ বরাদ্দ চাল এর নির্বাচিত সুবিধাভোগী কারা তাদের নাম, পিতা/স্বামীর নাম ও ঠিকানা এবং ভোটার আইডি কার্ড নম্বরসহ বরাদ্দ ভোগ করার তারিখের তালিকা অথবা বরাদ্দ গ্রহনকারী সংশ্লিষ্ট মন্দিরের নাম,ঠিকানা ও মন্দিরের সভাপতি,সাধারণ সম্পাদকের নাম ও মোবাইল নম্বর এর তালিকা প্রস্তুত থাকার কথা থাকলেও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কাছে ৭-০৪-২০২১ সর্বশেষ লিখিতভাবে জানতে চেয়েও তথ্য পায়নি সাংবাদিকরা।
এর আগে বরিশাল সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাছে ২৫-১০-২০২০ তারিখে উপ বরাদ্দকৃত চাল ছাড়িয়ে নেয়া ব্যক্তির নাম,ঠিকানাসহ সংশ্লিষ্ট তথ্য চাইলেও এ রিপোর্ট করা পর্যন্ত প্রতিবেদককে লিখিতভাবে কোন তথ্য দেয়নি কতৃপক্ষ।
বিশস্ত সূত্রে জানা যায়, চাল ছাড়িয়ে নারায়ন চন্দ্র দে নারু বরিশালের বাজার রোডের ‘বরিশাল খাদ্য ভান্ডার ‘ নামের দোকানে বিক্রি করে দেয়। বিষয়টি সেদিনই বরিশাল ঘাটের কুলির সরদার আলমগীর কয়েকজন সাংবাদিকদের জানালেও অজানা কারনে সবাই এড়িয়ে যায়।কিন্তু বরিশাল খাদ্য ভান্ডারে গিয়ে হাতেনাতে ধরেছিল কয়েকজন সাংবাদিকরা। সেই থেকেই খবরটি গোপনে ছড়িয়ে পড়ে মিডিয়া পারায়।
এ বিষয়ে চাল আত্মসাৎকারী অভিযুক্ত নারায়ণ চন্দ্র দে নারুকে জানতে চাইলে তিনি উক্ত বিষয়ে মুখ না খুললেও দূর্গা পূজার চাল বিক্রির কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন ‘ ঘাটের কুলি সরদার আলমগীর ও আমি প্রতিবছরই চাল বিক্রি করি।এটা ডিসি সাহেব,ইউএনও, খাদ্য কর্মকর্তারা সবাই জানেন। এতে দোষের কিছু নাই।এসব নিয়ে না লিখে বড় বড় ক্রাইম নিয়ে লিখলে পত্রিকা ভাল চলবে।
Leave a Reply