আমার একটা বাড়ি নদীতে চলে গেছে। এছাড়া আমার ৯ কুড়া জমি ছিলো, সব সুগন্ধা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এমনকি আমার বাপ দাদার যে কবর ছিলো তাও নদীতে। বর্তমানে আমার চাচতো ভাইর জমিতে কোনরকম একটু ঘর উঠিয়ে থাকি। আমাদের কেউ কোন খোঁজখবর নেননি। আমরা খুবই অসহায় হয়ে পড়েছি।
ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার ভৈরবপাশা ইউনিয়নের বহরমপুর গ্রামের সুগন্ধা নদীর তীরের বাসিন্দা সৈয়দ আলী (৬০) এমনটাই মনের কষ্ট বলতে ছিলেন।
একই এলাকার রিয়াজ আহমেদ (৪৫) বলেন, আমাদের বাড়ি টা ১ একর ৩০ শতাংশ, যা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে আছে। এছাড়া আমাদের বাড়ির সামনে মাঝি বাড়ি, সিকদার বাড়ি, বয়াতি বাড়ি সব নদীতে চলে গেছে। আমাদের এখন থাকার মতো কোন স্থান নাই। একটা মানুষ মরলে যে মাটি দিবে এমন কোন স্থান আমাদের নাই।
হেপী বেগম (৩৮) বলেন, নদী ভাঙতে ভাঙতে এখন ঘরের সাথে এসেছে। এখন আমরা খুবই আতঙ্কের মধ্যে আছি। আমাদের ছেলে মেয়ে নিয়ে খুবই দুশ্চিন্তায় আছি। কোথায় যাবো কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।
মগড় ইউনিয়নের কাঠিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ইউসুফ হাওলাদার (৭০) বলেন, আমারদের এখানে প্রায় ২০/৩০ বসতবাড়ি ছিলো সব নদীতে এখন দুইতিনটা পরিবার আমরা এখানে আছি। তাও বিলীনের পথে আমরা কিছুই চাইনা আমাদের নদী ভাঙনটা রোধ করে দিলেই হবে।
কুলকাঠি ইউনিয়নের সরই গ্রামের বাসিন্দা লিটন ফকির বলেন, আমার বাপ দাদার বাড়ি সুগন্ধা নদীর মাঝখানে। এখন কিছু অর্থ জমিয়ে নতুন বাড়ি করেছি।আমাদের এখানে এতবছর ধরে ভাঙন তা রোধ করতে কেউ কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
অবসরপ্রাপ্ত তহসীলদার হাজী আব্দুল হক তালুকদার বলেন, যে জায়গাটায় আমি অনেক বসতঘর দেখেছি, সেখান থেকে এখন লঞ্চ চলচল করে। নদী এখন আমার বাড়ির নিকটে চলে আসছে। আমি হয়তো ভবিষ্যতে নিজ ভিটায় থাকতে পারবো না।
সরই গ্রামের ইউপি সদস্য বেল্লাল হোসেন মোল্লা বলেন, ভাঙনকূলে থাকা আমার অনেক স্বজনরা তাদের বাপ-দাদার বাড়ির চিহ্নটুকু রাখতে পারেনি। আমরা ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে এবং আমাদের সংসদ সদস্যকে অবগত করেছি। কিন্তু হচ্ছে, হবে বলে আজ পর্যন্ত ভাঙন রোধে কোনো সুরহা পাইনি।
নলছিটি উপজেলার কুলকাঠি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এইচ এম আখতারুজ্জামান বাচ্চু বলেন, স্কুল মাদ্রাসা, বাজার এবং অনেক বসতঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
তবে গ্যাস বহনকারী জাহাজগুলোকে দায়ী করে তিনি বলেন, জাহাজের গতি নিয়ন্ত্রণ না থাকায় ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। তবে সুগন্ধা নদীর সরই অঞ্চলটি ভাঙনরোধে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডে একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে বলে তিনি দাবি করেছেন।
ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এ. কে. এম. নিলয় পাশা বলেন, ঝালকাঠি ও নলছিটির ভাঙন এলাকা আমাদের প্রাথমিক জরিপ সম্পাদনা করা হয়েছে। ডিপিপি কার্যক্রম অনুমোদন পেলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারব।’
Leave a Reply