নিজস্ব প্রতিবেদক:::সড়ক দূর্ঘটনায় আহত হয়ে শেরে বাংলা মেডিকেল(শেবাচি)তে চিকিৎসা অবহেলায় এক কলেজছাত্রের মৃত্যুর অভিযোগে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিক্ষানবিশ (ইন্টার্ন) চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে শিক্ষানবিশ (ইন্টার্ন) চার চিকিৎসক আহত হয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
শনিবার (১১ জুন) বিকেলে হাসপাতালের চতুর্থ তলার সার্জারি ইউনিট-১ এর পাশে শিক্ষানবিশ (ইন্টার্ন) চিকিৎসকদের কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর কলেজছাত্রের দুই স্বজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা নিয়ে গেছে পুলিশ।
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত রিয়াদ ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার মহিষকান্দি গ্রামের আনছার আলীর ছেলে এবং নগরীর ইসলামিয়া কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিল। শনিবার দুপুরে আরও দুইবন্ধুসহ রিয়াদ মোটরসাইকেলে ঘুরতে যাওয়ার সময় উত্তর আমানতগঞ্জ এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে গাছের ওপর আছড়ে পড়ে। এতে তিনজনই আহত হন। হাসপাতালে নেওয়ার পর রিয়াদের মৃত্যু ঘটে এবং তার দুই বন্ধু হৃদয় ও ওসমান গণি চিকিৎসাধীন আছেন।
স্বজনদের দাবি, সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রিয়াদুল ইসলাম রিয়াদকে (১৭) সার্জারি ওয়ার্ডের ভর্তির পর দ্রুত চিকিৎসার জন্য শিক্ষানবিশ (ইন্টার্ন) চিকিৎসকদের অনুরোধ করা হয়। কিন্তু তারা বিষয়টি গুরুত্ব দেননি এবং কোনো পদক্ষেপও নেননি। চিকিৎসকের অবহেলায় এক পর্যায়ে রিয়াদের মৃত্যু হয়। এরপর অবহেলার কারণ জানতে চাইলে স্বজনদের ওপর উল্টো শিক্ষানবিশ চিকিৎসকরা চড়াও হয়ে মারধর করেন।
শিক্ষানবিশ (ইন্টার্ন) চিকিৎসক অ্যাসোশিয়েসনের সভাপতি ডা. রাকিন আহমেদ খান বলেন, ‘কলেজছাত্রকে সার্জারি ওয়ার্ডে আনার পরপরই দায়িত্বরত ইন্টার্ন চিকিৎসকরা তাকে দেখেন। হাসপাতালে ভর্তির আগেই ওই কলেজছাত্রের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে ভর্তি করা হয়েছিল। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে ২০ মিনিট পর রোগীর মৃত্যু হয়। কিন্তু তার স্বজনরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তারা কর্তব্যরত ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। তাদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। একপর্যায়ে তারা সার্জারি ইউনিট-১ এর পাশে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কক্ষে হামলা চালান। ভাঙচুর করেন কক্ষের আসবাবপত্র। এ সময় ইন্টার্ন চিকিৎসক মো. ইমরান, রওনক, স্বর্নালী ও রিঙ্কুকে মারধর করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।’
তবে মৃত কলেজছাত্র রিয়াদের স্বজন মো. মাসুদ বলেন, ‘হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা একজন একজন করে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। আমরা বার বার চিকিৎসকদের অনুরোধ করি রিয়াদের অবস্থা বেশি খারাপ, তাকে আগে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য। কিন্তু চিকিৎসকরা পদক্ষেপ নেননি। তাদের অবহেলার কারণেই রিয়াদের মৃত্যু হয়েছে। এরপর রিয়াদের বন্ধুদের সঙ্গে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের হাতাহাতি হয়। কিছুক্ষণ পর ইন্টার্ন চিকিৎসকরা সংঘবদ্ধ হয়ে কান্নারত মৃতের স্বজনদের ওপর হামলা চালান। ব্যাপক মারধর করেন।’
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘রোগীর স্বজনরা উত্তেজিত হয়ে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের ওপর হামলা করেছেন। তাদের কয়েকজনকে মারধর করা হয়েছে। দুজনকে পুলিশে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।’
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. লোকমান হোসেন বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীর দুই স্বজনকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। তাদের থানায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দিলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply